কোথায় যেয়ে থামানো যাবে শ্রীলঙ্কাকে? লক্ষ্যটা কততে আটকে রাখতে পারবে বাংলাদেশ? তামিম-সাকিবরা ঠিকঠাক তীরে নোঙর ফেলতে পারবেন তো? ইতিহাসের দুয়ার কতটা দূরে? ১৩৯ রানের লিড আপাতত স্বাগতিকদের। হাতে মাত্র ২ উইকেট। মুশফিকদের দারুণ একটা ঘুম না হওয়ার কোন কারণ নেই! কিন্তু শততম টেস্টে জয়ের রোমাঞ্চ তাদের ঘুমাতে দেবে কি? ঘুম যে আসবে না লাল-সবুজের সীমানাজুড়েও।
এমন নয় আগে কখনো এহেন পরিস্থিতি নিয়ে দিন শেষ করেনি বাংলাদেশ। কিন্তু এবার বেশি করেই স্বপ্নটা গাঢ় হচ্ছে। শততমের মাইলফলকে জয়ের মাত্র চতুর্থ দেশ হিসেবে নাম লেখানোর গৌরবকে ছোঁয়ার অপেক্ষায়। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাশে বসা হবে কিনা সেটি সময়ের হাতেই তোলা থাকছে। তার আগে পরিসংখ্যান কিন্তু কথা বলছে পক্ষ-বিপক্ষ দুই সুরেই।
পি সারায় যে কোন সুখস্মৃতি নেই বাংলাদেশের। গলে নামার আগে দুর্দান্ত এক ড্রয়ের স্মৃতি সঙ্গী হয়েছিল। যেটি অনুপ্রেরণা হতে পারেনি। পি সারায় সঞ্জীবনী নেওয়ার মত কোন স্মৃতিই নেই। এই মাঠে আগে খেলা তিনটি টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল টাইগাররা।
২০০২ সালে ইনিংস ও ১৯৬ রানের বড় ব্যবধানে হার। ২০০৫-এ ইনিংস ও ৬৯ রানে, আর ২০০৭ সালে ইনিংস ও ৯০ রানে। শেষ ম্যাচটিতে আবার প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৫.২ ওভারে ৬২ রানে অলআউটের লজ্জায় ডুবতে হয়েছিল। সেই মুরালিধরন-মালিঙ্গারা নেই, তবে ব্যাটিংয়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার চিরায়ত রোগটা আছেই। গলে আগের ম্যাচেই সুযোগের সিরিজে পরাজয়ের ক্ষতে শুরু। ব্যাটসম্যানদের সেই ছুঁড়ে আসার মিছিলের কারণেই।
পি সারাভানামুত্তু স্টেডিয়ামে হওয়া ১৯টি টেস্টের ১৫টিতেই ফল হয়েছে। যার তিনটি ইনিংস ব্যবধানে। তিনটির সঙ্গেই জুড়ে আছে বাংলাদেশের নাম। এই মাঠে তাই অতীতে কোন সুখস্মৃতি রোপণ করা নেই। ভবিষ্যতের জন্য কালের গর্ভে কিছু জমিয়ে রাখতে রোববারই সেটার রোপণ শুরু করার মোক্ষম সুযোগ!
তবে নিজেদের না হলেও কিছু অতীত রেকর্ড বাংলাদেশের পালে হাওয়া দিতে পারে। উজ্জীবিত করতে পারে। এই মাঠে যে ৩৫২ রান তাড়া করেও জয়ের রেকর্ড আছে। ২০০৬ সালে, সাউথ আফ্রিকার ছুঁড়ে দেওয়া লক্ষ্যটা শ্রীলঙ্কাই তাড়া করেছিল। চতুর্থ দিনে শুরু করে পঞ্চম দিনের লাঞ্চের কিছুপরই জয়। এই মাঠে ২০১০ সালে ভারতের সামনে শ্রীলঙ্কা অবশ্য ২৫৭ রানের লক্ষ্য দিয়েও পার পায়নি।
এই মাঠে ১৯ ম্যাচে খেলে ৯টিতে জয় আছে শ্রীলঙ্কার। ৪টি ড্র, ৬টি হার। পরিসংখ্যান স্বাগতিকদের পক্ষে হেলে থাকলেও অনুপ্রাণিত হওয়ার মত আরো তথ্য পাচ্ছে বাংলাদেশ। চতুর্থ ইনিংসে পি সারায় ২৫০-এর উপরে ইনিংস আছে তিনটি। যার দুটিই সফরকারী দলের। এই মাঠে ২৪৪ রানের নিচে লক্ষ্য দিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি কোন দলই। শ্রীলঙ্কাকে রোববার দ্রুত গুটিয়ে দিতে পারলে তাই অনেক সম্ভাবনার দুয়ারই খোলা থাকছে।
মঞ্চ প্রস্তুতই আছে, বোলিংয়ে তাতে সুঅভিনয় করে নায়ক হয়ে উঠেছেন সাকিব-মোস্তাফিজ। এবার তামিম-মুশফিকদের পালা। পি সারা যে ডাকছে শততম টেস্টের মাইলফলক ছুঁতে। মন খারাপ করার মতো পরিসংখ্যানগুলো ঢেকে দিতে বাংলাদেশের সঙ্গী হোক আত্মবিশ্বাস। তাতে হয়তো ঘুমহীন অপেক্ষার রজনী শেষে মিলবে স্বপ্নের ভোর, যা পরিণতি পাবে গোধূলির আগেই।