আজ শিল্পী মুর্তজা বশীরের ৮৫তম জন্মদিন। সকালবেলা ফোনে কথা হচ্ছিল শিল্পীর সঙ্গে। জীবনের এত দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এসে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বেশ নির্বিকার ভাবেই বললেন, খুব ভালো লাগছে। আমি সব সময় নিজের কাজের মধ্যে থাকতে চেয়েছি। নিজের কাজ ছাড়া আর কোনো কিছুর সঙ্গে কখনো কম্প্রোমাইজ করি নি। আজ আমার ৮৫ তম জন্মদিন। আমার এবারের এই ৮৫ তম জন্মদিনটা আমার কাছে অন্য একটি কারণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ আমার বাবা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তার ৮৫তম জন্মদিন পালনের ৩ দিন পর মারা গিয়েছিলেন। আজ এই সকালবেলা আমার বাবাকে খুব মনে পড়ছে।
তাহলে আপনার মধ্যেও কি মৃত্যু চিন্তা এসে যাচ্ছে? জানতে চাইলে শিল্পী মুর্তজা বশীর বললেন, মৃত্যু নিয়ে আমি কখনোই ভাবিত নই। আজও না। মৃত্যুকে আমি দেখি অন্য এক পৃথিবীর বার্তা হিসেবে। সবাইকেই সে অনাগত পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ নিতে হবে। তবে আমি আমার শিল্পের ভেতর দিয়ে, কাজের ভেতর দিয়ে, সৃজনশীলতার ভেতর দিয়ে এমনকি চিন্তা চেতনার মধ্য দিয়ে মৃত্যুকে অতিক্রম করার কথা ভাবি। একজন শিল্পীর ভাবনা তা-ই হওয়া উচিত। কি পেয়েছি বা পাই নি সেই তর্ক বিতর্কে না গিয়েও বলতে পারি শিল্পী মুর্তজা বশীর তার সারাজীবন শিল্পের জন্য ব্যয় করেছে। আমি তাতেই তৃপ্ত, সন্তুষ্ট।
সমকালীন শিল্পকলায় হাতেগোনা যে ক’জন শিল্পী তাদের স্বাতন্ত্র্যবোধ ও স্বকীয়তায় বিশিষ্টতা অর্জন করে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের সুনামকে দশদিগন্তে ছড়িয়ে দিয়েছেন মুর্তজা বশীর তাদের মধ্যে অন্যতম। শিল্প সমালোচকরা বলছেন, মুর্তজা বশীর ৮৫ বছর বয়সে এসেও নিত্য নতুন সৃজনে বিভোর, অনেক বেশি সৃষ্টিশীল। মুর্তজা বশীরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য তিনি কখনো টাইপড হয়ে যাননি। তার শিল্পনির্মাণে তিনি নিরন্তর ভাঙাগড়ার খেলা খেলেছেন যা সমকালীন শিল্পকলার কেউ করার দুঃসাহস দেখাতে পারেন নি। একই ছাপ তিনি তার কবিতা, গল্প, উপন্যাসের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করেছেন।
শিল্পী মুর্তজা বশীরের ৮৫ তম জন্মদিনে তার সাক্ষাৎকারের উল্লেখযোগ্য অংশ চ্যানেল আই অনলাইন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
মাহবুব রেজা : এক জীবনেতো কত কিছুই চাওয়ার ছিল, অনেককে এ রকম আক্ষেপ করতে শোনা যায়। আপনার জীবনেও কি সে রকম চাওয়ার কিছু ছিল?
মুর্তজা বশীর : আমার আর্থিক স্বচ্ছলতার দিকে কোনোদিনই লোভ ছিল না। আমি একজন সাধারণ মানুষের মতো ভদ্রভাবে জীবনযাপন করতে চেয়েছি যেখানে অর্থের জৌলুস থাকবে না। তাই সে ব্যাপারে আমার কোনো আক্ষেপ নেই কেননা আমি সরস্বতীকেই চেয়েছিলাম, লক্ষ্মীর দ্বারস্থ হইনি। এ বয়সেও আমাকে অর্থ চিন্তা বা সংসার চালানোর দুশ্চিন্তা জড়িয়ে রেখেছে। কেননা আমি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত নই, যেখান থেকে কিছু অর্থের জোগান আসে। আমি কার্শিয়াল কাজ অর্থাৎ বইয়ের প্রচ্ছদ কিংবা অলঙ্করণ করি না, যদিও অনেক বিত্তবান লোক মনে করেন আমি খ্যাতিমান, তাই আমাকে দিয়ে তাদের পরিবারের প্রতিকৃতি আঁকতে বলেন। কিন্তু আমি সেটাও করি না।
আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরের পর যে পেনশন পাওয়ার কথা, তা আমার এই মণিপুরী পাড়ায় ফ্ল্যাট কেনার জন্য পুরো পেনশন আমাকে বিক্রি করে দিতে হয়েছে। একমাত্র টুকটাক কিছু ছবি বিক্রি ছাড়া আর কোথাও অর্থের পথ নেই। তাই এক ধরনের অনিশ্চয়তা সবসময়ই আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে।
আমি জীবনে অনেক কিছু করতে চেয়েছি। যেমন গল্প, কবিতা ও উপন্যাস লিখতে চেয়েছি। চেয়েছি গবেষণা করতে অর্থাৎ বাংলার স্বাধীন সুলতানি আমলের মুদ্রা নিয়ে গবেষণা করতে চেয়েছি। ভারতবর্ষের শিল্পকলার সামাজিক ইতিহাসে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ থেকে ১২০০ শতাব্দীর পর্যন্ত লিখতে চেয়েছি। এসব লেখার জন্য আমি প্রচুর বই পড়েছি এবং নোটও নিয়েছি। কিন্তু আমার লেখা হয়নি। আমি বাংলার মন্দিরের টেরাকোটার কাজ দেখার জন্য ১৯৯৩ সালে মাঠ পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গে আটটি জেলার ১২৫টি গ্রাম ও ১৯৯৬ সালে ৯টি জেলার ১৫০টি গ্রাম পর্যবেক্ষণ করেছি। কিন্তু পরে সেগুলো নিয়েও আমি লিখিনি। আমাকে অনেকেই বলেন এসব লিখতে। কিন্তু আমি তো পণ্ডিত হওয়ার জন্য এসব পর্যবেক্ষণ করিনি। আমি করেছি নিজেকে সমৃদ্ধ করার জন্য। যেভাবে পালযুগের চিত্রকলার ওপর আমি বিলেতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। পালযুগের চিত্রকলার ওপর সরসীকুমার সরস্বতীর যে গ্রন্থ উপহার দিয়েছেন আমি তার থেকে বেশি দেখেছি কেননা যে সময় তিনিও এ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন তখন সেই চিত্রগুলো আবিষ্কৃত হয়নি। আমার সবচেয়ে ভালো লাগছে এ জন্য যে আমি একজন তৃষ্ণাতুর পথিক যে জলের অন্বেষায় বিরান প্রান্তরে ছোটাছুটি করে অবশেষে জলের কল কল ধ্বনি শুনতে পেয়েছে কিন্তু দেখিনি। কজনই বা এই শব্দ শুনতে পায়? এটাই আমার সবচেয়ে বড় তৃপ্তি। এ জন্য আমার জীবনে কোনো আক্ষেপ নেই। আমি মৃত্যুর সময় ভাবব, বাংলার শিল্পকলার ঐতিহ্যের ভেতর দিয়ে আমি অবগাহন করেছি এবং ক্রমে ক্রমে পূর্ণমানব হয়েছি।
মাহবুব রেজা : বাবা ভাষাবিদ ও পণ্ডিত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সঙ্গে আপনার কেমন সম্পর্ক ছিল? ভয়-টয় পেতেন?
মুর্তজা বশীর : তিনি রাশভারী মানুষ ছিলেন। আমার জ্ঞান হওয়ার পর যা দেখেছি তা ছিল কিছুটা দূরত্বের। একমাত্র সকালে ও সন্ধ্যায় নামাজ পড়া ছাড়া তার সাথে দেখা হতো না। তিনি সে নামাজের ইমামতি করতেন এবং সে নামাজে সন্তানদের উপস্থিতি থাকাটা ছিল বাধ্যতামূলক। আমার মাকে কেন্দ্র করেই ছিল আমাদের জীবন। তবে ছেলেবেলায় দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাসের প্রথম দিন বেতন পেয়ে তিনি টেবিলে সমস্ত টাকা বিছিয়ে দিতেন এবং সন্তানদের বলতেন, যার যা খুশি তুলে নিতে। আমার মা তখন সেখানে থাকতেন না। মা থাকতেন ঘরের বাইরে দরোজার আড়ালে। আমরা ভাইবোনরা যখন একেক জন বেড়িয়েছি মা তখন হাত থেকে সেই টাকা তুলে নিতেন এবং তার কাছে থাকত একেকটি ছেলের নামে ছোটো কাঠের বাক্স, যেখানে সেই টাকা জমা রাখতেন। সেই টাকাগুলো দিয়ে মা পরবর্তীকালে ২৪পরগনায় আমাদের দেশের বাড়ি পেয়ারায় একটি ফলের বাগান কিনেছিলেন যেখানে নানারকম ফলের গাছ ছিল। আমরা গরমের বন্ধে কিংবা অন্য কোনো সময় মার সঙ্গে দেশের বাড়িতে যেতাম সেই বাগান থেকে আমরা ইচ্ছামতো ফল পাড়তাম, নষ্ট করতাম, এর জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে হতো না। কেননা যৌথ পরিবারের অনেক সময় হতো কাঁচা আমটা পেড়েছি সেজন্য বকুনি খেতে হয়েছে অথবা ডাব খেতে চেয়েছি সেটা পাইনি। মার আভিজাত্যে এটা লাগত, তিনি ব্যথাতুর হতেন কিন্তু মুখে কিছু বলতেন না। আমি মাস তিনেকের জন্য বগুড়ায় ১৯৪৪ সালে পিতার সান্নিধ্যে ছিলাম। একই বিছানায় ঘুমাতাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরের পর বগুড়ায় তিনি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। আমাকে তিনি সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বগুড়ার একটি নামকরা হোটেলে আমাকে নিয়ে গিয়ে তার ক্যাশিয়ারকে পরিচয় করিয়ে বলেছিলেন, যখন যা খেতে চায় দেবেন, মাস শেষে আমি টাকা দিয়ে দেব।
ঘোড়ার মুখের রাশ ছেড়ে দিলে সে যেমন দুরন্ত হয়ে ওঠে আমিও বগুড়ায় ঠিক তেমনি হয়ে গিয়েছিলাম। বন্ধু-বান্ধব জুটে গেল সিনেমা দেখা, সন্ধ্যায় আড্ডা মারা এটা প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেল।
আমি তখন বগুড়া জিলা স্কুলে, তিনি আমাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিলেন। আমি আবার ঢাকার খাঁচায় বন্দি হলাম। এই ধরাবাধা জীবন আমার কখনো ভালো লাগত না। তাই আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি তখন ১৯৪৭ সালে আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম। পালিয়ে আমি গিয়েছিলাম। দেশ ভাগ হয়েছে তার পরপরই লক্ষ্ণৌ পর্যন্ত। কিন্তু বাড়ির জন্য মন কেমন ছটফট করাতে আবার ফিরে আসি। আমি যখন ঘরে ফিরে এলাম পিতা রাগান্বিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো বকাঝকা করেননি। যখন শুনলেন লক্ষ্ণৌ পর্যন্ত গিয়েছিলাম তখন তিনি আক্ষেপ করলেন যে আমি কেনো আগ্রায় গিয়ে তাজমহল দেখলাম না।
বাবার কথা শুনে তখন আমার মনে হয়েছিল যেই টাকাগুলো আমি অপচয় করেছি তাজমহল দেখলে সেটা যথার্থ হতো।
আমার পিতা আমাকে ৫৬ সালে ইতালির ফ্লোরেন্সে পড়তে পাঠিয়েছিলেন দু’বছরের জন্য। কিন্তু ইতালি যাওয়ার কথাটি আমি আমার পিতাকে সরাসরি বলার সাহস পাইনি তাই মাকে বলেছিলাম। যখন বাবাকে আমার ইচ্ছার কথা জানালো তখন তিনি আমাকে ডাকলেন এবং জানতে চাইলেন আমি তখন অস্বীকার করি। ছেলেবেলায় পিতার সঙ্গে আমার স্মৃতি বলতে যা বোঝায়, তাহলো, একজন মানুষ যে সব সময় শুধু পড়াশোনা করছে। তবে ঈদের দিনে এক সঙ্গে নামাজ পড়তে যেতাম। তিনি নিজহাতে আমাদের আতর লাগিয়ে দিতেন।
মাহবুব রেজা : ছোটবেলায় আপনি বেশ দুর্বিনীত ছিলেন। আপনি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ছেলে এ ব্যাপারেও ছিল আপনার মধ্যে এক ধরনের অহংকার। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় এ ব্যাপারটা আপনার বাবা ধরতে পারলেন। তিনি তখন আপনাকে বললেন, ইউ আর মাই সন। ডোন্ট বি মিডিওকার, আইদার নটোরিয়াস অর ফেমাস, আপনি আপনার বাবার এই কথাগুলোকে আপনার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট বলেছেন। কেন?
মুর্তজা বশীর : তখনকার দিনে মানে বিভাগোত্তর মফস্বল শহরে তিন ধরনের লোক অত্যন্ত সম্মানিত ছিলেন। ১. ডিএম (ডিস্ট্রিক ম্যাজিট্রেট) ২. সিভিল সার্জন ও ৩. কলেজের অধ্যক্ষ। আমার পিতা ১৯৪৩ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরের পর বগুড়ায় আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। বগুড়া তখন ছোটো একটি ছিমছাম শহর। কলকাতার সাথে যোগাযোগ ছিল তাদের বেশি, ফলে শিক্ষা ও সংস্কৃতির দিক থেকে তারা ছিল অনেক উন্নত। বগুড়াতে যখন যাই আমি ঢাকার নবকুমার ইনস্টিটিউট থেকে অষ্টম শ্রেণি পড়া শেষ করেছি। ৪৬ সালে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলাম আমি। পিতা খ্যাতিমান ফলে স্কুলে ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে আমার একটি স্বতন্ত্র জায়গা তৈরি হয়েছিল।
পিতার পরিচয়ে ছিল আত্মগরিমা ফলে সে ছাত্রই হোক কিংবা শিক্ষকই হোক আমি কাউকে তোয়াক্কা করতাম না। ফলে নিজের ইচ্ছামতো চলাফেরা করতাম একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব ছিল। দশম শ্রেণিতে যখন পড়ি তখন বন্ধুদের সাথে একটা বাজি হয়েছিল যে মুকুল ফৌজের মেয়েরা যে লাইন করে যাচ্ছে তার ভেতর দিয়ে আমি সাইকেল চালিয়ে চলে যেতে পারব কি না। তখন আমার একটা র্যালে সাইকেল ছিল। আমি সেই মেয়েদের লাইনের ভেতর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে দিয়েছিলাম। একটি মেয়ে সাইকেলের আঘাতে পড়ে গেল। পরে সে উঠে আমাকে ভীষণভাবে গালাগালি করে বলল, এটা কি তোমার বাবার রাস্তা। উত্তরে আমি বললাম, না তবে প্রয়োজন হলে করে নেব। স্কুলের কাছেই ছিল একজন সাব রেজিস্টারের বাড়ি। তিনি ঘটনাটি দেখেছিলেন। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, খোকা তুমি আজকে যা করলে অন্য কেউ করলে তাকে মারধর করত। কিন্তু তুমি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সাহেবের পুত্র বলে কেউ কিছু বলল না। তবে মনে রেখো, তোমার পিতা চিরদিন বেঁচে থাকবেন না। তখন তোমাকে কেউ রেহাই দেবে না।
গৌতম বুদ্ধ মহাভিক্রমণে যাওয়ার আগে যে তিনটি ঘটনা তাকে আলোড়িত করেছিল ঠিক তেমনি এই ঘটনাটা আমার ভেতর এক ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করে। তখনই আমি উপলব্ধি করলাম। নিজেকে অন্বেষণ করলাম। একটি বড় গাছের নিচে যেমন ছোট গাছ জন্মাতে পারে না তেমনি আমার মনে হলো, সিন্ধাবাদের ঘাড়ে চেপে থাকা সেই বৃদ্ধকে (পিতা) আমি যদি আমার ওপর থেকে না নামিয়ে ফেলতে পারি আমার মুক্তি নেই।
আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল।
আমার এই দুরন্তপনার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে নালিশ গেল। আমার নানা রকম দুরন্তপনা, স্কুলের প্রধান শিক্ষক (বাবু নরেন্দ্রমোহন চৌধুরীর) কানে যায়। তিনি আমাকে ডেকে পাঠান। প্রধান শিক্ষকের ঘরে চেয়ারে বসেছিলেন সহকারী প্রধান শিক্ষক ও আমাদের অঙ্কের মাস্টার বাবু নরেন্দ্রমোহন ঢোল, অংকের মাস্টার আমাকে খুব স্নেহ করতেন। আমি প্রধান শিক্ষকের সামনের টেবিলে দু’হাতে ভর দিয়ে দাঁড়ালাম। হেড মাস্টার রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন এবং আমাকে বললেন, ঠিক হয়ে দাঁড়াও।
আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না আমার অন্যায়টা কি। তখন কিন্তু বুঝতে পারিনি হেড মাস্টারের টেবিলে দু’হাত রেখে দাঁড়ানোটা বেয়াদবি। নরেন্দ্রমোহন ঢোল আমাকে বললেন, বশির টেবিল থেকে হাত দুটো নামাও। তখনই আমি বুঝতে পারলাম আমার অন্যায়টা কি!
রাগত স্বরে হেড মাস্টার বললেন, আমি তোমার সম্পর্কে তোমার পিতার কাছে নালিশ করবো। আমি তখন আমার অহমবোধ থেকে উত্তর দিলাম, আপনি হেড মাস্টার আমার পিতা অধ্যক্ষ তার সামনে যাবার যোগ্যতা আপনার নেই।
তিনি বিস্মিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন আমার বাবার কানে এসব নালিশ আসত। তিনি আমাকে বললেন, তোমার ক্লাসের ইংরেজি গ্রামার বইয়ে তুমি পড়েছো না, প্রিন্সিপাল -প্রিনসিপল, এমিন্যান্ট -ইমিন্যান্ট – নটোরিয়াস অ্যান্ড ফেমাস। তারপর তিনি ইংরেজিতে বললেন, ইউ আর মাই সান আইদার নটোরিয়াস অর ফেমাস, ডোন্ট বি মিডিওকার।
তখনই আমার খুব ইচ্ছে হলো, আমি খ্যাতিমান হবো। বাবার কাছে রবীন্দ্রনাথের বেশ কয়েকটি চিঠি ছিল আর ছিল দীনেশচন্দ্র সেন, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, কায়কোবাদ প্রমুখের চিঠি। আমি অবাক হয়ে ভাবতাম, এরা আমার বাবাকে চেনে! আমি আমার বাবার মতো হবো। সেই বাসনা থেকেই আমি খ্যাতিমান ব্যক্তিদের কাছে চিঠি লিখতাম তাদের অটোগ্রাফ চাইতাম। তারা আমার চিঠির প্রত্যুত্তরে অটোগ্রাফ পাঠাতেন। যেমন তখনকার বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং পরবর্তীকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ, কাশ্মীরের শেখ আবদুল্লাহ, প্রথম বাঙালি ভু-পর্যটক যিনি সাইকেলে ভ্রমণ করেছেন। সেই রামনাথ বিশ্বাস, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নেতা অম্বিকা চক্রবর্তী, অনন্ত শিং এবং স্কুলের পাঠ্য বইয়ে যার কবিতা পড়েছি সেই কবি শেখর কালিদাস রায়। এমনকি বাবার টেবিলে রাখা রেমিংটন প্যাডের কাগজে পরীক্ষার খাতা কাটার লাল-নীল পেন্সিলের নীল রং দিয়ে জওহারলাল নেহরু তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তার একটি প্রতিকৃতি এঁকে দিল্লিতে পাঠিয়েছিলাম এবং সেই সঙ্গে তার অটোগ্রাফসহ একটি ছবি পাঠাতে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তিনি তা পাঠিয়েছিলেন।
মাহবুব রেজা : জীবনে শিল্পী হবেন, এ রকম ধ্যান-ধারণা বা বিশ্বাস কখন থেকে আপনার ভেতর প্রোথিত হতে শুরু করলো? মানে বলতে চাচ্ছি এর পেছনে কি কোনো ঘটনা, কোনো স্মৃতি আছে?
মুর্তজা বশীর : ছেলেবেলা থেকেই আমি আমার বাবার লাইব্রেরিতে ঘুরঘুর করতাম। আলমারির মোটা মোটা বইগুলো নামাতাম সেগুলো ছিল ভারতবর্ষ, মাসিক বসুমতি, বিচিত্রা, মডার্ন রিভিউ ও এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা। ছবিগুলো দেখতে ভালো লাগত আমার। কিন্তু জীবনে কখনো শিল্পী হবো এটা আমি কখনোই কল্পনা করিনি।
ক্লাস সেভেন-এইটে বইয়ের পাতায় যেসব অলঙ্করণ থাকতে সেগুলো পিতার নীল-সবুজ কিংবা পরীক্ষার খাতা কাটার জন্য লাল-নীল পেন্সিল দিয়ে রং করতাম। আমার ভালো লাগত। ছবি আঁকার প্রতি আকর্ষণ হলো বগুড়াতে যখন পড়ি। তখন কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্রসংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের সদস্য হই সেই সুবাদে মার্কস-এঙ্গেলস-লেনিন-স্ট্যালিনের নাম শুনতাম এবং আমার ইচ্ছা হতো নবাব সিরাজউদ্দৌলার, মহাত্মা গান্ধীর, নেতাজী সুভাষ বোস কিংবা সিনেমা জগতের আমার প্রিয় অভিনেতা অশোক কুমার ও খলনায়ক ইয়াকুবের প্রতিকৃতি, এমনকি আমি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহরও পোট্রেট এঁকেছিলাম। আমি রাস্তায় সাইনবোর্ড পেইন্টাররা যেভাবে ছোটো ছোটো গ্রাফ করে বড় করে আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখতাম এবং বাড়িতে অনুশীলন করতাম।
আমি মার্কস-এঙ্গেলস-লেনিন-স্ট্যালিনের ২৪ বাই ৩৬ সাইজের প্রতিকৃতি এঁকেছিলাম এবং তা বগুড়ার কমিউনিস্ট পার্টির অফিসে বাঁধিয়ে টাঙ্গানো হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের কিছুদিন পর ১ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা ও তাত্ত্বিক ভবানী সেন (যিনি মার্কসবাদী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন এবং রবীন্দ্রগুপ্ত ছদ্মনামে লিখতেন) বগুড়ার এলেন। তিনি আমার আঁকা ছবি দেখে আমাকে দেখতে চাইলেন। আমার সে সময় অটোগ্রাফ জমাবার শখ ছিল। ভবানী সেন আমার অটোগ্রাফ খাতায় লিখলেন, আর্টিস্টের কাজ হলো শোষিত জনগণের ভাব ও দুঃখ-দুর্দশাকে চিত্রের ভেতর দিয়ে এমনভাবে ফুটিয়ে তোলা যাতে সমাজে সে আর্ট নবজীবন সৃষ্টি করতে পারে। তারিখ (১.৯.৪৭)
১৯৪৭ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষা দেয়ার পর আমরা সবাই ঢাকায় ফিরে আসি এবং কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে আমি আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হই।
মাহবুব রেজা: আপনি তো পঞ্চাশের দশকে পড়াশোনার জন্য বেশ কিছু বছর ইতালিতে ছিলেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে এক দশক ইতালি থাকার অভিজ্ঞতায় দেখেছি ইতালির মেয়েরা আমাদের এই অঞ্চলের মেয়েদের মতোই সামাজিক জীবনে বিশ্বাসী। সর্বোপরি আবেগী। জনশ্রুতি আছে, ইতালিয়ান মেয়েরা খুব দ্রুত প্রেমেও পড়ে যায়। তো আপনি কি ইতালিয়ান কোনো মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন?
মুর্তজা বশীর : ইতালিয়ান মেয়েরা খুব দ্রুত প্রেমে পড়ে কি না আমার জানা নেই তবে ইতালিয়ান একটি মেয়ের সাথে আমার হৃদয়ের আদান-প্রদান ঘটেছিল। আমরা দু’জন বিয়ে করব ভেবেছিলাম সেজন্য সে বাংলাও শিখেছিল। আমরা যখন বাংলায় কথা বলতাম অন্যান্যরা অবাক হয়ে আমাদের দেখত কেননা সে ছিল স্বর্ণকেশী, নীল চোখ, গায়ের রং ফর্সা। আমার গায়ের রং সে রকম ফর্সা নয়। চুল কালো তাই ফ্লোরেন্সের অনেকেই আমাদের দেখে রসিকতা করে বলত, কাফে লাততে মানে কফি আর দুধ। আরও পরিষ্কার করে বললে কাফে মানে আমি আর লাততে (ইতালিয়ান ভাষায় লাততে মানে দুধ) মানে ও। তাকে কেউ তার দেশ কোথায় জিজ্ঞেস করলে সে বলত, বাংলাদেশ। বাঙালি সম্পর্কে তখন ইতালিয়ানদের তেমন জ্ঞান ছিল না। শুধু জানত বাংলার বাঘের কথা। ইতালিয়ান অনেকে আমাকে অনেক সময় জিজ্ঞেস করত এ বাঘের কথা। আমি তখন রসিকতা করে ওদের জবাব দিতাম, তোমরা যেমন ঘরে বিড়াল পালো, আমরাও ঘরে তেমনি বাঘ পালি। তারা হয়তো তাকে বাঙালি মনে করত এইজন্য যে ইতালির উত্তরের মানুষরা ছিল বেশিরভাগ স্বর্ণকেশী আর দক্ষিণে ছিল কালো বর্ণের চুল। ফলে তাদের মনে এক ধরনের দ্বিধা ছিল।
মাহবুব রেজা : একেএম বশীরুল্লাহ থেকে আপনি কখন, কীভাবে হয়ে গেলেন মুর্তজা বশীর?
মুর্তজা বশীর : ঊনপঞ্চাশ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষা শেষে আবার ঢাকায় ফিরে আসি এবং আমরা যখন মাহুতটুলীতে ভাড়া বাসায় উঠি। আমার বাবা তখন আজিজুল হক কলেজ ছেড়ে ১৯৪৮ সালে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপার নিউমারি অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। আমরা এখন ঢাকায় এসে ভাড়া বাড়িতে উঠলাম। তখন আমাদের ৭৯ বেগমবাজারের বাসায় এক ভাড়াটে থাকে। ভাড়াটে চলে যাবার পর আমরা মাহুতটুলীর বাসা ছেড়ে বেগমবাজারের বাসায় উঠি। আমার বাবার লাইব্রেরিঘরটা ছিল রাস্তার ওপরেই। যদিও ভেতরে আরেকটি বড় ঘরে তার বইপত্র, পড়ার টেবিল ছিল তা সত্ত্বেও তিনি এই ঘরে বসতেন। এখানে পড়াশোনা করতেন মাঝে মধ্যে এবং লোকজন এলে এখানেই সাক্ষাৎ করতেন। কোনো কারণে আমি তখন বাবার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় পিয়ন এলো। বেশ কিছু চিঠি দেওয়ার পর তিনি একটি চিঠি দেখে বলেন, এ নামে এখানে কেউ থাকে না।
আমি পিয়নে হাত থেকে চিঠিটা নিলাম। দেখলাম চিঠিটা আমার। বগুড়া থেকে লেখা কোনো এক সহপাঠীর। আমি বাবাকে বললাম, চিঠিটা আমার। বাবা বিস্ময়াবিভূত হয়ে বললেন, মুর্তজা বশীর তুমি? আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি আপনার নামে পরিচিতি হতে চাই না। আমার পুরো নাম যেভাবে আমার সমস্ত শিক্ষা সনদপত্রে সার্টিফিকেট রয়েছে তাতে লেখা আবুল খায়ের মুর্তজা বশীরুল্লাহ। ১৯৫২ সাল অবধি আমি মুর্তজা বানানের ম-এর নিচে দীর্ঘ উকার দিতাম। আমার পিতা আমার হাত থেকে চিঠিটা নিলেন এবং তিনি বললেন মূর্খের দীর্ঘ উ কার হয়। তুমি তো মূর্খ নও। তুমি লিখবে ম’তে হ্রস্য উ কার দিয়ে।
এভাবে আমি হয়ে গেলাম মুর্তজা বশীরে রূপান্তরিত।
মাহবুব রেজা : আপনার একটি শিল্পকর্ম ডেড লেজার্ড দেখে আপনার পিতা বেশ মুগ্ধ হয়েছিলেন। তারপর অন্যের সামনে আপনার প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আধুনিক চিত্রের মতোই আমার ছেলে দুর্বোধ্য’ আপনি তার এই মূল্যায়নকে কীভাবে দেখবেন।
মুর্তজা বশীর : প্রখ্যাত উর্দু কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ আমাকে ১৯৫৯ সালের শেষে লাহোরে নিয়ে গিয়েছিলেন সেখানে প্রদর্শনী করার জন্য। তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল ৪৮ সালে লন্ডনে। আমি দু’বছর লাহোরে ছিলাম। ১৯৬১-র শেষে ঢাকায় ফিরে আসি। তখন বাংলা একাডেমিতে সমকালীন শিল্পীদের একটি প্রদর্শনীতে ডেড লেজার্ড শিরোনামে নামে একটি ছবি ছিল। ছবিটি আমি এঁকেছিলাম সমাজের অবক্ষয়ের রূপক হিসেবে। এ প্রদর্শনী আমার পিতা দেখেছিলেন। এমনকি ইতালি থেকে ফিরে আসার পর ১৯৫৯ সালের মে মাসে আমি যখন করাচিতে একক প্রদর্শনী করি সে সময় করাচিতে আমার পিতাও অবস্থান করেছিলেন এবং তিনি সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। একটি আমেরিকান সংস্থা এই প্রদর্শনীর আয়োজক তাই সেখানে কোমল পানীয় সঙ্গে ককটেল পরিবেশন করা হচ্ছিল। আমি কিছুটা শঙ্কিত হয়েছিলাম আমার পিতা এই মদ পরিবেশন কীভাবে গ্রহণ করবেন কিন্তু দেখলাম এ ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক ছিলেন। পত্রিকায় আমার ছবির প্রদর্শনীর খবরাখবর তিনি পড়তেন এবং আমাকে চিঠি লিখে তা জানাতেন। একবার ১৯৫৭ সালে আমেরিকায় ওয়াশিংটন ডিসিতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকজন শিল্পীর যৌথ চিত্র প্রদর্শনী হয়েছিল। সেই সংবাদ পাকিস্তান অবজার্ভার পত্রিকায় বেরিয়েছিল। আমার নাম সেখানে ভুলবশত ‘মুর্তাজা রশীদ ছাপা হয়েছিল। তিনি পত্রিকার সম্পাদকের কাছে একটি চিঠি লিখে আমার শুদ্ধ নাম এবং আমার পূর্ণ নাম জানিয়েছিলেন যা পত্রিকায় মুদ্রিত হয়েছিল। ঢাকার এই প্রদর্শনী উপলক্ষে একটি আলোচনাসভা হয়। আধুনিক মানুষ ও আধুনিক চিত্রকলা। বক্তা ছিলেন একে ব্রোহী। তিনি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, শহীদুল্লহ সাহেব, আপনার পুত্র তো একজন আধুনিক শিল্পী। জবাবে আমার পিতা বলেছিলেন, আধুনিক চিত্রের মতোই আমার পুত্র আমার কাছে দুর্বোধ্য। সেই রাতে তিনি আমার ঘরে ঢুকে প্রশ্ন করলেন তুমি এমন কিম্ভূতকিমাকার ছবি আঁকো কেনো? আমি প্যারিসে ছিলাম, আমি দেখেছি শিল্পকর্ম কতো সুন্দর হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯২৮ সালে তিনি প্যারিসের সোবর্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যয়ন শেষে যখন দেশে ফিরবেন তখন প্যারিসে অবস্থিত ভারতীয় ছাত্রদের অ্যাসোসিয়েশন তাকে ল্যুভর মিউজিয়ামের প্রখ্যাত শিল্পীদের চিত্র সংবলিত দুই খণ্ডের মোটা অ্যালবাম উপহার দেন। এই দুটি গ্রন্থ তিনি আজীবন তার ছোটো একটি মেহগনি কাঠের আলমারিতে মূল্যবান বইগুলোর সাথে রেখেছিলেন এবং আলমারিটি সবসময় তালাবদ্ধ থাকত। যখন আমি ঢাকায় আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তির জেদ করলাম তখন তিনি প্রথমে আপত্তি করলেন। তখন তিনি আপত্তি করে বলেছিলেন, আমি প্যারিসে ছিলাম। শিল্পীদের জীবন দুঃখ-কষ্টে ভরা। আমি চাই না তুমি আমার সন্তান সে রকম অর্থকষ্টে, অনাহারে থাকো। তারপর আমার একগুঁয়েমির কাছে তিনি তার তালাবদ্ধ আলমারি খুলে ল্যুভর মিউজিয়ামের সেই দুই খণ্ড বই আমার হাতে দিতে দ্বিধাবোধ করলেন না। বইয়ে ছিল বেশ কিছু বিবস্ত্রা নারীর চিত্র। সেই রাতে আমার পিতা ডেড লিজার্ড অর্থাৎ এই মৃত টিকটিকির ছবির সম্পর্কে বললেন, আমি জানি না এই ছবিতে কী আছে তবে ছবিটা আমাকে খুব আলোড়িত করেছে। আমি জবাবে পিতাকে বললাম, আমি আপনি সবাই অশরীরী, প্রেতাত্মা। তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, তা হয়তো হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)