করোনাভাইরাস ডিজিজ বা কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় ভ্যাকসিন বা ওষুধ না থাকায় প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আপাত সাফল্য পাওয়া প্লাজমা থেরাপি শুরু হচ্ছে বাংলাদেশেও।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে (ঢামেক) আজ থেকে প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে করোনা চিকিৎসা শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে ঢামেকে।
প্রথম অবস্থায় করোনা পজিটিভ হয়েছিল এমন সুস্থ তিনজনের কাছ থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা হবে। এরপর আগামী ছয় মাস প্লাজমা প্রয়োগের সাফল্য বা এর কার্যকারিতা কেমন তা দেখা হবে।
যদি এতে ভালো ফল পাওয়া যায়, তাহলে ঢামেক আরও বেশি সংখ্যাক রোগীদের প্লাজমা থেরাপির আওতায় আনবেন। বর্তমানে এর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের জন্য সাত-আট জনের একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা হয়েছে।
প্লাজমা থেরাপি হলো, আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হওয়া রোগীর শরীরে এই ভাইরাস প্রতিরোধী এক ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেই অ্যান্টিবডি যুক্ত প্লাজমা সংগ্রহ করে করোনাভাইরাস আক্রান্ত অন্য রোগীর শরীরে প্রবেশ করিয়ে ভাইরাসটিকে মেরে ফেলা হয়।
ঢামেক হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ খান জানিয়েছেন, ‘তাদের হাতে যে পরিমাণ কিট আছে তা দিয়ে আজ পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করতে পারবেন। সেজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নীতিগত অনুমোদন নেওয়া হয়েছে।’
‘‘নতুন এ রোগে আক্রান্তদের সারিয়ে তুলতে এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের রক্তের প্লাজমা অসুস্থদের দেওয়ার চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ নানা দেশ।’’
জানা গেছে, ঢামেক হাসপাতালে যেসব কোভিড-১৯ রোগী আছেন, তাদের ওপরই আপাতত এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। এছাড়া ঢাকার আরও দু-একটি হাসপাতালে রোগীদের ওপর প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড় সেন্টার হবে ঢামেক হাসপাতালে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ থেকে যারা সেরে উঠেছেন তাদের আহ্বান জানানো হয়েছে প্লাজমা দিতে এগিয়ে আসার জন্য।
দাতার শরীর থেকে প্লাজমা সংগ্রহের জন্য একটি বিশেষ কিট প্রয়োজন হয়। এ ধরনের প্রতিটি কিটের দাম ১২ হাজার টাকা। প্লাজমাদাতার রক্তে অ্যান্টিবডির পরিমাণ জানতে যে পরীক্ষা করতে হয় সেজন্য স্পেন থেকে চারটি কিট আনার প্রক্রিয়া চলছে। প্রতিটি কিটের দাম পড়বে দেড় লাখ টাকা। একটি কিটে ৯০টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়।
বাংলাদেশে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা করার সম্ভাব্যতা দেখতে গত মাসের শুরুতে আগ্রহের কথা জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজির অধ্যাপক ডা. এম এ খান।
এরপর ১৯ এপ্রিল তাকে সভাপতি করে চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।