জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিশেষ কর্মকর্তা’র পদ বানিয়ে কোনরকম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগের ১২ নেতা নিয়োগে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তার উপর উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান যে কথা বলেছেন তাতে শিক্ষাবিদরা বিস্মিত।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ঢালাওভাবে ছাত্রলীগে নেতা-কর্মীদের নিয়োগ এবারই প্রথম নয়। মেসবাহউদ্দিন আহমেদ উপাচার্য থাকার সময়ও এমন ঘটনা ঘটেছে। তার সময়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন ছাত্রলীগের ২২ জন নেতা-কর্মী। এর বাইরে গত পাঁচ বছরে ছাত্রলীগের আরো ৯ জন নেতা-কর্মী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন।
বারবার এমন ঘটনার কারণ কী?
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মেসবাহ উদ্দিন অাহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: এ ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপ একটি বড় বিষয়। এছাড়া এখানে ছেলেগুলোর প্রতি সহানুভূতিরও একটা বিষয় কাজ করে।
‘এই ছেলেগুলো বিগত বছরগুলোতে অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তারা জেল খেটেছে, তারা জুলুমের শিকার হয়েছে। তার প্রতিদান স্বরূপ তাদের প্রতি একটিা সহানুভূতি কাজ করে,’ মন্তব্য করে তিনি বলেন: জেল খেটে অনেকের আবার চাকরির বয়সও শেষ হয়ে গেছে।
‘এ ছেলেগুলোকে চাকুরি না দেয়া হলে এরা যাবে কোথায়?’ প্রশ্ন তার।
শিক্ষাঙ্গনে এরকম পরিস্থিতি শিক্ষাবিদদের অবশ্য ভাবিয়ে তুলছে। প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন: একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এ ধরনের ঘটনা খুবই হতাশাজনক এবং অন্যায়ও বটে।
‘বিশেষ পদ সৃষ্টি করে যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে তাতে করে অন্যরা বঞ্চিত হচ্ছে।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা দেয়ার জন্য, চাকুরি দেয়ার জন্য নয় উল্লেখ করে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, জীবনে বেঁচে থাকার জন্য জীবিকা প্রয়োজন; তাই বলে অনৈতিক উপায়ে জীবিকার পথ তৈরী করে দেয়াটা খুবই অন্যায়।
‘এতে করে বঞ্চিতদের মধ্যে প্রতিনিয়তই হতাশা বাড়বে। প্রশ্নবিদ্ধ হবে শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা।’
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ছাত্রলীগ নেতাদের নিয়োগ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান বলেছেন: ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের চাকরি দিতে আমি বাধ্য। নিয়োগ পাওয়া ১২ জন কঠোর পরিশ্রমী নেতা-কর্মী ছিলেন। দুজন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা। এটাই তাদের বড় পরিচয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্র বা চাকরিপ্রার্থী বলতে কিছু নেই। এখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই চাকরি পাবেন। এটাই তাদের বিশেষ যোগ্যতা।
তার এরকম বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেসবুকে লিখেছেন: শিক্ষিত-বাঙালীর নজরকাড়া যে উন্নতি হয়েছে তা হলো, সে দারুণ সত্যবাদী হয়ে উঠেছে। নিজের অপকর্ম সম্পর্কে প্রকাশ্যে বলতে তার আর হৃৎপিণ্ড কাঁপে না।
এক স্কুল শিক্ষক লিখেছেন: ভিসিরাও কি শিক্ষক!