বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রস অ্যাধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলেছেন: অসংক্রামক রোগের কারণে বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন: অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এনসিডিতে যারা ভুগছে তাদের ন্যায়সঙ্গত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে প্রাইমারী হেলথ কেয়ার পর্যায়েও।
বুধবার বিকেলে ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত তিন দিনের ‘প্রথম আন্তর্জাতিক এনসিডি (অসংক্রামক রোগ) কনফারেন্স’ এ ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। এসময় তিনি এসব কথা বলেন।
টেড্রস অ্যাধানম গ্যাব্রিয়েসুস জানান: তামাকের ব্যবহার এবং আনহেলদি লাইফস্টাইলের কারণে এনসিডি বাড়ছে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন: এনসিডি বাংলাদেশের জন্য ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যঝুঁকি ও উদ্বেগের কারণ হচ্ছে। ৬৭% মৃত্যুর জন্য এটি দায়ী। বাংলাদেশের ২০% মানুষ উচ্চ রক্তচাপ, ১০% ডায়বেটিস ও ২০ লাখ মানুষ ক্যান্সারে ভোগে। প্রতি বছর ৫০ হাজার যোগ হয়। জীবন যাত্রার পরিবর্তন, খাদ্যাভাসে পরিবর্তন, ওবিসিটি, তামাকের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, অপর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম, ওষুধের অপব্যবহারের কারণে এনসিডি বাড়ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন: এনসিডি প্রতিরোধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। রেগুলার চেকআপ ও আর্লি ডিটেকশন এনসিডি কন্ট্রোলে গুরুত্বপূর্ণ। ট্রিটমেন্ট ফ্যাসিলিটি বাড়ানো ও প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন। সরকার এনসিডি প্রতিরোধে সেক্টর ভিত্তিক প্রোগ্রাম নিয়েছে। দেশের আট বিভাগে ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগের হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে। দেশের সব জেলা হাসপাতালে ১০ বেডের ডায়ালাইসিস ও আইসিইড বেড স্থাপন করা হচ্ছে। উপজেলা হাসপাতালসহ দেশের সব হাসপাতালে এনসিডি কর্নার করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নন কমিউনিকেবল ডিজিজ ফোরাম ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামকে এ কনফারেন্স আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।
জাহিদ মালেক বলেন: হাসপাতালগুলো কোভিড রোগী দিয়ে ভর্তি হওয়ায় এনসিডি রোগীরা সেবা বঞ্চিত হয়েছে। দেরিতে সেবা নেয়ায় মৃত্যু বেড়েছে। এখন দেশে কোভিড পজিটিভিটি রেট ৩২ শতাংশ, দিনে ১৫ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। সংক্রমণ রোধে সবাইকে মাস্ক পরতে, জনসমাগম এড়ানো ও ভ্যাকসিন নিতে হবে।
এদিন তিনটি সেশনে ভাগ করে এই কনফারেন্সে আলোচকরা বক্তব্য রাখেন। সকালের উদ্বোধনী সেশনে চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক সেক্রেটারি ডা. সারওয়ার আলী। এই সেশনে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মোঃ হুমায়ুন কবির, পিওর আর্থের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মাহফুজুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, সাউথ ইস্ট এশিয়া রিজিওনাল এনসিডি অ্যালায়েন্সের চেয়ারপার্সন ডা. মনিকা আরোরা, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটেস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট (নির্বাচিত) অধ্যাপক আখতার হোসাইন।
এরপর বিজ্ঞান সেশনে বক্তব্য রাখেন ডা. জামান, ডা. শামসুল আরেফিন, ভারতের ডা আরুন জোস, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. রুবানা রাকিব, অর্গানিইজিং কমিটির সায়েন্টিফিক সেক্রেটারি ডা. আলিয়া নাহিদ, ডা. আফরিন ইকবাল, ডা. আনোয়ার হোসেন। আরও বক্তব্য রাখেন- ডা. তাহনিয়াহ হক, ডা. মারুফা মুস্তারি, ডা. শাহাজাদা সেলিম, ডা. এস এম আশরাফুজ্জামান, ডা. নুসরাত হোসেন শেবা, ডা. সাদিয়া নুর, ডা. তনময় সরকার, ডা. জেবা মাহমুদ, অধ্যাপক ডা. সানোয়ার হোসেন, ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ওসমানী, অধ্যাপক ডা. ব্রায়েন গডম্যান, ডা. বেদোওরা জাবিন, ডা. থান চো, ডা. শেখ দাঊদ আদনানসহ অন্যান্যরা।
প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক ডা. শামীম হায়দার তালুকদার বলেন: ৩৫ বছরের উপরে ৫০ শতাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ আছে। আমাদের দেশে উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার সহ কয়েকটি রোগে ৭০ শতাংশ মানুষ মারা যায়। যারা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রতিরোধের উপর জোর দিতে হবে। এ প্রতিরোধের জন্য আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
দেশে অসংক্রামক ব্যাধি সংক্রান্ত যেসব সভা-সেমিনার হয় সেগুলোতে অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও অর্গানিইজিং কমিটির সায়েন্টিফিক সেক্রেটারি ডা. আলিয়া নাহিদ বলেন: বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলের যদি খুঁজে দেখা হয় কতজনের উচ্চ রক্তচাপ আছে, দেখা যাবে ১০০ জনের মধ্যে ৫০ জন জানে না তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে।