সব জল্পনা কল্পনা, জরিপ মিথ্যা প্রমাণ করে হিলারি হেরে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০১৬তে। বাংলাদেশেও এবার এই নির্বাচনে অনেক মানুষের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে যা আগে কখনও দেখা যায়নি। বাংলাদেশের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী চেয়েছিল, হিলারি জিতুক। বিএনপি শিবিরে তো বিরাট উল্লাস ছিল। কারণ অনেকেই ভাবেন এবং কয়েকদিন ধরে প্রকাশ্যেই বলে বেড়াচ্ছিলেন যে, হিলারি মানেই ইউনুস। আর ইউনুস মানেই বিএনপি জামাত জোট। জমবে মজা সরকারের সাথে এবার। বিএনপি’র সমর্থকদের মাঝে ছিল বিজয় উৎযাপনের প্রস্তুতি। সেটা বড় না, ছোট সেই প্রশ্নে না গিয়ে বলি, সরকারী দলের সমর্থকরা ছলেন খুব শংকায়। ঢাকার বাতাস ছিল রাজনৈতিকভাবে গুমোট। বিষয়টি বুঝে তাই বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত দৌড়ে গিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী জেনারেল ওবায়দুল কাদের সাহেবকে বলে আসলেন যে, ‘যেই জিতুক মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে কোন পরিবর্তন আসবে না’।
ভিতরে কী এমন ছিল যার কারণে হিলারী হেরে গেলেন! অনেককে চোখের নোনা জলে ভেজালেন! তার একটা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে দেখা যাক। একজন সাধারণ সচেতন বাংলাদেশীর চোখে হিলারীর পরাজয়ের কারণসমুহ এভাবে সাজানো যেতে পারেঃ
(১) মার্কিনীরা মুখে মুখে সমঅধিকার বা মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা বললেও আসলে সেটা লিপসার্ভিস মাত্র বা বলা যায় মহিলাদের শোষণের নতুন কৌশল মাত্র। তাই তারা মহিলা কাউকে দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে চান নি। ভোটের ফল দেখে তাই মনে হয়।
(২) আইএসএর উত্থানের কারণে বাংলাদেশে বিপুল পরিমান হিন্দু জনগোষ্ঠী অত্যাচারিত হয়েছে, নিহত হয়েছে অনেকেই। ধর্ষিতা হয়েছে কত তা প্রকাশ করা হয়নি। তার প্রভাব বিদেশে অবস্থানরতদের মাঝে পড়েছে।
(৩) আইএসএর মদদদাতা হিসেবে হিলারীর নাম আসার পরে যুক্ত্ররাষ্ট্রের হিন্দু স্পম্প্রদায়ের লোকেরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। যারা আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বৃহত্তম অংশ।
(৪) আইএসএর মদদদাতা হিলারী এখন আইএস ধ্বংসে নেমেছে, তাতে মোসাদের বিপুল লস। তাই ইহুদীদের বিরাট অংশ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যারা আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশ বলে ধরা হয়।
(৫) ডক্টর ইউনুসের সাথে অনৈতিক সখ্যতাও মুক্তমনা আমেরিকান বাংলাদেশী বাঙ্গালীর সব ভোট পান নি হিলারী। কারণ সেখানে বিএনপি ঘরনার সবাই জান বাজি রেখে হিলারীর পক্ষে নির্বাচন করেছে।
(৬) যুব সমাজ নৈতিকতা বুঝতে চায় না। ধর্মের কথাও তারা শুনতে চায় না। ট্র্যাম্পের প্লেবয় ইমেজ তাদের আকৃষ্ট করেছে। তারা আমোদ-ফুর্তির সুযোগ বেশী পাবে এমন পরোক্ষ কাল্পনিক ম্যাসেজ তারা পেয়েছে।
(৭) পুরুষ শাসিত সমাজে ব্যাভিচারী নারীর চেয়ে ব্যাভিচারী পুরুষের গ্রহণযোগ্যতা বেশী থাকে, তাই হিলারীর পক্ষে ভোট কমে গেছে।
(৮) এফবিআই এর ই-মেইল ফাঁস করা দারুণ ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ছিল, এটা ভালো প্রভাবের কাজ করেছে ভোটের ফলাফলে।
(৯) অ্যাসেঞ্জের ফাঁস করা নথিতে আইএসএর মদদদাতা হিসেবে হিলারীর নাম আসার পরে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে যুক্ত্ররাষ্ট্রের মুক্তমনা মানুষেরা হিলারী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।
(১০) আইএসএর সহায়তায় সিরিয়া সীমান্ত দিয়ে কম দামে কেনা মার্কিন তেল ব্যবসায়ীরা মার্কিন সরকারের বর্তমান আইএস বিরোধী অবস্থানে অখুশি ছিল।
(১১) আইএসএর কাছে সিরিয়া সীমান্ত দিয়ে বেশী দামে অস্ত্র বিক্রি করা মার্কিন অস্ত্র ব্যবসায়ীরা মার্কিন সরকারের বর্তমান আইএস বিরোধী অবস্থানে অখুশি ছিল।
(১২) মার্কিনীদের মাঝে ফক্স নিউজ খুব জনপ্রিয়। ফক্স নিউজের বিশ্বাসযোগ্যতা মার্কিন জনগনের মাঝে অনেক বেশী। সেই ফক্স নিউজ হিলারীর বিপক্ষে ছিল।
(১৩) রিপাবলিকান সমর্থকরা ট্র্যাম্পের বক্তব্যে বিব্রত ছিলেন বটে কিন্তু ভোট দিতে বিরত ছিলেন না। তারা মুখ খোলেন নি বলে জরিপের ফল ভিন্ন ছিল যা মার্কিন ইতিহাসে বিরল।
(১৪) আগাম ভোটের সময় এবার বেশী ভোট পড়েছে, সেই সময় এফবিআই এর ই-মেইল কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়। এই সময় এবার অনেক বেশী ভোট পড়েছে এবং হিলারীর বিপক্ষে গেছে যা পরে আর কভার করা সম্ভব হয়নি।
(১৫) ডেমোক্রেটরা নিজেদের প্রভাবিত এলাকাকে প্রচারণায় অবহেলা করেছে, যাতে নেগেটিভ ইফেক্ট হয়েছে ভোটে। তাই ১৯২৮ সালের পরে এবারই প্রথম রিপাবলিকান কংগ্রেস, সিনেটসহ সরকারের সবস্তরেই বিপুলভাবে জয়ী হয়েছেন, যা মার্কিন ইতিহাসে বিরল ঘটনা।
(১৬) অশান্ত বিশ্বরাজনীতির কারণে আমেরিকানদের একটা অংশ শান্তির পক্ষে পরিবর্তন চেয়েছিল।তারা ভেবেছে, ট্রাম্প মুখে খারাপ কথা বললেও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মত বাস্তবে ভালো করবেন। এটা তার ভোটে জেতার কৌশল মাত্র।
(১৭) ওবামার নির্বাচনের সময়ের তুলনায় এবার আফ্রিকান আমেরিকানদের ভোট দানে অনীহা ছিল বেশী।
(১৮) রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়ানোর একটা সম্ভাবনা, শান্তিপ্রিয় আমেরিকানদের হিলারীর বিপক্ষে নিয়েছে। কারণ পুতিনের সংগে ট্র্যাম্পের সম্পর্ক বেশ ভালো।
(১৯) দেশের অর্থনীতি প্রশ্নে হিলারী উপর মার্কিনীদের আস্থার অভাব ছিল।
(২০) হিলারী খুব বদরাগী মহিলা, এমন ইমেজ অনেক মার্কিনীদের মাঝে বিরাজমান।
(২১) Michigan, Ohio, Pennsylvania and Wisconsin ইত্যাদি স্টেটের উন্নতির জন্য তাদের উপর বেশী গুরুত্ব দেওয়ার ট্র্যাম্পের নির্বাচনী অংগীকার ছিল, ইত্যাদি।
(২২) সীমান্ত এলাকার সাদা ভোটাররা এবার রেকর্ড সংখ্যায় ভোট দিয়েছে হিলারীর বিপক্ষে।
(২৩) ইদানিং কালোরা অনেক নির্যাতিত হয়েছে কিন্তু হিলারীর কালো প্রেসিডেন্ট কালোদের জন্য ভালো কোন কিছু করেন নি।
(২৪) হিলারী শিবির Wisconsin তে তেমন করে নজর দেয় নি।
(২৫) ট্র্যাম্পের টাকাও ছিল একটা বিরাট ফ্যাক্টর।
এর বাইরেও হয়তো আরো কোন কারণ থাকতে পারে। কিছুদিন গেলে তা পরিস্কার হবে সবার কাছে। এখন সব কিছুই ধুঁয়া ধুঁয়া লাগছে। তাই আজকে এইটুকুই থাক।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)