স্কুল পড়ুয়াদের ইন্টারনেটে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, আঘাত দেয়া শব্দের আক্রমণসহ ইন্টারনেট ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করতে প্রচারণা চালাচ্ছে গ্রামীণফোন। ‘নিরাপদ ইন্টারনেট’ নামের এই প্রচারণায় এবছরের মধ্যে ২৫০ টি স্কুলের ৫০ হাজার শিক্ষার্থীকে ইন্টারনেটে করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে সচেতন করা হবে। এই উদ্যোগে দেশের অন্যতম শীর্ষ মোবাইলফোন অপারেটরটির সঙ্গী হয়েছে ব্র্যাক।
‘নিরাপদ ইন্টারনেট’ প্রচারণায় জনপ্রিয় শিক্ষামূলক কার্টুন চরিত্র ‘মীনা’র মতোই শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করবে ‘সাবিনা’ নামের একটি অ্যানিমেটেড চরিত্র। স্কুলগুলোতে প্রদর্শিত ভিডিওতে সাবিনা বলবে ইন্টারনেট, ফেসবুক নিরাপদে ব্যবহারের উপায়।
২০১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া নিরাপদ ইন্টারনেট কর্মসূচির এবছরের লক্ষ্য তুলে ধরতে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান গ্রামীণফোন ও ব্র্যাক কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর পরিসংখ্যান এবং শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার তুলে ধরেন গ্রামীণফোনের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের প্রধান কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন।
তিনি বলেন,‘আর সব নতুন কিছুর মতো ইন্টারনেটেরও কিছু নেতিবাচক দিক আছে। ইন্টারনেট বিষয়ক সচেতনতার অভাবে অপ্রাপ্ত বয়স্করা এই নেতিবাচকতার শিকার হয় বেশি। তবে ইন্টারনেটের যুগে আমাদের শিশুদের এর বাইরে রাখার উপায় নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও ঠিক এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় সচেতনতার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তাই ডিজিটাল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইন্টারনেট ব্যবহারকে শিশুদের জন্য নিরাপদ করার সচেতনতা তৈরি করাটা আমাদের দায়িত্ব।’
তিনি আরও বলেন,‘ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করতে অ্যানিমেশন, ভিডিও, কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে।’
কিশোর-কিশোরীদের অসচেতন ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিণতির উদাহরণ তুলে ধরেন ব্র্যাকের স্ট্র্যাটেজি,কমিউনিকেশন ও এমপাওয়ারমেন্টের জ্যেষ্ঠ পরিচালক আসিফ সালেহ।
অসচেতনভাবে ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার আত্মহননের মতো ভয়াবহ সিদ্ধান্তের দিকেও ঠেলে দিতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন,‘ অভিভাবকহীন ভাবে আমরা শিশুদের জন্য ইন্টারনেটের বিশাল দুনিয়া উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এখানে বড়দের মতো অনেক কিছু করার স্বপ্নের সঙ্গে শিশুমনে হতাশা,নেতিবাচক উপাদানের উপস্থিতিও বাড়ছে। বিশেষ করে সাইবার বুলিং (অনলাইনে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য) এখন চরমে।
শহর থেকে গ্রামে এখন শিশুদের মধ্যে ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাব অভিভাবক-শিক্ষকদেরও ভাবিয়ে তুলছে। ব্র্যাক একটি সামাজিক সংস্থা হিসেবে নতুন এই সামাজিক সমস্যা থেকে শিশুদের নিরাপদ রাখতে আন্তরিক। আমরা ১৪’শ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে কার্যক্রম পরিচালনা করি। তাই নিরাপদ ইন্টারনেট বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে এই ক্ষেত্রে বড় সুযোগ আছে আমাদের।’
গ্রামীণফোনের নিরাপদ ইন্টারনেট কর্মসূচি ৪ বছর ধরে চলছে। কর্মসূচিতে দেশজুড়ে ৫’শ টি স্কুলে নিরাপদ ইন্টারনেট নিয়ে প্রচারণামূলক আয়োজন ও শিক্ষার্থী,শিক্ষক-অভিভাবকদের জন্য নির্দেশনামূলক বই বিতরণ করা হয়েছে। এই প্রচারণায় এখন পর্যন্ত ৮০ হাজার স্কুল পড়ুয়াকে সচেতনতার বার্তা দেয়া হয়েছে বলে জানান বক্তারা।