আনুষ্ঠানিক প্রয়োজন ছাড়া এবং গ্রাহকের অজান্তে সরকারি-বেসরকারি মোবাইল অপারেটরের কাছ থেকে কললিস্ট কিংবা কল রেকর্ড সংগ্রহ করা বন্ধ করতে হবে বলে একটি রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
প্রায় দশ বছর আগে নেত্রকোনায় শিশু সৈকত অপহরণ ও হত্যা মামলায় গত বছরের ২৮ আগস্ট সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিল বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চ। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ সে রায়টি প্রকাশিত হয়েছে।
এই রায়ে আদালত বলেছেন, ‘হরহামেশাই আমরা দেখতে পাচ্ছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অডিও, ভিডিওসহ নাগরিকের ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছড়িয়ে পড়ছে বা প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে,সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে চিঠিপত্রসহ নাগরিকের অন্যান্য যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। আগ্রহী কেউ বা কোনো অংশ চাইলেই তা সহজেই লঙ্ঘন করতে করতে পারে না।’
রায়ে বিটিআরসি ও দেশের মোবাইলফোন কোম্পানিগুলোকে তাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিয়ে আদালত বলেছেন, ‘বাংলাদেশ টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন এবং ফোন কোম্পানিগুলোর বৃহত্তর দায়িত্ব হল যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষা করে সাংবিধানে সুরক্ষা দেওয়া। তারা তাদের কোনো গ্রাহক বা নাগরিকের যোগাযোগ সম্পর্কিত কোনো তথ্যই সরবরাহ করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আইন সেটিকে অনুমোদন দেয়। হানা দিয়ে বা শিকার করে করে নয়, কারো যোগাযোগ সম্পর্কিত তথ্য বা কললিস্টের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অবশ্যই কারণ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানাতে হবে। নইলে সরবরাহ করা তথ্য বা নথি প্রমাণের গুরুত্ব হারাবে এবং সরবরাহকারী ব্যক্তি ও কর্তৃপক্ষ ব্যক্তির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে দায়ী হবেন।’
শিশু সৈকত হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত অসামি অলির কললিস্ট তার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ এই কললিস্টে বেসরকারি মোবাইল কোম্পানি স্বীকৃত কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর ছিল না।
এক্ষেত্রে বিদ্যমান সাক্ষ্য আইন সংশোধনের গুরুত্ব তুলে ধরে রায়ে বলা হয়েছে, ‘সাক্ষ্য আইন সংশোধন না করে ডিজিটাল ডকুমেন্টকে সাক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে কোনো ব্যক্তির কল লিস্ট বা কথোপকথনের কোনো মূল্য থাকে না। তাই সাক্ষ্য আইনের সংশোধন বা যুগোপযোগী করা এখন সময়ের দাবি।’