দেশের শ্রেষ্ঠসন্তান মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবী হত্যা করা একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হওয়ায় এবারের বিজয় দিবসটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বস্তির বিজয় দিবস, গর্বের বিজয় দিবস। ৪৪ বছর পর বাংলাদেশ এবারই কলঙ্কমুক্ত জাতি হিসেবে বিজয় দিবস উদযাপন করছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের ছিটমহলবাসীদের প্রথম বিজয় দিবস।
দীর্ঘ ৪২ বছর পর প্রথম বিজয়ের উল্লাস নিজেদের মাটিতে উদযাপন করছে হাজারো ছিটমহলবাসী। প্রাণ খুলে আজ তারা গাইবে নিজের দেশের জাতীয় সঙ্গীত।
বিজয়ের এই উল্লাসকে পুরো বাংলাদেশের মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে গ্রামীনফোনের আয়োজনে চ্যানেল আইয়ের বিজয়ের প্রথম উল্লাস। প্রতিবারের মতো এবারো বিজয় দিবস উপলক্ষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গন সেজে উঠেছে লাল সবুজের গৌরবে। বিজয়ের প্রথম প্রহরে বিজয় উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধা, তরুণ প্রজন্ম, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গীতশিল্পীরা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের উপস্থিততে লাল সবুজের বেলুন উড়িয়ে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
বিজয়ের উল্লাসের মেলায় উপস্থিত থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, চ্যানেল আই মুক্তিযুদ্ধের ও স্বাধীনতার পক্ষে সবসময় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। আমি শুধু তরুণ প্রজন্মকে একটি কথা বলতে চাই তোমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখোনি শুধু গল্প শুনেছো, তাদের উচিত এখনি সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ করা। তোমরা যদি দেশের পাশে থাকো তাহলে প্রত্যক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এদেশের মাটিতেই সম্ভব।
বিজয়ের প্রথম উল্লাসে বিজয় দিবসে পুরো বাংলাদেশর মানুষকে স্বাগত জানিয়ে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, পুরো বাংলাদেশকে নিয়ে আজ আমরা বিজয় উল্লাস করছি। আমাদের এই উল্লাসে আজ যারা চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছেন তাদের জন্য আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে পেয়েছি। তাদের আমরা আজ বরণ করে নিতে চাই দেশে ও দেশের বাইরে থাকা প্রবাসী বাঙালিদের সঙ্গে নিয়ে।
চ্যানেল আইয়ের বিজয় উল্লাসের প্রধান পৃষ্ঠপোষক গ্রামীনফোনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা রাজীব শেঠি বলেন, হাজারো মুক্তিযোদ্ধার রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ৪২ পর বিজয়ের এই উল্লাসে গ্রামীনফোন সঙ্গে থাকতে পেরে কতৃজ্ঞ। এজন্য চ্যানেল আইকে ধন্যবাদ জানাই। যারা আজ বিজয়ের প্রথম জয়ের মালা গলায় পড়বেন এবং কণ্ঠে সোনার বাংলা গান গাইবেন তাদের সঙ্গেও গ্রামীনফোন রয়েছে।
লাল সবুজে বর্ণিল মঞ্চে হাজির ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও বীরউত্তমরা। বীরউত্তম মশরুল হক সিদ্দিকি বিজয়ের এই উল্লাসে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন। তিনি এও বলেন, যেসব মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করতে যেয়ে হাত বা পাঁ হারিয়েছে তাদের আমরা পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা না বলে সম্মান জানিয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বলতে পারি।
চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, বিজয়ের ৪৪ বছর শেষ করে ৪৫’এ পা দিয়েছে বাংলাদেশ। এই দিবসটি বাঙালি জাতির অহংকারের দিন। বাঙালি জাতির কাছে লাল-সবুজ শুধু রং নয় এটি আমাদের অস্তিতে মিশে গেছে। বাংলাদেশ যখন ৫০ বছর বিজয় দিবস পালন করবে তখন এই দেশ বিশ্ববাসীর কাছে মযাদাসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত পাবে।
মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন সময়ের স্মৃতিচারণ ছাড়াও মেলায় সংগীত পরিবেশন করবেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠযোদ্ধারা, খ্যাতিমান সঙ্গীতশিল্পী, চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ও ক্ষুদে গানরাজের শিল্পীরা। এছাড়া মঞ্চে দেশের গানে সেরা নাচিয়ে নৃত্যশিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করবেন। গম্ভীরা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আবৃত্তি পরিবেশন করবেন বিশিষ্টজনরা।
বিজয়ের উল্লাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য দেশের বরেণ্য চিত্রশিল্পীরা তাদের চিত্রকর্মে মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেন। তাদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে ছবি আঁকে ছোট্ট সোনামণিরাও।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস যুগিয়েছে স্বাধীন বাংলা বেতারের সঙ্গীত শিল্পীদের সেই বলিষ্ঠ কণ্ঠের গানগুলো। তারাও উপস্থিত ছিলেন এই বিজয় উল্লাসে। দেশের গান গেয়ে স্বাধীন বাংলার সঙ্গীত শিল্পীরা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। নাট্যবক্তিত্ব আতাউর রহমান, সৈয়দ হাসান ইমাম, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুও নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস আরাও উপস্থিত ছিলেন।
মেলায় ৭ বীরশ্রেষ্ঠ এর নামে ৭টি স্মারক স্তম্ভ এবং ১১ সেক্টরের স্মরণে ১১টি নির্দিষ্ট স্থান রাখা হয়েছে। এছাড়া মেলার স্টলগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের নানা দলিল, মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থমালা, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র, মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের ডায়েরি প্রদর্শনী করা হয়। থাকবে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের সামগ্রীতে সজ্জিত আরো বেশ কিছু ষ্টল।
আমীরুল ইসলাম ও শহিদুল আলম সাচ্চুর পরিচালনায় বিজয় উল্লাসের এই মেলাটি বিকেল দুইটা পর্যন্ত সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল আই। বিজয়ের উল্লাসের মেলার এই পুরো অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন জনপ্রিয় উপস্থাপিকা মৌসুমী বড়ুয়া।
বিজয় উল্লাসের পর বিকেল ২.৩০ মিনিট থেকে পঞ্চগড়ের গাড়াতি থেকে চ্যানেল আই সরাসরি সম্প্রচার করবে ‘এইতো সময় বাংলাদেশ’। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে অনুষ্ঠানটির সহায়তায় রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রাণালয়, গ্রামীণফোন ও চ্যানেল আই।