একটা অনলাইন পোর্টালে দেখলাম হেঁচকি থামানোর টিপস্ দেওয়া হয়েছে। আদার রস
খাওয়া বা এলাচ দিয়ে ফুটানো গরম পানি পান করা। হেঁচকি উঠার বৈজ্ঞানিক
অবৈজ্ঞানিক অনেক কারণ আছে। কারণ যাই হোক, হেঁচকি খুব বিরক্তিকর।
সম্প্রতি
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের উৎখাতের জন্য ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পরে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের হেঁচকি উঠেছিলো। হেঁচকি থামাতে তিনি দৌড়ে গেলেন রাশিয়ায়, পুতিনের কাছে। যাকে তিনি কিছুদিন আগেও খুব তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন। নিজের ভূখণ্ড আইএস এর দখলে দিয়ে তার মাঝে তেলের পাইপ লাইন বসিয়ে তেল ব্যবসা করার গরমে তাঁর অন্যরকম হেঁচকি উঠেছিল। তখন তাঁর পাশে ছিলো আমেরিকা।
অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত বলে যার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছিলো, তিনি ছিলেন ফেতুল্লা গুলেন। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র ফেতুল্লা গুলেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তিনি একজন ধর্মীয় নেতা। তার হিজমেত আন্দোলনের বিরাট সমর্থন আছে তুরস্কে। এরা নানা ধরণের স্কুল, কলেজ, এনজিও এবং ব্যবসা পরিচালনা করে। তাদের আছে অনেক মিডিয়া প্রতিষ্ঠান। তাই অভ্যুত্থানের পরে শুধু সেনা কর্মকর্তা নয় অনেক স্কুল শিক্ষককেও চাকরী থেকে ছাঁটাই করা হয়েছিলো। অন্য পেশার লোকদেরও চাকরী থেকে ছাটাই করে, গ্রেফতার করা হয়েছিলো, সে খবর মিডিয়ায় এসেছে।
কিন্তু ফেতুল্লা গুলেনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে কয়েক বছর আগে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান কঠোর সব ব্যবস্থা নেন হিজমেত আন্দোলনের বিরুদ্ধে। অভ্যুত্থানের পেছনে এদের হাত ছিল বলে অভিযোগ করেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এবং তার দলের নেতারা। তবে ফেতুল্লা গুলেন জোর গলায় তা অস্বীকার করেছেন। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান আমেরিকার কাছে ফেতুল্লা গুলেনকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে বললে আমেরিকা মাথা নাড়ান ডানে বামে, মানে ক্রিকেটের আম্পায়রের নো আউটের ইংগিতের মতো। তখন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের হেঁচকির মাত্রা বেড়ে যায়। অমনি তিনি আর দেরি না করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে গিয়ে ‘হামু’ দেন; যাকে বলে অনেকটা ষষ্টাঙ্গে প্রণাম। ভাবটা এমন,‘ক্ষ্যামা করে দেন বাবু, ভ্রম হয়ে গেছে। আপনার যুদ্ধজাহাজ ফেলে মহাঅন্যায় করে ফেলেছি। এবারের মত মাফ করে দেন গুরুজি। আমি আমার ভূখণ্ড থেকে আইএসকে তাড়িয়ে দেব। চুরি করে তেল বেচব না আর’।
অপরদিকে আমেরিকার কথা মনে করে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের হেঁচকি কিন্তু তখনো থামেনি তাই আমেরিকান সেনাদের সাথে মিলে মিশে অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সেনারা, আইএস নির্মূলে।
উপরের কিছু কথা হাল্কা কাল্পনিক হলেও যে অনেকটাই সত্যি তাঁর প্রমান হলো কোন রক্তপাত ছাড়াই তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে আইএস দখলে থাকা দু’টি গ্রাম আইএস মুক্ত হয়েছে তাঁর খবর মিডিয়ায় এসেছে ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে। আসলে দু’টি গ্রাম দিয়ে পাইপে তেল আসতো তুরস্কের মধ্যে, তা বিক্রি করে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানরা অনেক টাকা কামাতেন। আর চুরি করে তেল বেচার সেই কাজে বাঁধা দেওয়ায় পুতিনের যুদ্ধ বিমান ফেলে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সেনারা। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের হেঁচকি একটু হলেও থেমেছে এখন, রাশিয়া আর আমেরিকার ‘ইয়ে খেয়ে’। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান পল্টি খেয়েছেন এখন, হেঁচকি থামাতে।
আমাদের দেশের কিছু পেশাজীবী আছেন যারা প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের মত অবৈধ তেলের কারবারে জড়িত মনে হচ্ছে। কারণ মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হবার পরে তাঁদের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের হেঁচকির মত হেঁচকি উঠেছে। তাই নানা দিকে, নানা মতে ঘুরে ফিরছেন। নানাজনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন, নানা ভাবে।
পত্র-পত্রিকায় সরব এঁদের একজন শিক্ষক, একজন এক সাপ্তাহিকের সম্পাদক, আর একজন এনজিও ব্যবসায়ী। একজন ১৯৭১ সালে ছিলেন চৈনিক বাম। যারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে পর্যন্ত নিজেদের দলের নামের আগে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ লিখতেন। একজনের তখনো হয়তো খাত্নার বয়স হয়েছিলো কি না সন্দেহ। আরেকজন ছিলেন কিশোর। এঁদের এখন মুক্তি যুদ্ধের চেতনার চরম হেঁচকি উঠেছে। নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শেখাচ্ছেন জাতিকে। এরদোয়ানের হেঁচকির মত এঁদের হেঁচকি কবে থামবে বা কে থামাবে তা জানি না। তবে ছোট বেলায় আমাদের হেঁচকি উঠলে বড়রা একটা অভিনব কৌশল নিতেন। সেটা এখানে একটু বলা যেতে পারে।
শৈশবে আমাদের কারো হেঁচকি উঠলে আমাদের দাদী বলতেন, ‘এই তুই নাকি গতকাল ঋষি পাড়ায় গিয়ে মরা গরুর মাংস রান্না খেয়্যেছিস’? আর যায় কোথায়। অমনি হেঁচকি শেষ। ভয়ে কান্না কান্না সুরে বলতাম। না দাদি আমি তো ঋষি পাড়া চিনিই না, কেমন ক’রে মরা গরুর মাংস রান্না খাবো’। আমরা কান্না শুরু করার পরে দাদি মুচকি মুচকি হাসতেন। পরে বলতেন না, ‘আমি মনে হয় ভুল শুনেছিলাম’। পরে কাছে নিয়ে আদর করে দিতেন। এখন বুঝি আসলে এটা ছিল হেঁচকি থামানোর সফট্ কৌশল।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল
আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)