দেশের অন্যতম আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাটে এবার তীব্র সার সংকটে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। সরকার নির্ধারিত দামে সার না পাওয়ায় বেশি দামে সার কিনে আলু চাষ করতে হচ্ছে তাদের।
কৃষকরা বলছেন ,অতিরিক্ত দামে সার কিনার কারণে অনেকাংশেই বেড়ে যাবে ফসলের উৎপাদন ব্যয়। আলুর ভালো ফলন ও দাম না পেলে, আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তাদের।
এবার টিএসপি সারের সরকারি দাম প্রতি বস্তা ১১শ’ টাকা, এমওপি ৭শ’ ৫০ টাকা, ডিএপি ৮শ টাকা ও ইউরিয়া সার ৮শ’ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু জেলার কৃষকরা অন্যান্য সারগুলো সঠিক দামে পেলেও টিএসপি সার একেবারেই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের। আর পেলেও তা কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত দামে।
সদর উপজেলার তুলাট গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করার জন্য সার কিনতে গিয়ে অন্যান্য সার সঠিক দামে পেলেও টিএসপি সার সরকার নির্ধারিত দামে পাইনি। তারওপর হতে হয়েছে হয়রানির শিকার। বেশ কয়েকদিন ঘোরার পর সেই সার সংগ্রহ করে কোনরকমে জমিতে আলু চাষ করছি।
ক্ষেতলাল উপজেলার পাঠানপাড়া গ্রামের কৃষক আখতার হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন জানান, সরকার নির্ধারিত টিএসপি ১১শ’ টাকা বিক্রি করার কথা থাকলেও তাদের কাছ থেকে ১৪শ’ ২০ টাকা, ৭শ’ ৫০ টাকার এমওপি ৮শ’ টাকা, ৮শ’ টাকার ডিএপি ৯শ’ টাকা করে নেয়া হয়েছে। তবে ইউরিয়া সার সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি হচ্ছে।
কালাই উপজেলার সড়াইল গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছে, কিন্তু কৃষি বিভাগের কোনো তদারকি নেই।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এই কৃষকদের দিকে কারও নজর পড়ে না, আমরা এত কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করি অথচ আমাদের দিকে কেউ তাকায় না।
সদর উপজেলার বামনপুর চার মাথার খুচরা সার ব্যবসায়ী উত্তম কুমার বলেন, বরাদ্দের যা সার তার চারভাগের একভাগও পাইনি, সেই কারণে বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশি দামে সার সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, ডিলাররা তাদের ঠিকমতো সার দিচ্ছেন না।
জয়পুরহাট ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক ও বিসিআইসির ডিলার মিনহাজুল ইসলাম কমল বলেন, কৃষককের চাহিদার তুলনায় তাদের বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। বিশেষ করে টিএসপি সারের বরাদ্দটা খুবই কম। অন্যদিকে কৃষকরা কৃষি অফিসের নিয়ম অনুযায়ী জমিতে সার ব্যবহার না করায় এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত উপবরাদ্দ দিলে কিছুটা সংকট কেটে যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম জানান, কৃষকরা জমিতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সার ব্যবহার করছে, যার কারণে কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। আর যারা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।