রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশের নামে রাজনৈতিক সমাবেশ আয়োজন করে এতে সাধারণ মানুষকে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানির ৪১ তম মৃত্যুবার্ষিকীর এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির সমাবেশের কদিন পরই সবাবেশ করছে আওয়ামী লীগ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশের নামে ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক সমাবেশ করছে।
“লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক সমাবেশে নিয়ে আসছে। এটা হচ্ছে একটা রাষ্ট্রীয় সমাবেশ। নাগরিক সমাবেশের আদলে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় সমাবেশ করছে।”
তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তাতো ভালো কথা। আমরা মনেকরি আনন্দের কথা। কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে সমাবেশের জন্য কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন? প্রত্যেকটা স্কুল- কলেজকে চিঠি দিয়েছেন। সমাবেশে না আসলে স্কুলের শিক্ষকদের চাকরি থাকবে না। ব্যাংকের লোকদেরকে চিঠি দিয়েছেন। সমাবেশে না আসলে ৫ দিনের বেতন কাটা যাবে।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের সমাবেশে বিএনপির আপত্তি নাই। কিন্তু আপনারা কী করছেন? সমাবেশে আসতে বাধ্য করছেন স্কুল, কলেজের কোমলমতি কিশোরদের। শুধু তাই নয় সমাবেশে আসতে চিঠি দেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্পোরেট অফিসগুলোতেও। অথচ আপনারা একদিকে মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন অন্যদিকে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছেন যে নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী।
তিনি বলেন, ‘কিছুদিনের জন্য ক্ষমতায় থেকে আনন্দে আছেন। বগল বাজাচ্ছেন, যা ভাবছেন তা হবে না। বিএনপিকে ছাড়া এদেশের মানুষ আর কোন নির্বাচন মেনে নেবে না। দেশের মানুষ সকল রাজনৈতিক দলকে আগামী নির্বাচনে দেখতে চায়। তারা নিজের ভোট দিয়ে সরকারের পরিবর্তন চায়, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এটা সম্ভব একমাত্র নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থায়।
আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, কোন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে? যে সংবিধান আপনারা তৈরি করেছেন অনির্বাচিত সংসদে সেটা অনুযায়ী?
নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, শুধুমাত্র নির্বাচনের আগে ৯০ দিন নিরপক্ষ থাকবেন তা হবে না। একদিকে হেলিকাপ্টারে করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবে, অন্যদিকে বিএনপি চেয়াপারসনসহ আমরা যারা বিরোধী রাজনৈতিক দলে আছি তারা প্রতিদিন আদালতের বারান্দায় থাকবো সেটা হবে না। লোক দেখানো নিরপেক্ষতা দেখালে চলবে না।
“এখন থেকেই নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে, সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং নির্বাচনের আগে বর্তমান সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে”-বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন,’ আজ সবকিছু বদলে গেছে। বদলে গেছে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা । তৈরি হয়েছে ক্ষমতায় যাওয়া-আসার বৃত্ত। তারপরও জোর গলায় বলা হচ্ছে এটাই গণতন্ত্র।
মাওলানা ভাসানীর স্মৃতিচারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মজলুম জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বর্তমান প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক। আজীবন লড়াই সংগ্রাম করেছেন শোষকদের বিরুদ্ধে। তিনি প্রথম বাংলাদেশ স্বাধীন করার ডাক দিয়েছেন। অথচ দুঃখের কথা, তিনি যে আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করেছেন তারা ভাসানীকে স্মরণ করতে চায় না।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল হক নিলুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা নাজমুল হক নান্নু, জাকারিয়া খান চৌধুরী, জাপা (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার প্রমুখ।