কট্টর ইসলামপন্থিদের তিন সপ্তাহের টানা বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের ঘটনার পর অবশেষে পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদ নিজেই পদত্যাগ করলেন।
পাকিস্তানের জিওটিভি জানিয়েছে, হামিদ স্থানীয় সময় রোববার বিকেলের দিকে প্রধানমন্ত্রী শহিদ খাকান আব্বাসি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ওই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।
নির্বাচনী শপথের একটি অংশে মুহাম্মদ (সা.) এর উল্লেখ বাদ পড়ার পর আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদের অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ শুরু করে কট্টর ইসলামপন্থীরা। যদিও এ ঘটনা একজন কর্মচারীর ভুলে হয়েছে জানিয়ে ক্ষমা প্রার্থনাও করেছিলেন হামিদ। কিন্তু তার সেই ক্ষমা প্রার্থনাকে যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে তার পদত্যাগ দাবি করা হতে থাকে।
তিনি বলেন, ‘আমি সরাসরি ওই বিতর্কিত সংশোধনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। তবে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে আমি আমার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
পদত্যাগের সিদ্ধান্তের আগে রোববার জাহিদ হামিদ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে ডেকে তার সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে লাহোরে বৈঠক করেন। প্রথম থেকেই বৈঠকটিকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চলমান পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। এর কিছু সময় পরই পদত্যাগপত্র পাঠান আইনমন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী হামিদের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে বিক্ষোভ শুরু করে কট্টর ইসলামপন্থীরা। তার অপসারণের দাবিতে তখন থেকেই তারা ফইজাবাদ হাইওয়ের মোড়ে অবস্থান নেয়।
সেখান থেকে তাদের সরানোর অভিযান শুরু হলে তাদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়লে তারা ইটপাটকেল ছুঁড়ে জবাব দেয়। এতে সিন্ধু, পাঞ্জাব ও কাইবার পাখতুনখাওয়া মিলে আহত হয় অন্তত আড়াইশ’ জন। এছাড়া সংঘর্ষে কমপক্ষে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
পরে করাচিসহ আরো কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আইনমন্ত্রীর বাড়ির একাংশে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। যদিও সেসময় আইনমন্ত্রী বা তার পরিবারের কেউ বাড়িতে ছিলেন না।
এরপরই শহর কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ইসলামাবাদে সেনাবাহিনী তলব করা হয়। ইসলামাবাদের রাস্তায় উগ্র ইসলামপন্থীরা আইনমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে শনিবার থেকে বিক্ষোভ করতে থাকলে পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সামরিক-বেসামরিক কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সমঝোতার পক্ষে বলে তখন জানানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীসহ দেশজুড়ে মিডিয়া ব্ল্যাক আউট জারি করে পাকিস্তান সরকার।