আধুনিক বাজার ব্যবস্থাপনা ই-কমার্স একটি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হিসেবে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের দেশে দেশে। এতে ভোক্তাদের পণ্য কেনার সময় পছন্দ অর্থের সাশ্রয় ঘটেছে। আবার আকর্ষণীয় ছাড়ে বিভিন্ন পণ্য কিনতে পারা সাধারণ ভোক্তারা এইদিকে ঝুঁকছে। কিন্তু সব বিষয়ের মত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট যেন ভিন্ন। এখানে এখন ই-কমার্স একটি আতংকের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে সাম্প্রতিক সময়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযান চলছে। চলছে ধরপাকড়। অনেকে হয়েছেন কারাবন্দী, অনেকে পলাতক। অনেকে গ্রাহক হয়েছেন নিঃস্ব। চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের সংখ্যা বেড়েছে আট হাজারের বেশি। এসব অভিযোগের ৯০ শতাংশই ঢাকাকেন্দ্রিক। একই সঙ্গে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে অনেক।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জুন মাসে গ্রাহকেরা অভিযোগ এনেছিলেন ১৮টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১টি। অভিযোগের বেশিরভাগই ইভ্যালি ও ই–অরেঞ্জের বিরুদ্ধে। এসব ই-কমার্স ওয়েবসাইটের বাইরে অসংখ্য ফেসবুক পেজও রয়েছে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি লাফিয়ে বেড়েছে অভিযোগের সংখ্যা। সেপ্টেম্বর শেষে এ অভিযোগের সংখ্যা হয় প্রায় ২২ হাজার। জুন পর্যন্ত অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় রয়েছে ইভ্যালি, দারাজ, সহজ, আজকের ডিল, ফুডপান্ডা, চালডাল, প্রিয়শপ, ফাল্গুনী, অথবা, উবার, পাঠাও, বিক্রয়, নিরাপদ, ই–অরেঞ্জ, রকমারি, ধামাকা শপিং, আদিয়ান মার্ট ও আলেশা মার্ট। সেপ্টেম্বরে তালিকায় যোগ হয় আরও ২৩টি প্রতিষ্ঠানের নাম— মনোহর, দালাল প্লাস, কিউকম, পিকাবু, পাফজি,আলাদিনের প্রদীপ, মীনা ক্লিক, বাবুই, ব্যাকপ্যাক, আলি টু বিডি, সেলমার্ট, গ্যাজেট মার্ট, বিডিটিকেটস, সাবু শপ, আমারি, শপআপ, সিরাজগঞ্জ শপ, কমপ্লেক্স ডটকম, রাজারহাট, বিডিশপ, চাহিদা ইশপ, আনন্দের বাজার ও বুমবুম।
গত ১৭ আগস্ট ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে রাজধানীর গুলশান থানায় একটি মামলা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, মাসুকুর রহমান, আমানুল্লাহ, বীথি আক্তার, কাওসারসহ অন্যরা গা ঢাকা দেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া একই থানায় প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের আরেক মামলায় ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল ও তার স্ত্রী চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে র্যাব। মামলা হয় আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে, গ্রেপ্তারও হন অনেকে। নামকরা ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেদের অফিস বন্ধ রেখেছে, রয়েছে কিছু ঠিকানাবিহীন প্রতিষ্ঠানও।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন: প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিশ জারি করা হচ্ছে। কিন্তু অফিস বন্ধ থাকায় স্বাভাবিকভাবেই নোটিশগুলো ফেরত আসছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভোক্তারা ওয়েবসাইটের পণ্যের ক্রয়সংক্রান্ত শর্ত না বুঝেই পণ্যের অর্ডার দেন। এতে প্রতারণা করার সুযোগ তৈরি হয় এবং সমাধান কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
দেশ ডিজিটাল হচ্ছে সব ক্ষেত্রে আর বাড়ছে ডিজিটাল প্রতারণা। বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের বিভিন্ন পণ্য কেনার জন্য প্রলোভন দেখিয়ে স্বর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। আমরা মনে করি সরকারের এই খাতটিতে জরুরিভাবে মনোযোগ দেয়ার দরকার। কারণ এই ব্যবসায়িক ফাঁদে শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হয়। সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিষ্ঠান বা তাদের মালিকেরা শেষ পর্যন্ত নিরাপদেই থাকেন। সরকারে উচিৎ এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত নজরদারি বাড়ানো।