ভার্চুয়ালি কোভিড-১৯ রোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি ওয়েবিনার সিরিজ উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার। মঙ্গলবার এই ওয়েবিনার সিরিজের উদ্বোধন করা হয়। এই সিরিজের মাধ্যমে কোভিড-১৯ রোগ ব্যবস্থাপনার সেরা বা উত্তম চর্চা সংক্রান্ত জ্ঞান বিনিময় করার জন্য বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সংযুক্ত করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার উচ্চ-স্তরের পরামর্শ সভায় প্রণীত রূপরেখা অনুযায়ী নিরাপদ অর্থনীতির লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সহযোগিতা জোরদার করায় (স্ট্রেন্থদেনিং পাবলিক হেলথ কোঅপারেশন ফর এ সেফার ইকোনমি) অবদান রাখবে দুই পর্বের এই সিরিজ।
মঙ্গলবারের ওয়েবিনার যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি)। এই আয়োজনে সহযোগিতা করেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ইকো (ইসিএইচও) প্রকল্প। ইকো প্রকল্প হলো যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত দূর-শিক্ষণ ও অনলাইনের মাধ্যমে পরামর্শ প্রদানের একটি প্লাটফর্ম। এটি কোভিড-১৯ রোগীদের সেবাদান ব্যবস্থা উন্নত করার এবং সংক্রমণের বিস্তার হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোতে কর্মরত চিকিৎসক ও অন্যান্য সম্মুখসারির কর্মীদের জ্ঞান ও চিকিৎসার দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে গত এক বছর ধরে গৃহীত বহুবিধ (একাধিক) উদ্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার সে দেশের সরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে গত বছর থেকে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ৭৩ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা করেছে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে পরিচালিত দুই পর্বের এই সিরিজ ওয়েবনিয়ারের প্রথম পর্বে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশি স্কলারদের মধ্যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় প্রসার ও জোরদার করার লক্ষ্যে আমেরিকান ও বাংলাদেশি মেডিক্যাল পেশাজীবীদের একত্রিত করা হয়েছে। আজকের ওয়েবিনারে নন-আইসিইউ (আইসিইউ বা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তির দরকার নেই এমন রোগী)-ভিত্তিক কোভিড-১৯ রোগ ব্যবস্থাপনার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে এই সিরিজের দ্বিতীয় ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হবে ২৫ মার্চ, যেখানে আইসিইউভিত্তিক কভিড-১৯ রোগ ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ইউএসএআইডি ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকো প্রকল্প প্লাটফর্মের মাধ্যমে একটি ই-মেন্টরিং (অনলাইনভিত্তিক পরামর্শসেবা) কর্মসূচি চালু করতে অর্থায়ন করেছিল। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১,৫০০ জন বাংলাদেশি চিকিৎসক এই ভার্চুয়াল পরামর্শ অধিবেশনগুলোতে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা সেখানে তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন এবং বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন এবং এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তারা কোভিড-১৯ রোগ ও রোগী ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছেন। এ ছাড়াও ইউএসএআইডি বাংলাদেশি চিকিৎসকদের চিকিৎসা সংক্রান্ত জ্ঞান ও দক্ষতা হালনাগাদ (আপডেট) ও বৃদ্ধি করতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মিলে একটি অনলাইনভিত্তিক ইন্টারঅ্যাকটিভ সার্টিফিকেট কোর্স প্রণয়নের কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় রাষ্ট্রদূত মিলার আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে আয়োজিত এই ওয়েবিনার এবং এর মাধ্যমে যে মূল্যবান উচ্চ-পর্যায়ের মত ও জ্ঞান বিনিময় হবে তা গত পাঁচ দশক ধরে সমৃদ্ধ হওয়া আমাদের যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্বের বড় এক দৃষ্টান্ত। আমেরিকা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা অব্যাহত রেখেছে। আমরা বাংলাদেশের মহামারি মোকাবেলা প্রচেষ্টাতে ৭৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছি এবং আজ অবধি সঙ্কটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসার জন্য আমেরিকাতে তৈরি ১০০টি অত্যাধুনিক ভেন্টিলেটর প্রদান করেছি। আমাদের দুই মহান জাতি, আমাদের বৈশ্বিক অংশীদারদের সাথে মিলে এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হবে।
অন্যান্যদের সাথে এই ওয়েবিনারে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সভাপতি প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ টিটু মিয়া অংশ নিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার শুধু ইউএসএআইডির মাধ্যমে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশকে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে। ২০২০ সালে ইউএসএআইডি একাই বাংলাদেশকে ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা করেছে, যার মধ্যে প্রায় ৩৮ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের কোভিড-১৯ মোকাবেলা প্রচেষ্টাকে সহায়তা করা, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুযোগের সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নতি, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও গণতান্ত্রিক অনুশীলন বৃদ্ধি, পরিবেশের সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দৃঢ়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশিদের মানুষের জীবনমান বাড়াতে কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য।