চট্টগ্রাম থেকে: অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সেটা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে। সেখানে আগে কখনো তিন উইকেট পাওয়া হয়নি। সেই অনীক বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই ১৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে রাজশাহী কিংসকে ৩৩ রানের জয় এনে দিয়েছেন।
আগের ৯ ম্যাচের মাত্র দুটি জিতে চিটাগং ভাইকিংসের বিপিএল এক অর্থে শেষই হয়ে গিয়েছিল। পরের তিনটি জিতলে কাগজে-কলমের ‘যদি, কিন্তু’র আশা থাকত। সেটিও শেষ হয়ে গেল ঘরের মাঠে নিজেদের শেষ ম্যাচে রাজাশাহীর বিপক্ষে হেরে। এই জয়ের পর রাজশাহী ম্যাচ পাবে আরও দুটি। পরের রাউন্ড খেলতে হলে ম্যাচগুলোতে তাদের জিততে তো হবেই; সঙ্গে প্রার্থনা করতে হবে ঢাকা-রংপুর বাকি ম্যাচগুলোতে যেন হারে!
সিলেট-ঢাকা হয়ে বন্দরনগরীতে আসার পর চট্টগ্রাম দিনবদলের ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু কিছুতে কিছু হল না। ঢাকা পর্বে তাদের শেষ দুটি ম্যাচ তাই অন্যদের হিসাব মেটানোর উপলক্ষই হয়ে থাকল।
বুধবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চিটাগং টস হেরে আগে বল করতে নেমে রাজশাহী কিংসকে ১৫৭ রানে আটকে দেয়। সেই রান তাড়া করতে নেমে তারা করতে পারে ১২৪।
রাজশাহীর ড্যারেন স্যামি প্রায় প্রতিদিন শেষ দিকে দলের রান বাড়াতে সাহায্য করছেন। এদিনও ২৫ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলে সেই চেষ্টাটা করে গেলেন। তার আগে জাকির হাসান নামক এক তরুণ আরেকবার বার্তা দিয়েছেন- সময় পেলে আমিও একদিন ফুটবো।
জাকির এ মৌসুমে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই ৫১ রানে অপরাজিত ছিলেন। পরের দিন করেন ৩৬। ভেতরে এক ম্যাচে শূন্য রানে ফিরে পরের দুই ম্যাচে ১৯, ২০। বুধবার ১১ বলে দুই চার, এক ছয়ে ১৭। ‘১৭’ সংখ্যাটি দিয়ে জাকিরকে বিচার করতে গেলে বড় ভুল হবে! মুমিনুল (৭) দ্বিতীয় ওভারে আউট হয়ে যাওয়ায় পাওয়ার প্লের সময় নেমে যান জাকির। তার জন্য ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট ফাঁকা রেখে গালি আর শর্ট-থার্ডম্যানে ফিল্ডার রাখেন ভাইকিংস অধিনায়ক লুক রঞ্চি।
বাঁহাতি জাকিরের জন্য অফসাইডে ত্রিশগজে ফিল্ডার ছিল, কাভারে কয়েক হাত গ্যাপ দিয়ে পরপর দুজন। তারপর মিডঅফ। ত্রিশগজের বাইরে যে দুজন তারা লেগসাইডে। তাসকিন পরিকল্পনা মতো আউটসাইড অফস্টাম্পে বল করতে থাকেন। চতুর্থ ওভারে জাকির তাসকিনকে যে দুটি চার মারেন তার একটি থার্ডম্যানের চোখের সামনে দিয়ে, পরেরটি পয়েন্ট দিয়ে। জাকিরের এই দুটি শটই রঞ্চিকে নতুন করে ভাবাতে বাধ্য করে। অফসাইডে তিনি আরও ফিল্ডার বাড়ান। দ্রুত রান তুলতে যেয়ে জাকির বোল্ড হন ঠিকই, পেছনে রেখে যান সাহসী ১৮টি মিনিট।
জাকির ফিরে যাওয়ার পর মুশফিক ৩১ রান করেন। ২২ বলে চারটি চার, একটি ছয়ে এ রান করেন। বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক চলতি মৌসুমে নিজের ছায়া হয়ে আছেন। এক ম্যাচে ৫৫, আরেক ম্যাচে অপরাজিত ২৫ ছাড়া বলার মতো কিছুই করতে পারেননি।
ডেথ ওভারে তাসকিন এদিনও খুব একটা ভাল করতে পারেননি। চার ওভার হাত ঘুরিয়ে ৩৬ রান দিয়ে এক উইকেট নিয়েছেন। ৩৩ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়েছেন রিচি। একটি করে উইকেট সাঞ্চামুল এবং নাঈম হাসানের।
চিটাগং প্রথম ওভারে রঞ্চিকে (৮) হারিয়ে শুরু করে। দলীয় ৫১ রানের মাথায় ফিরে যান সৌম্য সরকার। এই মৌসুমে একটিও অর্ধশতক করতে না পারা সৌম্য এদিন ১৫ বলে ১৩ করেন। এনামুল হক বিজয় ২০ বলে ২৩। মিডলঅর্ডারে ভ্যান জিল ২৯ বলে ২৭।
টপ থেকে মিডল পর্যন্ত এমন ব্যাটিংয়ের পর আর থই পায়নি দলটি। ১৭ বলে ১৭ করে সিকান্দার রাজা ফিরে গেলে পরাজয়ের ক্ষণ গুনতে থাকে স্বাগতিকরা। সেটি এগিয়ে আনেন বিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা বাঁহাতি পেসার ১৯ বছরের কাজী অনীক।
অনীকের সতীর্থ মোস্তাফিজ আজ কিছুটা হলেও ছন্দে ফিরতে পেরেছেন। চার ওভারে অনীকের চেয়ে এক রান বেশি দিয়ে (১৮) দুই উইকেট নিয়েছেন।