রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত নিয়ে ছেলেধরার মতো গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, এডিস মশার প্রজনন ক্ষমতা রোহিঙ্গাদের মতো, তাই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
রাজধানীসহ সারাদেশ ডেঙ্গু যখন মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে, তখন আলাদা দুটি অনুষ্ঠানে তারা দুজন এ মন্তব্য করেছেন। তাদের ওই বক্তব্য দেশের মানুষের ক্ষোভ ও হতাশাকে আরও উসকে দিয়েছে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হবার পরে সামাজিক মাধ্যমে জনগণ আলোচনা ও সমালোচনায় মেতে উঠেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত আট হাজার ৫৬৫ জন মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল জুলাই মাসেই রেকর্ড ছয় হাজার ৪২১ জন হাসপাতালে গেছেন। কিন্তু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৮৫ শতাংশই চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যান না এবং যারা হাসপাতালে যান, তাদের মাত্র ২ শতাংশের তথ্য সরকারি নজরদারির মধ্যে আসে। এমন যুক্তিতে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের একটি অনুমিত সংখ্যা কয়েকদিন আগে একটি পত্রিকায় প্রকাশ করার সূত্রে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন ওই মন্তব্য করেছিলেন।
ডেঙ্গু যে মহামারী আকার ধারণ করার হুমকিতে আছে, তা বলতে আর দ্বিধা নেই। ডেঙ্গু মহামারী রূপ নিতে বাকি নেই বলে হাইকোর্টও তাদের এক বক্তব্যে জানিয়েছেন। আদালত আরও বলেছেন, ঘরে ঘরে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। অনেক হাসপাতালে যায় না। সবাই হাসপাতালে গেলে এই সংখ্যা বেশি হতো। কাজেই ধারণা করা যেতেই পারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যে উল্লেখিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যার চেয়ে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। শুধুমাত্র প্রচার ছাড়া দুই সিটি কর্পোরেশনের কার্যকর কোনও পদক্ষেপও সেভাবে চোখে পড়ছে না বলেও মনে করছে অনেকে। হাইকোর্ট আরেকটি বিষয় সামনে এনেছেন, তা হলো মশার ওষুধের কার্যকারিতা বিষয়ে। সিটি কর্পোরেশনের কাছে থাকা মশা মারার ওষুধ যে কাজ করছে না, তার প্রমাণ ভিন্ন কয়েকটি প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। সবকিছু মিলিয়ে কার্যকর ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিতের নির্দেশও দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিষয়গুলো আমাদের চিন্তিত করার পাশাপাশি কিছুটা আশাবাদী করে তুলেছে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবার আগে পরে রোগী ও তাদের পরিবারের চিকিৎসা ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সামর্থ্যবানরা তাদের ব্যয় নির্বাহ করতে পারলেও আক্রান্ত অনেকে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে ডেঙ্গু পরীক্ষার যে খরচ তা নিয়ে রয়েছে অস্পষ্টতা, বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে এনেছেন একজন আইনজীবী। এই অবস্থায় সরকার বিনামূল্য ডেঙ্গু পরীক্ষার সুযোগের ঘোষণা দিয়েছে, বিষয়টি খুবই ইতিবাচক।
আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, অকার্যকর ওষুধ আর অপ্রতুল পদক্ষেপের কারণে বলা যেতে পারে, দুই সিটি কর্পোরেশন দ্রুতহারে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেকটাই ব্যর্থ। এই অবস্থায় জনগণের উদ্দেশ্যে কথা বলার আগে সিটি মেয়র ও সরকারের দায়িত্বশীলদের আরও ভাবা দরকার। কী বলতে কী বলছেন, তার প্রতিক্রিয়া কোনো জনরোষ তৈরি করবে কিনা, এসব মাথায় রাখা জরুরি। সবচেয়ে বড় কথা, দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষ কথার চেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চায়। আমাদের আশাবাদ, দায়িত্বশীল সবাই বিষয়গুলোর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে কার্যকর পদক্ষেপে মনোযোগী হবেন।