সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নানা রকম গুজব ঠেকাতে পুলিশের নতুন একটি ইউনিট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক-আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। তার কথা অনুযায়ী, সরকার এ নিয়ে অনেকটা কাজ এগিয়েও নিয়েছে। শুধু অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পেলেই দেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের ইউনিটটি চালু হবে।
শনিবার একটি অনুষ্ঠানে পুলিশ প্রধান সাংবাদিকদের যতটুকু ধারণা দিয়েছেন, তাতে নিশ্চিত করেই বলা যায়, অল্পদিনের মধ্যেই আমরা এই ইউনিটের কার্যক্রম দেখতে পারবো। তিনি বলেছেন, গুজব ঠেকাতে এই ধরনের ইউনিট তৈরিতে তারা পুরোপুরি প্রস্তুত। এরইমধ্যে পুলিশের অনেক সদস্যকে বিদেশে থেকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি এ কাজে তাদের সক্ষমতা বাড়ানো, কৌশল, কর্মপরিকল্পনা সব কিছুতেই প্রস্ততি রয়েছে।
আমরা দেখেছি, গত কয়েক বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নানা রকম অপপ্রচার আর গুজব রটানো হয়েছে। যার প্রতিটির পেছনেই ছিল সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। বিশেষ করে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর রামু, নাসিরনগর ও রংপুরের মতো বড় ধরনের সহিংসতা চালানো হয়। আর এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই আশ্রয় নেয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো গুজবের।
আইজিপি এমন একটি দিনে গুজবের বিরুদ্ধে নতুন উদ্যোগের কথা জানালেন, যেদিন নৃশংস রামু হামলার ৬ বছর পূর্ণ হলো। ঠিক এই দিনেই রামুর উত্তম বড়ুয়া নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পবিত্র কোরান শরিফ অবমাননার গুজব ছড়িয়ে উগ্র ধর্মান্ধগোষ্ঠী ১২টি প্রাচীণ বৌদ্ধ বিহারসহ বেশ কিছু বসত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে, লুটপাট চালায়।
আর অল্প কিছুদিন পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, নির্বাচনকে ঘিরেই সবচেয়ে বেশি গুজব এবং অপপ্রচারের ঘটনা ঘটে। অনেকক্ষেত্রে সেই গুজবের ফলাফল হয় ভয়ংকর। আর দেশে ইন্টারনেট বিপ্লবের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে গুজব রটানোর ঝুঁকি এখন সবচেয়ে বেশি। তাই এ নিয়ে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ রয়েছে।
আমরা লক্ষ্য করেছি রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় এমনকি পারিবারিক জীবনেও এখন সাইবার অপরাধ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছে। সেসব অপরাধের সঙ্গে প্রকৃত জড়িতদের বিচার হোক তা সবাই চায়। আমরাও চাই।
গুজব বন্ধ হোক। প্রকৃত অর্থে তা বন্ধে পুলিশের নতুন ইউনিটকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে সেই ইউনিটকে একটি বিষয় বিশেষ সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে, যেন নিরাপরাধ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী হয়রানীর শিকার না হন।