করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের পর্যটন খাতকে বাঁচাতে নতুন অর্থবছরের বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো।
২০২০-২০২১ সালের বাজেট নিয়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো কি ভাবছে, তা নিয়ে অনলাইনে প্রাক বাজেট আলোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ট্যুরিজম ইনোভেশন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে যেমন পর্যটনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বাজেট বরাদ্দসহ বিশেষ প্রণোদনার কথা বলেছে, তেমনি আশা অনুযায়ী পর্যটনের উন্নয়ন না হওয়ার জন্য যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা তুলে ধরেছে সংগঠনগুলো।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিডি ইনবাউন্ডের সভাপতি রেজাউল ইকরাম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ের অনেক ট্যুর অপারেটর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাদেরকে টিকিয়ে রাখতে হলে বাজেটে একটা বরাদ্দ থাকতে হবে। সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে থেকে পর্যটন আলোকিত হতে পারছে না বলে হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি খবির উদ্দিন আহমেদ লাইসেন্স ফিসহ বিভিন্ন সরকারি ফি মওকুফের পাশাপাশি বিশেষ প্রণোদনা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বর্তমানে ঋণ পাওয়ার জন্য আবেদন করা হলেও তা বিবেচনা না করে ব্যাংকগুলো তা ফেলে রাখছে বলে অভিযোগ করেন ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি।
ট্যুরিজম ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ হাবিব আলী জানান, করোনা পরিস্থিতিতে পর্যটন নিয়ে ব্যবসা করার চাইতে শুধুমাত্র বাঁচার জন্য সরকারের উপর মহলের নজর দিতে হবে। তবে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো আলাদা আলাদা দাবি তোলায় সরকারের কাছে তাদের চাহিদা গুরুত্ব পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন টিডাবের সভাপতি।
প্রশিক্ষিত জনবলসহ প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে কিছুটা হলেও ঋণ প্রণোদনা দরকার, না হলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আটাবের ঢাকা জোনের মহাসচিব জালাল উদ্দিন টিপু বলেন, করোনার কারণে অনেকে না খেয়ে মারা যেতে পারে এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া আহ্বান জানান।
তিনি মনে করেন এই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনা থাকতে পারে। তাই এই পর্যন্ত প্রণোদনা দিতে হবে। আর বাংলাদেশিদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সার্টিফিকেট লাগবে, এই বিষয়ে সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মোহাম্মদ রাফিউজ্জামান অনেকটা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, প্রতি বছর যা বরাদ্দ আসে তার ৯৫ শতাংশ চলে যায় সিভিল এভিয়েশনের জন্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণসহায়তাসহ কোন সহায়তা সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সরকার না দেখলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ১০৯টি সংগঠনের চলা কঠিন হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এত দিনেও পর্যটন খাত শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি না মেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে টোয়াবের সভাপতি বলেন, এ কারণে এই খাতের জন্য ঋণ মিলছে না। সিভিল এভিয়েশন ও পর্যটন মিলিয়ে না, আসন্ন বাজেট থেকে শুধু পর্যটনের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিলেই পর্যটন শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে জানান টোয়াব সভাপতি।
শেষ বক্তা হিসেবে আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাভেদ আহমেদও স্বীকার করেন বেশিরভাগ টাকাই সিভিল এভিয়েশন খাতে চলে যায়। ট্যুরিজম বোর্ডের জন্য বরাদ্দ থাকে মাত্র ৪০ কোটি টাকার মতো। ট্যুরিজমের একটা খারাপ সময় যাচ্ছে তারপরেও এই খাত এবং এর সঙ্গে জড়িত ৪০ লাখ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। এর জন্য বেড়ানোর বিষয়টাও গুরুত্ব দিতে হবে কারণ এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত বিষয়টা মনে রাখতে হবে।
করোনা পরবর্তী সময়ে কিভাবে পর্যটন শিল্প চলবে সে সম্পর্কে একটি পরিকল্পনার কাজ চলতি সপ্তাহে শেষ করে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে এবং একই সাথে ২০ বছরের জন্য ট্যুরিজমের জন্য মাষ্টার প্ল্যান করার কাজও চলছে যা আগামী বছরের জুন জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
পর্যটন সংগঠনগুলো এখনো আইডেন্টি ক্রাইসিস আছে এর জন্য সরকারী বেসরকারি সবার ব্যর্থতা আছে বলে মনে করেন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী। পর্যটন প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে জড়িত প্রশিক্ষিত লোকজনকে ধরে রাখতে এবং সেই সাথে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে এর জন্য প্রণোদনার দরকার আছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এই খাতের ক্ষতির কথাও তুলে ধরা হয়েছে। তবে প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বুঝাতে কিছুটা ব্যর্থতা আছে বলে স্বীকার করে ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও বলেন তারা এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে বোর্ড কয়েকটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে এর মাধ্যমে প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের কাছে কিছু টাকা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের উন্নয়নে কাজ চলছে।
এর জন্য সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাভেদ আহমেদ আশা প্রকাশ করেন আসন্ন বাজেট থেকে বরাদ্দ থাকবে পর্যটন খাতের জন্য।
আলোচনায় সঞ্চালক ডক্টর এ আর খানের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, পযটনের উন্নয়নের জন্য সর্বশেষ ভারত ২৫০০ কোটি টাকা, ভুটান ৩৩ কোটি টাকা, মালয়েশিয়া ২২০০ কোটি টাকা, নেপাল ১৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। আর আমাদের দেশে বরাদ্দ ছিলো মাত্র ৫১ কোটি টাকা।
সরকারের সদিচ্ছা থাকলে পর্যটনের সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব বলে তারা মনে করেন।