উবারের মোটরবাইকে গন্তব্যে যাওয়ার সময় বেপরোয়া গতির কাভার্ডভ্যানের চাপায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য নিহতের ঘটনার তদন্তে উবার কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।
তারা বলছে, বাইক চালক সুমন বেপরোয়া গতিতে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন এবং অসৎ উদ্দেশ্যে বারবার ব্রেক করছিলেন। কাভার্ড ভ্যান ও উবার চালক দু’জনই বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়েছেন।
‘এমনকি দুর্ঘটনার পর দায় এড়াতে ফোন বন্ধ করে সুমন পালিয়ে যায়। চালককে খুঁজে পেতে উবার কর্তৃপক্ষের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য চাওয়া হলেও তারা কোনো সহযোগিতা করেননি।’
শনিবার আশুলিয়ার বাইস মাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘাতক কাভার্ডভ্যানটি জব্দসহ চালক আনিসুর রহমানকে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে ২৬ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের একটি বাসা থেকে উবার মোটরবাইক চালক সুমন হোসেনকে আটক করা হয়।
রোববার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার।
তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকেই উবার চালক ও ঘাতক কাভার্ডভ্যান চালককে আইনের আওতায় আনতে কাজ শুরু করে পুলিশ। ঘটনাস্থলের আশে-পাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দুর্ঘটনার স্পষ্ট কিছু পাওয়া যাচ্ছিল না।
‘‘বাইক চালক সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও পুলিশ যাওয়ার আগে ফোন বন্ধ করে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে সে যেই ঠিকানা দিয়েছিলো, সেই অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে জানা যায় ভুল ঠিকানা দিয়েছিলো
এছাড়া উবারের কাছে তার যে ঠিকানা ছিলো সেখানে খোঁজ নিয়েও সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সহায়তায় পরদিন ২৬ এপ্রিল ভোরে মোহাম্মদপুর থেকে বাইক চালক সুমনকে আটকসহ বাইকটি উদ্ধার করা হয়।
উবার চালক সুমনের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেলেও সে অনেক কিছুই আড়াল করার চেষ্টা করছিলো। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পেছনের একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ঘাতক কাভার্ড ভ্যানটির ফুটেজ পাওয়া যায়। ফুটেজে ভ্যানটির নাম্বার পাওয়া না গেলেও ‘ইনফো ফোর্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া যায়। পরে খোঁজ নিয়ে প্রতিষ্ঠনটির তেজগাঁও এলাকার অফিসে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অফিস থেকে ঘাতক চালক আনিসুরকে গ্রেপ্তার করা হয়।’’
বাইক চালক ও কাভার্ডভ্যান চালককে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে বিপ্লব কুমার বলেন: দু’জনই বেপরোয়া গতিতে ড্রাইভ করছিলেন। বাইকের চেয়ে যেহেতু কাভার্ডভ্যানের গতি বেশি, সেহেতু কাভার্ড ভ্যানটি বাইকটিকে ওভারটেক করার সময় ধাক্কা দেয়। তখনই বাইকের যাত্রী লাবণ্য রাস্তায় পড়ে যান এবং কাভার্ড ভ্যানের চাকায় পিষ্ট হন।
প্রাথমিকভাবে মূল অভিযুক্ত কাভার্ডভ্যান চালক আনিসুরকে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। উবার চালক সুমনকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের পরিপ্রেক্ষিতে তার অবহেলা অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
উবার কর্তৃপক্ষের গাফিলতির সমালোচনা করে বিপ্লব কুমার বলেন: ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে অসংখ্যবার উবারের কাছে তথ্য চাওয়া হলে তারা কোন ধরনের সহযোগিতা করেনি। কোন ব্যক্তির বিষয়ে যাচাই-বাছাই ছাড়া ভুল ঠিকানায় রেজিস্ট্রেশন করে ফেললো উবার কর্তৃপক্ষ। যার ফলে রাইডার সুমনে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হলো। যেকোনো ঘটনার পর অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আমরা দ্রুত চেষ্টা করি, কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের পদে পদে বাধা পেতে হলো।
‘‘এছাড়া, উবারসহ এসব রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকভাবে গাড়ি চালানোর জন্য চালকের শারিরীক ও মানসিক দক্ষতা রয়েছে কি না সেগুলোও যাচাই-বাছাই করে না। ওইদিন চালক সুমন বেপরোয়া গতিতে বাইক ড্রাইভ করছিলেন এবং অসৎ উদ্দেশ্যে বারবার ব্রেক করছিলেন।’’
গাফিলতির জন্য উবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন: ঘটনার আরো তদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় যারই গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যাক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
গত ২৫ এপ্রিল সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে রাজধানীর হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে দুর্ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক লাবণ্য নিহত হন। লাবণ্য শ্যামলী এলাকার নিজ বাসার সামনে থেকে উবারের বাইকে করে খিলগাঁও ছায়াবিথী এলাকায় যাচ্ছিলেন।
বেপরোয়া গতির বাইকটি হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে আসা বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যান বাইকটিকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় লাবণ্য বাইক থেকে পড়ে যান এবং কাভার্ডভ্যানের চাকায় চাপা পড়েন।
এরপর পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক লাবণ্যকে মৃত ঘোষণা করেন।