এক জোড়া জুতা থেকে কাহিনীর শুরু হলো। একজন পায়ে জুতো পরছেন, এমনটা নিশ্চয়ই দেখার কিছু নেই। কিন্তু এখানে স্রোতের বিপরীতে চলে যাবেন আপনি। জুতো পরলো, নদীর পাশের আধাপাকা দোতলা বাড়িটি থেকে একজন বের হচ্ছে। মফস্বলের এদিকটার সাথে শহরের যোগাযোগ রেখেছে যে, তার নাম নদী। নদীর বুকে ঢেউ খেলে যায়, ঢেউয়ের বুকে নৌকা। এই ছিমছাম যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধাভোগ করতেও পোড় খেতে হয় মাঝে মাঝে। পলিস করা জুতো জোড়া কাদায় আঁটকে গেলেই যতসব ঝামেলা। সরল মন, বক্ররেখার ঢেউয়ে জুতোর কাদা ভাসাতে যেয়ে ভাসিয়ে দেয় জুতোটাকেই!
ডিজিটাল এই যুগে ফ্রীল্যান্সার বললে আপনারা অনেক উপরের লেভেলের ধারণা ধারণ করে থাকবেন। কিন্তু ফ্রীল্যান্সার তো শুধু কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের মাধ্যমেই হয়না। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার চরম আকাংখায় নানান ধরণের প্রজেক্টে কাজ করে তরুণ মোহন্ত। মোহন্তের জীবনে অনেক কিছুরই অভাব হলেও ভালোবাসার অভাব ছিলোনা। ঢেউয়ে জুতো ভেসে গেলে পরিচিত এক গার্মেন্টসকর্মী মেয়ে ভালোবেসে জুতো কেনার টাকা দেয়। দিনভর কাজ শেষে বাসায় ফিরতে যেয়ে দেখে রূপসী এক মেয়ে পা ঝুলিয়ে বসে আছে, যেন অপেক্ষা করছে। মোহন্তে মোহাচ্ছন্ন হবে বলে।
ক্যামেরাকে তৃতীয় চোখ হিসেবে বিশ্বাস করতে কষ্ট হলে মোহন্তে মোহাচ্ছন্ন হতে হবে। একটা নাটকের কাহিনী চিত্রে শালা- দুলাভাইয়ের বিদ্বেষ শুধুমাত্র দু’ মিনিটের কথোপকথনে বুঝে যাবে অগণিত দর্শক। ‘ এমন দুলাভাই যেন শত্রুরও না থাকে’- বলে যখনই দর্শক গালমন্দ করতে যাবে, ঠিক তখনই মাত্র কয়েক সেকেন্ডে সেই দুলাভাইয়ের আবেগ দেখে আপনি নিজেও আবেগী হয়ে পড়বেন।
মোহন্তের অনেক অফিস। ফুটপাত, উঁচু দালান থেকে শুরু করে নিষিদ্ধ গলিময় মোহন্তের প্রজেক্ট। কিন্তু কখনো চলার পথ সরল থাকেনা, ভালোবাসা, সাহায্য সবই মরিচীকা হয়ে যায় কোনো এক ছোট্টো ভুলের কারণে। চেহারা পাল্টে যায় সবকিছুর। যেই মোহন্তকে ভালোবেসে ঢেউয়ের বুকে প্রেম জেগে উঠতো ক্ষণে ক্ষণে, বাড়ি ফেরার পথে যে দরজা খুলে যেতো মোহন্তের জন্য, আজকাল তাকে দেখলেই দরজা বন্ধ হয়ে যায়, ঢেউয়ের বুকে প্রেমের পরিবর্তে ভাসতে থাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা।
অনেক কিছু লেখলেও চুয়ান্ন মিনিট সম্পর্কে লেখা শেষ করা যাবেনা। মেধাবী নির্মাতা নুর ইমরান মিঠু’র রচনা ও পরিচালনায় টেলিফিল্ম ‘ মোহন্ত’ একটি ভিন্ন ধারার কাজ। যেখানে ক্যামেরার প্রতিটি ফোকাস- ডিফোকাসে নতুন গল্প বলবে, চমকে যাবেন আপনি। ক্লোজ শটে প্রেম দেখে রোমান্টিক দর্শকমন ওয়াইড শটে গাছের ফাঁকফোকরে নদী দেখে হতাশ হয়ে যাবেন। যেখানে হাজারটা হতাশাকে দেখায় নদীকে দেখিয়ে, কাছে আসাকে দেখায় জানালার ফাঁকে, দূরে যাওয়াকে দেখায় খোলা দরজার ভেতর থেকে অন্ধকার দেখিয়ে। চুয়ান্ন মিনিটের এই টেলিফিল্মটি দেখতে বসে স্পেসবার চেপে পজ করা যায়না, প্রতিটি সেকেন্ড মনে হয় ‘ তারপর কি হলো?’
শেষটায় যখন দরজা বন্ধ হয়ে যায়, এতক্ষণ ক্যামেরায় দেখা নদীটি যেন বুকে খুঁজে পাই। শূণ্যতা, না পাওয়ার হিসেব কষতে যেয়ে হুহু করে উঠে। কি এক আবেশী সময় কাটিয়ে ফেললাম! আমি চুয়ান্ন মিনিট আচ্ছন্নে ছিলাম, মোহন্তের মোহাচ্ছন্নে!
চ্যানেল আই ইউটিউবে ‘মোহন্ত’: