সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে প্রথম সেশনগুলোতে আধিপত্য দেখানো বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে আশাবাদী হচ্ছেন অনেকেই। তবে শুরুর এ আশাবাদ এবারই প্রথম, এমন না। বড় দলগুলোর সঙ্গে বেশ কয়েকবারই শুরুতে টাইগাররা আধিপত্য দেখিয়ে পরে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। আশার উল্টোপিঠে শংকাও তাই উঁকি দেয়।
বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া এক দল। তারপরও কেনো সেই শংকার মেঘ? কারণ পুরনো কিছু ক্ষত।
ফ্ল্যাশব্যাক ওয়ান
ভারতের সঙ্গে অভিষেক টেস্ট। আমিনুল-হাবিবুলদের ব্যাটে প্রথম টেস্ট ইনিংসে চারশো রান পৌণে দুই দিন ব্যাটিং। চিত্রটা একেবারে পাল্টে গেলো দ্বিতীয় ইনিংসে। মাত্র ৪৭ ওভার স্থায়ী দ্বিতীয় ইনিংস অল-আউট ৯১ রানে। প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৯ রানের লিড নেয়া ভারত ম্যাচ জিতলো চারদিনে।
ফ্ল্যাশব্যাক টু
ছয় বছর পর ফতুল্লা টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বসেরা বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস ১২৪ ওভারের, স্কোরবোর্ডে ৪২৭ রান। এর মধ্যে প্রথম দিনেই সাড়ে তিনশো। প্রথম ইনিংসে অষ্ট্রেলিয়াকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের ১৫৮ রানের লিড। সেই বাংলাদেশেরই দ্বিতীয় ইনিংসের আয়ু মাত্র ৫০ ওভারের, অল-আউট ১৪৮ রানে। ম্যাচ জিতে হাঁফ ছাড়লো অস্ট্রেলিয়া।
ফ্ল্যাশব্যাক থ্রি
২০০৮ সালে হোম অব ক্রিকেটে সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে প্রথম ইনিংসে ১৯২ করেও ২২ রানের লিড পেয়েছিলো বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৩ ওভার ব্যাট করেও অল-আউট ১৮২ রানে। চারদিনে সেই ম্যাচে হার টাইগারদের।
এই তিন ছাড়াও মুলতানে পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি টেস্ট ম্যাচে শুরুতে চালকের আসনে থেকেও হেরেছে ১৫ বছরে ৯২ টেস্ট খেলা বাংলাদেশ। ১৩ ড্র, আর জিম্বাবুয়ের সঙ্গে পাঁচ ও দূর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে দুটিসহ ৭ জয়ের পরিসংখ্যানটা আরো সমৃদ্ধ হতো যদি শুরুর মতো ম্যাচের শেষ পর্বেও থাকতো পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা।
এবার চট্টগ্রাম টেস্টে সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে দাপট দেখানো বাংলাদেশের সামনে ভুল শুধরানোর সুযোগ। প্রোটিয়া ইনিংস ২৪৮ এ শেষ করার পর এখন আসল পরীক্ষায় মুশফিকুর রহিম এবং তার দল। নিরাপদ অবস্থানে পৌঁছুতে প্রথম ইনিংসে চাই অন্তত: দেড়শো রানের লিড। পাশাপাশি নিজেদের দ্বিতীয় আর ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসেও দরকার লম্বা সময় ব্যাট করার মানসিক প্রস্তুতি।
পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচের পনেরো সেশনের সবক’টিতেই আধিপত্য না থাকলে শেষ হাসি যে প্রতিপক্ষ হাসবে সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা অন্তত: তিনবার দেখেছে বাংলাদেশ।
ওয়ানডে সিরিজের পথ ধরে টেস্ট সিরিজেও বাংলাদেশের সামনে সাফল্যের হাতছানি। সেই স্বপ্নপূরণের জন্য টেস্ট ম্যাচের প্রথম তিনদিন পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতাই যথেষ্ট নয়, শেষদিন পর্যন্ত ব্যাটে-বলে ভারসাম্যপূর্ণ পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে টাইগার ভক্তরা।
টেস্ট র্যাংকিং এর সেরা সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচদিনে পনেরো সেশন লড়ার আত্মবিশ্বাস ও মানসিক শক্তি ‘টিম-টাইগার্স’ নিশ্চয়ই পেয়েছে গত আটমাসে ক্রিকেট মাঠে অর্জিত ধারাবাহিক সাফল্যে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে এখন সামর্থ্যের অনুবাদের আসল পরীক্ষা।