আজ ৭ মার্চ, আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের এক বছর পূর্ণ হওয়ার দিন। গেল বছরের ৮ মার্চ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) প্রথমবারের মতো ঘোষণা করেছিল ৩ ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে দু’জন ছিলেন ইতালি ফেরত। বাকি জন তাদেরই স্বজন।
সেদিন আইইডিসিআর- এর এমন ঘোষণায় হঠাৎ করেই বিশ্বের অন্যতম জনবহুল রাজধানী ঢাকার রাস্তাঘাট, অলিগলি মার্কেট জনশূন্য হয়ে পড়ে। আতঙ্কিত মানুষ দ্রুত যার যার ঘরে ফিরতে শুরু করে অজানা এক আশঙ্কায়। করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ এই ভাইরাসে প্রথম কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে আইইডিসিআর।
সেইদিন থেকেই মূলত মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে যায়। যদিও তার কয়েকদিন পর ২৬ মার্চ থেকে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নামানো হয় সেনাবাহিনীকে। এমনভাবে ৬৬ দিন ছুটি থাকার পর ৩১ মে সীমিত আকারে অফিস-আদালত ও কলকারখানা খুলে দেওয়া হয়।
তবে সেই ৬৬ দিন এবং পরের আরও কিছু দিন মানুষকে তাড়িয়েছে মৃত্যুর ভয়ে। বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসার অভাব, প্রিয়জনকে রাস্তায়-জঙ্গলে ফেলে আসা, করোনায় মৃত্যুর পর বাবা-মায়ের লাশের সৎকার না করে সন্তানের পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা মানুষের বিবেককে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে সেই কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছে মানুষ।
এই ঘটনাবহুল বছর শেষে সরকারি হিসাবে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জন। যদিও তাদের মধ্যে বেশির ভাগই সুস্থ হয়ে উঠেছে। আর মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৪৬২ জনের।
আমরা জানি, ২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উহানে সর্ব প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর তা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পুরো বিশ্বকে অচল করে দেয়। এখন পর্যন্ত পা্রয় ১২ কোটি মানুষকে সংক্রমিত করেছে। ২৬ লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। যদিও ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর তা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এখনো রূপ পাল্টে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টায় আসে করোনাভাইরাস।
বাংলাদেশে গত বছরের মে মাস থেকে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকে। তবে ডিসেম্বর থেকে সেই সংক্রমণ কমতে শুরু করে। বর্তমানে কিছুটা বাড়তে থাকলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে করোনা। বিশেষ করে গত মাসের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর।
এটা ঠিক করোনা একটি ব্যাপক সংক্রামক ভাইরস। আবার তা প্রতিরোধে ভ্যাকসিনও এসেছে; কিন্তু এখনো কোনো ভ্যাকসিনই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কতদিনের জন্য সুরক্ষা তৈরি হয়? তাই আমাদের অবশ্যই সচেতন ও সাবধান থাকতে হবে। কোনো রকম হেয়ালী করা যাবে না। তাহলে আবার স্বমহিমায় ফিরে আসতে পারে করোনাভাইরাস।