দীর্ঘ ২৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বামপন্থি দল কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া–সিপিএম’র (মার্ক্সবাদী) লাল দুর্গের পতনের পর সেখানে চলছে বিজয়ী দল বিজেপি’র সমর্থকদের তাণ্ডব। তাদের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পায়নি লেনিনের ভাস্কর্যও।
বিজেপি সমর্থকরা সোমবার বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় দক্ষিণ ত্রিপুরার বেলোনিয়ায় স্থাপিত মার্ক্সবাদী নেতা লেনিনের ভাস্কর্য।
সিপিএমের অভিযোগ, বুলডোজারের চালককে মদ্যপান করিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙ্গা হয়েছে। এক টুইটবার্তায় এই ঘটনার তিরস্কার করে সিপিএম বলেছে: ‘এই গণতন্ত্রের কথাই কি গর্ব করে বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি!’
তবে বিজেপি’র কয়েকজন নেতাকর্মী লেনিনের ভাস্কর্য ভাঙ্গার ব্যাপারে সরাসরি দায় না নিলেও বলেছেন, গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত এক সরকারের কাজ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আরেক সরকার বাতিল করে দিতেই পারে।
ভাস্কর্য ভাঙ্গার ঘটনায় চালককে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়াও সহিংসতার অভিযোগে আরও তিনজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
#WATCH: Statue of Vladimir Lenin brought down at Belonia College Square in Tripura. pic.twitter.com/fwwSLSfza3
— ANI (@ANI) March 5, 2018
সিপিএমের অভিযোগ, ৩ মার্চ ফল ঘোষণার পর থেকেই ত্রিপুরা জুড়ে সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছে বিজেপি। তারা রাস্তায় যানবাহন ও বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস করছে, সিপিএমের কার্যালয়গুলো ভাংচুর-লুটপাট করছে, সিপিএম নেতাকর্মীদের হয়রানি ও তাদের ওপর হামলা করছে। এমনকি তাদের হুমকির কারণে বহু সিনিয়র নেতাকর্মী ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। আর বিজেপির সহিংস ও স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডেরই উদাহরণ লেনিনের ভাস্কর্য ধ্বংস।
গত ৪৮ ঘণ্টায় বিজেপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা কী কী সহিংস কর্মকাণ্ড করেছে তার একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে সিপিএম।
Post Poll violence in Tripura against the Left is the truth which mocks the PM’s claims that BJP believes in democratic norms! What is happening in Tripura is a wholesale effort to bully, intimidate and spread a feeling of fear and insecurity among Left cadres and supporters. pic.twitter.com/l1FFAqFhR1
— CPI (M) (@cpimspeak) March 5, 2018
সামাজিক মাধ্যম জুড়ে ত্রিপুরায় হওয়া ধ্বংসযজ্ঞের ছবি ভাইরাল হয়েছে। সিপিএম এক টুইটবার্তায় অভিযোগ করেছে, হামলাগুলোকে এখন বিজেপি-আইপিএফটি’র কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা সমন্বিত ও পরিচালিত করছেন। ‘বাম পেয়েছে ৪৫ শতাংশ ভোট। বিজেপি-আইপিএফটি এখন চাইছে তাদের নতুন পাওয়া ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এই সমর্থনকে ধ্বংস করে দিতে। এজন্যই তারা হামলা চালাচ্ছে, কার্যালয়গুলো পুড়িয়ে দিচ্ছে, ভয়ভীতি দেখাচ্ছে ও হুমকি দিচ্ছে।’
ত্রিপুরায় ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটানো উপলক্ষে দেশজুড়ে রোববার ‘বিজয় দিবস’ পালন করার ঘোষণাও দিয়েছে বিজেপি। দলের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়।
এছাড়া ভোটে জয় লাভের পরপরই বিজেপি জানিয়েছিল, আগরতলা ও সংলগ্ন এলাকায় কার্ল মার্ক্স ও লেনিনের নামে যত রাস্তা আছে, সবগুলোর নাম পাল্টে ফেলা হবে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামে নামকরণ করা হবে ওইসব রাস্তার।
ত্রিপুরায় বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল দেওধর বলেছিলেন, ‘স্থানীয় নেতাদের নাম ভুলে গেছে বাম সরকার। ত্রিপুরার ভূমিপুত্র প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তীকে মনে রাখেনি তারা।’
তবে নাম কবে পাল্টানো হবে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি এখনো।