গত ২৩ এপ্রিল থেকে দেশজ ক্রাফটসে প্রতিদিন চলছে ঈদের জমজমাট বেচাকেনা, চলবে চাঁদ রাত পর্যন্ত।
দেশজ ক্রাফটস এর ই-কমার্স নিবন্ধিত মেম্বাররা এই সুযোগ পাচ্ছেন। দেশীয় পণ্যের বিপণনে অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে সূক্ষ্মভাবে কাজে লাগাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ফেসবুক, ইউটিউব এবং ই-কমার্সে একযোগে চলছে এই আয়োজন। এতে চলছে ফ্রি ডেলিভারি, ডিস্কাউন্ট ও ক্যাশব্যাক অফার।
কিশোরগঞ্জ থেকে হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ করছেন কামরুন নাহার। গরমে আরামদায়ক কাপড়ে নিজস্ব থিমে কাজ করছেন তিনি। জামা, শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে কখনো পদ্ম, কখন গোলাপ বাগান, পাহাড় কিংবা সুন্দর চিন্তা চেতনার আঁকা আঁকি করেন তিনি।
তাসনিয়া জহুরার প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ঊ, তিনি আছেন ব্লকের শাড়ি, জামা, বেড কভার ইত্যাদি নিয়ে।
পার্ল নিয়ে কাজ করছেন এমেজিং কিডস এন্ড মমস ষ্টোরের রোকসানা কবির কুয়াশা, লাইভে অংশ নিয়ে বিদেশ থেকে অর্ডার পান। কাস্টমাইজ অর্ডারও প্রচুর পাচ্ছেন ।
বাটিক, ব্লক, হ্যান্ড পেইন্ট, শতরঞ্জি, জামদানি, সিল্ক, তাঁত, নানান স্বাদের আচার, থ্রি পিস, শাড়ি, পাঞ্জাবি, বেড কভার, পার্ল, জুয়েলারির সম্ভার বসেছে।
আচারের কাব্য মায়ের রেসিপি নিয়ে আছেন জামান আরিফ। গাজীপুর থেকে বিপাশা দেশীয় খাদ্য পণ্য , গুড়, তেঁতুল, পিঠা আর ছাই নিয়ে কাজ করছেন ।
কিভাবে এই পরিকল্পনা নিলেন এমন প্রশ্নে দেশজের কর্নধার নিশাত মাসফিকা বলেন, আসলে ঈদের এই আয়োজন নিয়ে বলতে গেলে আমি কোথা থেকে সাহস পেলাম তা বলতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে সফল বসন্ত মেলার আয়োজনের পর ধানমন্ডিতে বৈশাখী মেলা করার সকল কাজ যখন সম্পন্ন তখন আসে লকডাউন ঘোষণা। চিন্তিত হয়ে যাই।
এদিকে আমাদের উদ্যোক্তারা চাঙ্গা,পণ্য সংগ্রহ করে সবাই মেলার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু মৃত্যু হার বেড়ে যাওয়ায় লকডাউন ঘোষণায় সবাই খুব ভেঙে পড়ে।
কিন্তু সরকারি ঘোষণায় ডেলিভারি সিস্টেম চালু রাখায় দেশজ ক্রাফটস অনলাইনে বৈশাখী মেলার পরিকল্পনা করার সাহস করে। এবং সফল হয়। কারণ আমাদের উদ্যোক্তারা তাদের পুঁজি তুলে লাভ করতে পেরেছেন এই মেলা থেকেই। অনলাইনে বৈশাখী মেলা ছিল ৫ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত।
তিনি আরও বলেন, অনলাইন মেলায় অংশ নিতে গিয়ে আমরা আমাদের উদ্যোক্তাদের যেভাবে প্রস্তুত করেছি, চেষ্টা করেছি এটার ফসল ঈদের বিকিকিনি পর্ব।
পণ্যের ছবি তোলা, মেলার জন্য পণ্য নির্বাচন করা, বিবরণ লেখা, মেইল করা ইত্যাদির সাথে লাইভ বাটন খুজে নেয়া, লাইভে ক্যাজুয়াল থেকে ভিন্ন রকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করা, নিজেকে ব্র্যান্ডিং করা সবই অনলাইনে উনাদের শেখানো হয়েছে।
‘‘জীবনে এক মিনিট লাইভ করেননি এমন ব্যক্তিরা এক ঘণ্টা ধরে লাইভ করেছেন। এদের সাবলীল আচরণ দেখে আমি বিস্মিত। আমি ভীষণ আশাবাদী। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ঈদে তাই আবার ও ঈদ বিকিকিনির পর্ব করেছি। যাতে আমাদের উদ্যোক্তারা হাল ছেড়ে না দেন। যে কোন পরিস্থিতি যেন মোকাবেলা করতে পারেন’’, বলছিলেন দেশজের ট্রেইনার তাহমিনা তানিয়া ।
দেশজে বেড কভার নিয়ে আছেন অর্থার নিতাই সরকার পার্থ, মেলায় এবং ঈদ আয়োজনে অংশ নিয়ে এবার তার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
দেশজের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা শিক্ষার্থী ফারজিন দিয়া। লকডাউনে পেইজ খুলেন পাঁচমেশালি। মা খালা কে সঙ্গে নিয়ে শুরু করে দেন হ্যান্ড পেইন্টের নয়ন জুড়ানো কাজ। কাজ চলছে পুরোদমে।
প্রকৃতির নানান আবহ আর ফিউশন ধর্মী কাজের সাথে পেইন্টিং নিয়ে আছেন অন ক্লাউড এন্ড হাফের আফরিন আহমেদ।
এছাড়াও দেশজে আছেন যশোরের সিল্ক সম্ভার নিয়ে কাজ করা সোহেলি শারমিন, রংপুরের শতরঞ্জি নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কাজ করছেন হীরম, রাঙ্গামাটি থেকে আদিবাসী গহনা, কাপড়, ব্যাগ নিয়ে সানজিদা। প্ল্যান্ট হ্যাঙ্গার নিয়ে আছেন উম্মে মিরা এবং তার দু বোন, ঐতিহ্যবাহী নকশি কাঁথা নিয়ে কামরুন নেসা পলি, তাঁত নিয়ে আছেন সিফাৎ মুনজারিন, রিকশা পেইন্ট নিয়ে ক্রিয়েটিভ কাজ করছেন ড চিং চিং, আছেন খালেদা নূপুর, মেরিনা হোসেন এবং আরও অনেকে ।
দেশজ ক্রাফটস বিশ্বে দেশের ঐতিহ্য- এই শ্লোগানকে সাথি করে দেশীয় পণ্য এবং দেশীয় নবীন প্রবীণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে গতবছর ডিসেম্বর থেকে কাজ করছে দেশজ ক্রাফটস।