‘আমার বয়স ১০৪ বছর, ১০৮ নয়,’ জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সদস্যরা যখন তার সাথে তার বাঁশের ঘরে দেখা করতে যান তখন খুব সাবলীলভাবে বলেন তিনি। তার কার্ডে বয়সের ঘরে লেখা ১০৮ বছর। কিন্তু তার দাবি এটি ভুল। তার বয়স এর থেকে ৪ বছর কম।
সম্ভবত এরশাদ নামের এই মানুষটি কুতুপালং-বালুখালি ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি।
বর্মি সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে সপরিবারে তিনি মংডু থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমার বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।’
ইউএনএইচসিআর তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এরশাদের ছবিসহ তার কথাগুলো প্রকাশ করেছে। স্ট্যাটাসটিতে আরও বলা হয়েছে:
কুরআনের আয়াত লেখা একটি খাতা হাতে নিয়ে বসে তিনি বলতে থাকেন, ‘তারা আমাদের বলত: তোমরা এখানকার না, তোমরা ওই পাড়ের। এখন আমাদের কাছে কিছুই নেই, তারা আমাদের গবাদি পশুগুলোও খেয়ে ফেলেছে।’
‘বাড়িতে আমার সব শেষ হয়ে গেছে, আমার বিশাল বিশাল গাছ ছিল যেখানে আম ধরত, তারা সেগুলোকেও পুড়ে ফেলেছে।’
এরশাদ বেশ বৈচিত্র্যময় জীবন কাটিয়েছেন। মিয়ানমার যখন বার্মা ছিল, সেই ব্রিটিশ শাসনামলে তার জন্ম। তিনি খুব উচ্ছলতার সঙ্গে সময়টা মনে করতে থাকেন, ‘ব্রিটিশ শাসনামলেই আমরা ভাল ছিলাম।’ বার্মার স্বাধীনতা অর্জনের সময়কাল তার এখনো মনে আছে।
খুব অল্প বয়সেই এরশাদ ভারতে যান, সেখানে তিনি হিন্দি ও আরবি শেখেন। তিনি সৌদি আরবেও গিয়েছেন, সেখানে কয়েক বছর শিক্ষকতা করেন তিনি। দেশে ফিরে এরশাদ আবারও আরবির শিক্ষকতা শুরু করেন, পরে তিনি চলে যান রাজধানী রাঙ্গুন শহরে (বর্তমান ইয়াঙ্গুন)।
শিক্ষকতার পাশাপাশি এরশাদ প্রচারমাধ্যমেও কাজ করেন, তিনি রোহিঙ্গা ভাষায় প্রচারিত একটি জাতীয় রেডিওতে নিয়মিত কুরআন পাঠ করতেন। সেই রেডিও স্টেশনটিও কয়েক বছর পর বন্ধ হয়ে যায়।
এরশাদ মনে করেন, এই বার্ধক্যের মাঝেও তিনি শরণার্থী শিবিরে মানিয়ে নিতে পেরেছেন। ‘আমি এখানে আমার পরিবারের সাথে বাস করছি, আমরা ভাল আছি। এখানে আমরা সব মুসলিম একসঙ্গে বসবাস করছি, আমাদের কোনো সমস্যা নেই,’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি শুধু শান্তি চাই।’
স্ট্যাটাসে ইউএনএইচসিআর সদস্যরা বলেন: যখন কথা বলছিলাম, প্রতিবেশি ও আত্মীয়রা আমাদের চারপাশে একত্রিত হতে থাকে – কেউ কেউ কাছ থেকে দেখার জন্য পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দিতে থাকে। তারা বাড়িতে ফিরতে চান কিনা, এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘দেখা যাক, ভবিষ্যতে কী ঘটে।’
‘এখানে আশেপাশের মানুষ আমাকে খুব ভালবাসে, সমীহ করে। আমি যদি চলে যেতে চাই, তারা আমাকে যেতে দেয় না। তারা চায় আমি যেন এখানে থাকি,’ বলতে বলতে তার চোখ ছলছল করতে থাকে। ‘আমরা তবেই ফিরবো যদি তারা আমাদের নাগরিক হিসেবে কার্ড দেয়।’
তিনি বলেন, ‘তারা যদি এটি আমাদের আজকে দেয়, আমরা আগামীকালই ফিরে যাব।’