২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা এবং দিনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে পালনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবের আলোচনায় সংসদে ৭১’র হানাদার বাহিনীর চালানো হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৭ মার্চ ঢাকা জুড়ে কারফিউ তুলে নেওয়ার পর শেখ হাসিনা ঢাকার রাস্তার বেরিয়ে যে বিভৎসতা দেখেছিলেন তার বর্ণনা সংসদের সামনে তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন: ‘আমাদের ওপর হামলা হতে পারে এ আশংকায় আমরা বার বার বাসা বদল করছিলাম। ২৫ মার্চ রাতে আমি-রেহেনা ধানমণ্ডির ১৫নং রোডের একটি বাসায় অবস্থান করছিলাম। খুব কাছ থেকে শুনেছি পিলখানা থেকে ছুটে আসা গুলির আওয়াজ এবং মানুষের আর্তচিৎকার।
২৬ তারিখ কারফিউ শেষ হওয়ার পর ২৭ তারিখ আমি ঢাকার রাস্তায় বের হই। চারিদিকে শুধু মানুষের লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মিরপুরে গিয়ে দেখি বস্তিতে আগুন লাগানো হচ্ছে। আগুনের ভয়ে যখনই মানুষ বাইরে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে, তাদের ওপর গুলি করা হচ্ছে। ওই সময়ের বিভৎসতা বলে বোঝানো সম্ভবনা।’
শহীদের সংখ্যা নিয়ে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল মিথ্যাচার করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন: ‘শেরপুরের একটি গ্রাম ছিলো সোহাগপুর। স্বাধীনতার সময় ওই গ্রামের একটি পুরুষকেও বাঁচতে দেওয়া হয়নি। যার নাম পরে বিধবাপুরে পরিণত হয়েছে।
নারীদের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা উল্রেখ করে প্রদানমন্ত্রী বলেছেন, নারীদের ক্যাম্পে আটকে রেখে দিনেরপর দিন নির্যাতন ধর্ষণ করা হয়েছে। অনেক নারী সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতো। পরে হানাদাররা তাদের শাড়িও পরতে দিতো না। শুধু পেটিকোট পরিয়ে রাখা হতো। যাতে করে তারা আত্মহত্যা না করতে পারে। যেখানে নিয়াজি-ই গণহত্যার কথা স্বীকার করে গেছে, সেখানে তাদের রেখে যাওয়া কিছু দোসর এটা নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।’
স্বাধীনতার পর আমরা কি দেখেছি? যেসব মেয়ে প্রেগনেন্ট হয়ে পড়েছিলো, জাতির পিতা বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে তাদের চিকিৎসা করিয়েছেন। যার অ্যার্বসন করা সম্ভব ছিলো করিয়েছেন। আবার তাদের বিয়েও দিয়েছেন। অনেক সময় ওই মেয়েদের পরিবার তাদের নিতে রাজি ছিলো না। নিজে অভিভাবক হয়ে তাদের বিয়ে দিয়েছেন।
২৫ মার্চ রাতের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন: আমরা জানতাম রাত একটার দিকে হানাদাররা বাঙালির ওপর চড়াও হবে। কিন্তু, সাড়ে ১১টার দিকেই তারা নৃশংসতা শুরু করে। তারপরও জাতির জনকের আদেশ মতো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঢাকার বিভিন্ন অংশে ব্যারিকেড তৈরী করে।
প্রথমে তারা পিলখানা, রাজারবাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রনিবাসগুলোতে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। চারদিক থেকে হামলার খবর আসছিলো। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বাঙালীর কাছে পৌছে গিয়েছে।
আমরা বাসায় সকলে চিন্তিত ছিলাম। জাকির খান নামে একজন এসে আমাকে এবং রেহেনাকে ৩২ নং এর বাড়ি থেকে সরিয়ে নেয়। আমরা ধারণা করছিলাম আমাদের সবাইকে মেরে ফেলা হবে। কামালরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছে। দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছে।
পুরো ঢাকায় তখন শুধু ট্যাঙ্ক আর গুলির আওয়াজ।রাত একটার দিকে খবর পেলাম বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর ২৮ মার্চ তারা বাবাকে পাকিস্তানে নিয়ে যায়।
গণহত্যা দিবস পালনে সংসদের সর্বসম্মত সমর্থন চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আজ আমরা যদি এতোটুকু করতে পারি, জাতির পিতা, আমরা মা এবং ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মা শান্তি পাবে।’
আলোচনা শেষে সংসদে কণ্ঠ ভোটে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি পাশ হয়। প্রস্তাবটি পাস হওয়ায় এখন থেকে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস জাতীয় ভাবে পালিত হবে। এর পাশাপশি দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।