জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল। জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার মোংলা ও বাগেরহাটকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়। কারণ খুলনায় অবস্থিত বৈশ্বিক ঐতিহ্য সুন্দরবনের উন্নয়ন মানে সারা বিশ্বের উন্নয়ন।
ব্র্যাক ও মোংলা পোর্ট পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘স্থানীয় নেতৃত্বে বিকশিত অভিযোজনমুখী সমাধানের মাধ্যমে বাংলাদেশে জলবায়ুসহিষ্ণু ও অভিবাসীবান্ধব নগর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব উল্লেখ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ অনুবিভাগ) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক। আজ সোমবার ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ বাগেরহাট জেলার মোংলা পোর্ট পৌরসভায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সম্মেলনকক্ষে উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
প্রকল্পটি ব্র্যাক, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (ইক্যাড) এবং স্পার্ক ইন্ডিয়া এই তিনটি সংস্থার সমন্বয়ে বাস্তবায়িত হবে। এতে ব্র্যাক সার্বিক বাস্তবায়নের ভূমিকা পালন করবে। ইক্যাড এবং স্পার্ক ইন্ডিয়া কারিগরি সহায়তা প্রদান ও নলেজ পার্টনার হিসেবে কাজ করবে। মোংলায় পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেবে মোংলা পোর্ট পৌরসভা। বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজনের মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীল অভিবাসী-বান্ধব শহর গড়ে তোলার প্রক্রিয়া জোরদার করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রকল্পটির আওতায় বাগেরহাটের অন্তর্গত মোংলা বন্দর পৌরসভা শহরের জন্য একটি অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে ও তা বাস্তবায়নে একটি পাইলট কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এই কার্যক্রম ২০২৬ নাগাদ আরো তিন শহরে এবং ২০৩০ নাগাদ দেশের ২৬টি শহরে বিস্তৃত হবে। প্রকল্পে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোয় স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজনের আটটি নীতি অনুসরণ করা হবে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা জরুরি। মোংলা শহরের প্রধান সমস্যা সুপেয় পানির যথাযথ সরবরাহ নেই। লবণাক্ততার কারণে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে রয়েছে এখানকার মানুষ। প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তার টেকসই সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ অতিথির হিসেবে মোংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষ করে মোংলা পোর্ট পৌরসভা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় এই এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। সেইসঙ্গে জলবায়ু অভিবাসী মানুষজনের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ব্র্যাকের ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রোগ্রাম এবং আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের পরিচালক ড. লিয়াকত আলী বলেন, গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ)-এর অর্থায়নে এই প্রকল্পটি এশিয়ায় প্রথম বাস্তবায়িত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও নগর উন্নয়ন ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। মোংলায় বসবাসরত জলবায়ু অভিবাসীদের প্রকৃত চাহিদাসমূহ চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে প্রকল্পটি সার্থক হবে।
সভায় প্রকল্পটির বিস্তারিত তুলে ধরেন ব্র্যাক আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান ইমামুল আজম শাহী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান আবু সাদাত মনিরুজ্জামান খান। এছাড়া নি¤œআয়ের জনবসতি ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে মডেল উপস্থাপন করেন স্পার্ক ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি নিহার জহোরি। বিপদাপন্নতা, ঝুঁকি নিরূপণ এবং জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা প্রক্রিয়া সম্পর্কে বক্তব্য দেন ইক্যাড প্রতিনিধি স্যাভিও রোজারিও।
অনুষ্ঠানে সাম্মানিক অতিথি হিসেবে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. হাফিজ-আল-আসাদ এবং অন্যান্যদের মধ্যে শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্পটির মাধ্যমে জলবায়ু অভিবাসী বিশেষ করে নারী, শিশু, যুবক এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, কাজের সুযোগ, আয় বৃদ্ধি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং সামাজিক নিরাপত্তার সুযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান করা হবে।