বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক রাষ্ট্র চীনে চলতি বছরের জুলাই’র মধ্যে মূল্যস্ফীতির ১.৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে চীন সরকারের ধারণা ছিলো দেশটির মূল্যস্ফীতি ৩শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। প্রায় একই অর্থনৈতিক চিত্র দেখা গেছে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনৈতিক রাষ্ট্র ব্রাজিলেও। এই বছর ব্রাজিলের মূল্যস্ফীতি ৯.৫৬শতাংশ বেড়েছে যা দেশটির বিগত ১২ বছরের অর্থনৈতিক ইতিহাসের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
চীন-ব্রাজিলের বর্তমান ওই অবস্থা বিশ্ব অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে নানা বিশ্লেষণে ব্যস্ত অর্থনীতিবিদগণ।
চীন সরকারের মতে দেশটিতে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফিতি ১.৪ শতাংশ থেকে ১.৬ শতাংশে পৌঁছে গেছে। আর বিদ্যুৎ এর দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্রাজিলে ২০০৩ সালের নভেম্বর পর এই প্রথম এতোটা ভয়াবহ হারে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
চীনে এক বছর আগে উৎপাদন মূল্যসূচক ৫.৪শতাংশ কমে ছিলো। কিন্তু এই বছরের জুলাই এ এই মূল্যসূচক মাত্র ৫শতাংশ কমতে পারে বলে ধারণা করে বিশ্বের অন্যতম উন্নত এই দেশটি। চীনের শেয়ার বাজারে এই বর্ধিত মূল্যস্ফিতি বিরূপ প্রভাব ফেলছে। চলতি বছরের জুনের মধ্য থেকে দেশটির মূল বেঞ্চমার্ক সূচক-সাংহাই কম্পোজিট এর এক-তৃতীয়াংশ মূল্য হারিয়েছে।
দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় চীনের কেন্দ্রিয় ব্যাংক গত বছরের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ৪বার ব্যাংক সুদের হার কমিয়েছে।
সিঙ্গাপুরের কমার্স ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ জুহো হাও আশঙ্কা করছেন ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রিয় ব্যাংককে আবারো এমন পদক্ষেপ নিতে হতে পারে।
তিনি আরো মনে করেন, এই পর্যায়ে চীনের অর্থনৈতিক নীতি স্পষ্টভাবেই যথার্থ বিষয়ে ফোকাস করতে ব্যর্থ হচ্ছে। চলতি মাসের প্রথমদিকে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে এই বছরের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিলো ৭ শতাংশ্। কিন্তু বছরের প্রথম ৩ মাসের প্রবৃদ্ধির হার একই ছিলো। ধীর গতির বাজার ব্যবস্থা, কম বিনিয়োগ, নিম্নমুখী রপ্তানি চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের এই মূল্যস্ফীতি খুবই কম। তবে চীনের বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ করছেন এই বর্ধিত মূল্যস্ফীতির মাত্রা দেশবাসীর জন্য কতোটা সহনীয় হবে।
বিশ্লেষকদের মতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশটির এই মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন তথ্য প্রয়োজন।
আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার ব্রাজিলের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে বিশ্ব বাজারে ব্রাজিলিয়ান পন্যের কম চাহিদা, চীনের ধীর গতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্রাজিলের অর্থনৈতিক মন্দার পিছনের অন্যতম প্রধান কারণ।
আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিল’র তথ্যানুযায়ী এই বছর ব্রাজিলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১.৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশটির রাষ্ট্রপতি দিলমা রোউসেফ দেশের খরচ কমিয়ে ও কর বাড়িয়ে ঘাটতি বাজেট পূরণের চেষ্টা করছেন।