সেপ্টেম্বরের ১০/১১ তারিখ। রাতের বেলা। বারী ভাইয়ের সঙ্গে দেহতত্ব নিয়ে কথা চলছিল। তার পৃথিবীর ঘরে বসে। আমাকে বললেন, ‘বেশি খুইজোনা তারে। পাগল হয়া যাবা।’ তারপরও আলোচনা চলেছে দীর্ঘ সময়। কথা বলতে বলতে মনের মধ্যে গানের লাইনের রেখা ধরা দেয়। লিখলাম, ‘মানুষ ছাড়া কে পারে তার বর্ণনা দিতে/ মানুষের ভেতরে প্রভু/ বাহিরেও থাকেন কভু/ মানুষই পারেন তার অন্তরে নিতে।’ আরো লিখলেন, আমি পুড়ে হব বিলীন/ শুধু তার পিরীতে/’। লিখলাম, ‘এক ফোঁটা জল দেখে ডরে/ কাঁপে এই অন্তর/ দয়াল আমার পিপিলিকার ঘর।’ সব মিলিয়ে চারটি গান লিখি। কত যত্ন করে, কত মমতা দিয়ে আমার লেখাটায় সুর বসালেন। স্টুডিও রেকর্ডের আগে চ্যানেল আইতে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের জন্মদিনে ‘পিপিলিকার ঘর’ সরাসরি গেয়ে আমাকে জানান, গাইয়া মনটা হালকা করছি। আবার কবে গাই না গাই।’
‘ফাইনাল ভয়েস আর দেওয়া হল না তার। এক ফোঁটা জলে ভেসে গেল আমার পিপিলিকার ঘর। কে গাইবে আর তার মত করে এমন মমতা দিয়ে।’ টেলিফোনের ওপার থেকে কান্না ভেজা কণ্ঠস্বর দেলোয়ার আরজুদা শরফের। চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে বলছিলেন ‘জিন্দা লাশ’ গানের গীতিকার। তার সঙ্গে সর্বশেষ কাজ করছিলেন বারী সিদ্দিকী। নিজের জন্য গানের পাশাপাশি তরুণ এক শিল্পীর জন্য গান করছিলেন তিনি। স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউ করিডরেও তার সঙ্গে কথা হয়েছিল বারী সিদ্দিকী নিয়ে। তখন অনুরোধ করেছিলেন যেন তখন না লেখা হয় তার বারী সিদ্দিকী সম্পর্কে কথাবার্তা। কারণ তিনি বিশ্বাস করেছেন বারী সিদ্দিকী ফিরবেন সুস্থ হয়ে।
২০০৬ সালে ‘ভালোবাসার বসতবাড়ি’ বের হয়েছিল সঙ্গীতা থেকে। তাতে প্রকাশিত ‘আমি একটা জিন্দা লাশ’ গানটি বারী সিদ্দিকীর জনপ্রিয়তা আরো তুঙ্গে তুলে দেয়। প্রান্তিকের মানুষের কাছে তার ভালোবাসা চিরস্থায়ী হয়ে যায়। সেই গান বিষয়ে দেলোয়ার আরজুদা শরফ বলেন, ১৯৯৯ সাল থেকে তার সঙ্গে পরিচয়। আমার লেখা প্রায় ৩০০০ গানে বাঁশি বাঁজিয়েছেন তিনি। ক্লোজআপ ওয়ান হওয়ার পর তিনি বসে আছেন। নেত্রকোনাতে অবস্থান করছেন। তাকে ফোনে বললাম ২০০৬ সালের শুরুতে, বারী ভাই আপনার জন্য একটা গান লিখেছি। গাইতে হবে। তিনি আসলেন। তারপরতো ইতিহাস। তার ঐ গানে আমার ক্যারিয়ার আরো শক্ত হয়েছিল। এরপরতো আরো ৩০-৩৫টি গান করেছি। তার সঙ্গে সম্পর্কটা ছিলো পরিবারের মত। শেষবারের মত আমার লেখাতে হারমোনিয়ামে সুর তুলে গাইলেন। কিন্তু আর ফাইনাল ভয়েস দিলেননা। গানগুলো আর কাউকে দিয়ে গাওয়ানো হবেনা। অমন উঁচুতে বা অন্তর চেরা দীর্ঘ টানে কে আর গাইতে পারবে তার মত। পারবেনা। দরদের শূণ্যতায় ভুগবে বাংলা গান। এ শূণ্যতা পূরণ হবেনা কোনদিন।’
দেলোয়ার আরজুদা শরফ জানান, তিনি সর্বশেষ অ্যালবামের কাজ শেষ করেছিলেন, ‘নিষিদ্ধ মানুষ’ নামে। যেটি প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।