১২ আগস্ট পবিত্র ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে ঈদযাত্রায় আবারও ভোগান্তিতে পড়েছে ঘরমুখো মানুষ। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস-প্রাইভেট কারসহ নানা বাহন যেমন আটকে আটকে চলছে, তেমনি বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে চলাচল করা ট্রেনগুলোতে দেখা দিয়ে মারাত্মক বিপর্যয়। তবে দেশের অন্যঅঞ্চলগুলোর মহাসড়কে মোটামুটি গতিতে চলছে যানবাহন।
গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবসের পরপরই রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে যেসব বাহন ওইপথে আছে, তারা দূরত্বভেদে কমপক্ষে ৬/৭ ঘন্টা অতিরিক্ত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে শুরু করেছেন জনগণ। শুক্রবার সকাল থেকেই পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে, ওই মহাসড়কে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। শিশু-নারীসহ সাধারণ জনগণ সীমাহীন ভোগান্তির মুখোমুখি হয়েছে।
আর রেলপথে এবারের পরিস্থিতি কিছুটা অন্যরকম। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বে একটি ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ার কারণে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপরে প্রায় ৩ ঘন্টার চেষ্টায় বগি উদ্ধার ও লাইন চলাচলের জন্য সাময়িকভাবে ঠিক করা হলেও অতিরিক্ত যাত্রীচাপের কারণে এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি রেল চলাচল। সেতুর দুইপার্শ্বে ১০ থেকে ১২টি ট্রেন কমপক্ষে ৪ থেকে ৬ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে অপেক্ষায়। স্বাভাবিকভাবে এর প্রভাব ফিরতি ট্রেনগুলোতেও দেখা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে এবারে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রুটে রেলপথের ঈদযাত্রায়।
যানজটের কারণ হিসেবে ওইমহাসড়কের কিছু স্থানে নির্মাণ কাজকে দায়ী করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুতে ধীরগতিতে টোল সংগ্রহকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। শুক্রবার দুপুরের দিকে কয়েক ঘন্টা টোল গ্রহণ করাও বন্ধ ছিল। জ্যামে আটকে থাকা ভুক্তভোগী জনগণ এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ক্রমাগত ক্ষোভ ও আকুতি জানাচ্ছে। বিষয়গুলো দেখে আমাদের মনে হয়েছে, বঙ্গবন্ধু সেতুতে ঈদযাত্রার সময়ে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা টোল আদায় করা যায় কিনা, কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখতে পারেন।
বন্যা ও বর্ষার স্বাভাবিক বৃষ্টির কারণে সড়ক-মহাসড়ক কিছু নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে সড়ক কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন দায়িত্বশীলরা সাময়িক সংস্কার করেছে। এছাড়া চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে চলায় সবমিলিয়ে ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রতি ঈদের আগেই দায়িত্বশীলদের যে প্রতিশ্রুতি, তা যাত্রাপথে প্রতিফলিত হয় না। দেখা দেয় সেই পুরাতন সমস্যা, আর ঈদ পেরিয়ে গেলে আবারও গুরুত্ব হারায় বিষয়গুলি। এভাবেই দেখতে দেখতে আরেক ঈদ চলে আসে। এই দেখা-না দেখার চক্র থেকে বের হওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি। আর ট্রেনের এবছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ও কারণগুলো নির্নয় করে ব্যবস্থা নেয়াও দরকার। আমাদের আশাবাদ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।