গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল আজকে প্রকাশিত হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের যে রীতি শিক্ষামন্ত্রণালয় তৈরি করেছিল, এবার তাতে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। বিশ্বব্যাপী মহামারীর চেয়েও শক্তিশালী রূপে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফল প্রস্তুত করতে পারেনি তারা।
করোনাভাইরাস শুধু ফলাফলেই বিলম্বের কারণ হয়নি। শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে আনন্দ আর উৎসবের এই দিনটিতেও বড় বাধা হয়ে এসেছে। আগের বছরগুলোতে আমরা দেখেছি, ফল প্রকাশের দিন প্রতিটি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাজসাজ রব উঠে। ড্রাম, ঢোলসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে উৎসবে মেতে উঠে শিক্ষার্থীরা। বিজয়ের আনন্দে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে নেচে-গেয়ে উঠে। কখন আবার নিজেদের মুখে রঙ মাখিয়ে আরও রাঙিয়ে তোলে দিনটিকে।
আবার অভিভাবকরা সন্তানের সাফল্যে ছোটেন মিষ্টির দোকানে। প্রতিবেশী থেকে শুরু করে পরিচিতদেরকে মিষ্টি মুখ করান। দোকানে এতোই চাপ থাকে যে, আগেভাগে না গেলে মিষ্টিও ফুরিয়ে যায়। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে সেসবের সুযোগ ছিল না। তাই তাদের কাছে ফিকে হয়ে উঠে আনন্দের দিনটি।
তাছাড়া আগে থেকেই শিক্ষাবোর্ডগুলো জানিয়েছিল, অন্য বছরের মতো এবার কোনো উদযাপনের মাধ্যমে ফল প্রকাশ করা হবে না। ফলের ভিড় করা যাবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। আগে থেকে মোবাইল রেজিস্ট্রেশন বা অনলাইনে ফলাফল সংগ্রহ করার কথা বলে দেওয়া হয়।
তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে ঘরবন্দী অবস্থায় স্কুলজীবনের শেষ ধাপের সাফল্য জানতে হয়েছে তাদের। যদিও গত বছরের তুলনায় এ বছর গড় পাসের হার কিছুটা বেশি। ৮২.৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে এবার। গেল বছর তা ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। সাফল্য এসেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও। গত বছরের তুলনায় ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে (১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। আগের বছর তা ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন)।
গত কয়েক বছরের ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রেখেছে মেয়েরা। এবারও পাসের হার এবং জিপিএ-৫ পাওয়ার দৌড়ে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে তারা। মোট জিপিএ-৫ পাওয়া ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭০ হাজার ১৪৪ জনই ছাত্রী। তবে সার্বিক বিবেচনায় প্রায় ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থী সফলভাবে তাদের স্কুল জীবন শেষ করতে পেরেছে; এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য।
করোনাভাইরাসের এই সময়ে আজকের সফল শিক্ষার্থীরা সহপাঠীদের সাথে আনন্দ-উৎসব না করতে পারলেও তারাই দেশের ভবিষ্যত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললেও সুন্দর আগামীর জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। আমরা মনে করি, সময়টা এমন থাকবে না। একদিন আবারো সবকিছু স্বাভাবিক গতিতে চলবে। সেদিন যেন তারা পিছিয়ে না পড়ে, অভিভাবকদেরও সেইদিকে নজর রাখতে হবে।