ছোটপর্দার জনপ্রিয় নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু। যার হাত ধরে ধারাবাহিক নাটকে অন্য এক মাত্রা যোগ হয়েছিলো। নিজের হাতে নির্মাণ করা ‘গহর গাঁছি’ ‘রঙের মানুষ’, ‘ব্যস্ত ডাক্তার’, ‘কাছের মানুষ’, ‘ভবের হাট’র মতো নাটক দর্শকদের জন্য উপহার দিয়েছেন। গ্রামীণ সমাজের পটভূমি নিয়ে নাটক নির্মাণ করে তিনি পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা আর আকাশ ছোঁয়া তারকাখ্যাতি।
তারই ধারাবাহিকতায় জনপ্রিয় এ নির্মাতা গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মাণ করেছেন নতুন ধারাবাহিক ‘সোনার পাখি ও রূপার পাখি’।
চ্যানেল আই অনলাইনে একান্ত এক সাক্ষাতকারে সালাউদ্দিন লাভলু তার নতুন এ ধারাবাহিক নিয়ে পাঠকদের জন্য বলেছেন জানা-অজানা কথা। অারও জানিয়েছেন নিকট ভবিষ্যতে সিনেমার নির্মাণের পরিকল্পনা।
আগামী ১২ নভেম্বর থেকে সপ্তাহের প্রতি শনিবার ও রোববার রাত ৭.৫০মিনিটে চ্যানেল আইতে প্রচার হবে নতুন এ ধারাবাহিক।
চ্যানেল আই অনলাইন: নতুন ধারাবাহিক ‘সোনার পাখি রূপার পাখি’ গল্প সম্পর্কে কিছু বলুন?
সালাউদ্দিন লাভলু : ‘সোনার পাখি রূপার পাখি’ আমার অন্যান্য নাটকের মতোই গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত। কিন্তু অন্যসব নাটক থেকে এই নাটকটি একটু আলাদা। কারণ আগের নাটকগুলো সম্পূর্ণ কমেডিয়ান নির্ভর ছিলো যদিও তাতে একটি করে বার্তা দেওয়া হতো। আর এ নাটকটিতে ওই রকম কমেডি নেই।
‘সোনার পাখি রূপার পাখি’ একটি পরিবারের গল্প। যে পরিবারের মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজ, আমাদের শৈশব, পারিবারিক মূল্যবোধ, আমরা যে যৌথ পরিবারের বড় হয়েছি সেই গল্পই আমি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।
চ্যানেল আই অনলাইন: এ ধারাবাহিকে নতুন কোন বার্তা আছে?
সালাউদ্দিন লাভলু: এ ধারাবাহিকে বিশেষ এক বার্তা দেওয়া হয়েছে আমাদের কৃষি সভ্যতাকে নিয়ে। একসময় আমরা কৃষির ওপর নির্ভর ছিলাম। সেই কৃষি কাজকে দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এ নাটকের প্রধান চরিত্র। তিনি কৃষি কাজ করে থাকেন। কৃষি কাজ যে একটা দেশের জন্য, সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে।
চ্যানেল আই অনলাইন: ধারাবাহিকের নাম ‘সোনার পাখি রূপার পাখি’ কেন?
সালাউদ্দিন লাভলু: নামটা রাখার কারণ হলো সোনা বলতে ভালো মানুষকে বোঝানো হয়েছে আর রূপা বলতে খানিক মন্দ মানুষকে বোঝানো হয়েছে। আর পাখি শুনতে সবারই একটু ভালো লাগে তাই নাটকটির নাম ‘সোনার পাখি রূপার পাখি’।
চ্যানেল আই অনলাইন: নতুন ধারাবাহিক নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কতটুকু?
সালাউদ্দিন লাভলু: এমনিতেই আমাদের দেশের অনেক চ্যানেল, অনেক নাটক, অনেক বিজ্ঞাপন পাশাপাশি মানুষের জীবনের ব্যস্ততা সবকিছু মিলিয়ে বাস্তবতা হলো মানুষ নাটক খুব কম দেখছে। সেই বাস্তবতা যদি আমি মাথায় রাখি তাহলে মানুষ কতটা দেখবে তা জানি না।
কিন্তু কেউ যদি প্রথম দু’তিন পর্ব দেখে তাহলে পরে তাদের মধ্যে একটা ভালো লাগা তৈরি হবে। অাসলে আমার এ নাটকটি গল্প নির্ভর। টেলিভিশনে বেশির ভাগ নাটক হয় চরিত্রের ওপর। কিন্তু ‘সোনার পাখি রূপার পাখি’ গল্প নির্ভর নাটক। টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন কমিয়ে ঠিকঠাক মতো দেখাতে পারলে আমি আশাবাদী দর্শক দেখতে চাইবে।
চ্যানেল আই অনলাইন: আগের ধারাবাহিকে চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম ছিলেন এবারো কি তারাই থাকছেন?
সালাউদ্দিন লাভলু: না এবার তারা এই নাটকে নেই। প্রথমত: গল্পটার কারণে অনেক নতুন মুখ দরকার ছিলো। তাই তরুণদের নিয়ে কাজ করেছি। দ্বিতীয়: যাদের কথা বললেন তাদের সঙ্গে গত আট-দশ বছর কাজ করেছি তারা এখন অনেক ব্যস্ত, অনেক জনপ্রিয় এবং তারা প্রচুর নাটক করছেন। আমার যেই সময়টা এই নাটকের জন্য দরকার ওনাদের পক্ষে সেই সময়টুকু এখন দেয়া সম্ভব না।
তাছাড়া এক সিরিয়ালের মধ্য দিয়ে আমি চেষ্টা করি নতুন নতুন শিল্পীদের নিয়ে কাজ করার। পরবর্তীতে তারাই স্টার হয়ে যায়।
চ্যানেল আই অনলাইন: জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘রঙের মানুষ’র’ মত ‘সোনার পাখি রূপার পাখি’?
সালাউদ্দিন লাভলু: রঙের মানুষ ছিলো রঙের মানুষ। ওই সময়ের রঙের মানুষের যে আবেদন, ওই সময়ে রঙের মানুষে যে মানুষগুলো জড়িয়ে ছিলো ওই প্রেক্ষাপটে রঙের মানুষ দর্শকদের ভালো লেগেছিলো। তখন মানুষ নিয়ম করে সময় করে রঙের মানুষ দেখত। এখন কিন্তু ওই রকম আকেটি রঙের মানুষ বানানো কোনোভাবে সম্ভব না। কারণ মানুষের রুচি পাল্টেছে, জীবনবোধ পাল্টে গেছে। মানুষের ব্যস্ততার কারণে মানুষের সময় পাল্টে গেছে।
চ্যানেল আই অনলাইন: সুপারহিট সিনেমা ‘মোল্লা বাড়ির বউ’র’ পর আর কোনো নির্মাণ নেই কেন?
সালাউদ্দিন লাভলু: ‘মোল্লা বাড়ি বউ’র’ পর আমিও মাঝখানে দু’ তিনবার চেষ্টা করেছি সিনেমা নির্মাণ করার জন্য। কিন্তু ঠিক যেভাবে আমি সিনেমা করতে চাই, সিনেমার মাধ্যমে যে জীবনটাকে দেখাতে চাই সেটি প্রযোজকের চাওয়া ও পরিচালকের চাওয়া যদি এক না হয় তাহলে সিনেমাটা হবে না।
তার সঙ্গে আরেকটি কথা বলতে, চাই আমি তো নাটকের মানুষ আমার প্রতি বছর প্রতি মাসে নাটকের মানুষের সঙ্গে থাকতে হয়। সিনেমা করতে গেলে একটা বছর নাটকের বাইরে থাকতে হবে। ওই একবছর সিনেমায় কাজ জন্য সময় দেয় তার বিনিময়ে আমি যে পারিশ্রমিক পাবো সেটা দিয়ে আমি চলতে পারবো না।
কারণ ছবির পরিচালকদের সম্মানী এতোই কম যে আমি ভাবতেই পারি না কি করে একজন পরিচালক সুস্থভাবে একটা ভালো নির্মাণ করবে।
চ্যানেল আই অনলাইন: তাহলে সিনেমা নির্মাণ নয়?
সালাউদ্দিন লাভলু: সেটি অবশ্যই নয়। গত সপ্তাহে একটি গল্প জমা দিয়েছি। দেখা যাক প্রয়োজক সঙ্গে মিলে গেলে, সময় মিলে গেলে, প্রোপার লোকেশন ঠিকমতো পেলে এবছর না হলেও আগামী বছরের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করতে পারবো।
চ্যানেল আই অনলাইন: মিডিয়াতে তরুণ প্রজন্ম কতদূর যাবে?
সালাউদ্দিন লাভলু: সেটা আমি ঠিক বলতে পারবো না। তবে অনেকর সঙ্গে কাজ করায় যেটি বুঝেছি অনেক পরিচালক, অভিনেতা ও রাইটার আছেন তারা অনেক ভালো কাজ করছে। যদি সিনিয়রদের মতো তারাও যথাযথ সাপোর্ট পায়; তারাও দর্শকদের জন্য ভালো কাজ উপহার দিতে পারবে।
চ্যানেল আই অনলাইন: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সালাউদ্দিন লাভলু: চ্যানেল আই ও চ্যানেল আই অনলাইনকে ধন্যবাদ।