বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রঘোষিত নতুন ভিসানীতির ব্যাখ্যা দিয়েছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন এই ভিসানীতির ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠান তৃতীয় মাত্রায় যোগ দেন তিনি। অনুষ্ঠানে ভিসানীতির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছে বা এ কাজে সহযোগিতা করছে এমন যে কোন বাংলাদেশীকে ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বিধি নিষেধ আরোপ করবে।
তৃতীয় মাত্রায় তিনি বলেন, এটা খুব পরিষ্কার যে আমরা এখনো কারও ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিনি। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমানে আমাদের নতুন নীতি করা প্রয়োজন। যে নীতির মাধ্যমে, বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত বা ক্ষতিসাধন করছে এমন ব্যক্তিকে ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। তারা হতে পারেন: সরকারের কোন ব্যক্তি, বিচার বিভাগের বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ অথবা বিরোধী দলের কোন সদস্য।
ডোনাল্ড লু আরো বলেন, এই নীতি সরকার বা বিরোধীদলের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। যেমন বিরোধীদলের এমন কাউকে যদি পাই যিনি সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে সহিংসতায় জড়িত বা ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন তবে তার ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ দেওয়া হবে। তেমনি সরকারি দলের কেউ বা আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কোন সদস্য যদি সহিংসতা, ভোটারদের স্বাধীনতা ভয়ভীতি দেখানো অথবা বাক স্বাধীনতা হরণে জড়িত থাকেন তাকেও যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করতে দেওয়া হবে না।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এরকম কোন ব্যক্তির পরিবারের সদস্য সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় তার স্ত্রী বা স্বামী এবং সন্তানেরা এই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন। এ ধরনের ব্যাপার জানার পর ভিসা প্রত্যাহার করা হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা জানিয়েও দেওয়া হবে।
তিনি জানান, চারটি সুনির্দিষ্ট কারণে ভিসা প্রদানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এগুলো হলো: ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোট কারচুপি, বাক স্বাধীনতা বা সমাবেশ করার স্বাধীনতা হরণ এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করতে না দেওয়ার উদ্দেশ্যে সহিংসতা।
এই নীতি সুষ্ঠু ও গঠনমূলকভাবে এবং সরকার বা বিরোধীদল নির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য হবে বলে তিনি জানান। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, কোন দেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কখনো একপেশে হয়ে কাজ করে না, আমরা কখনো নির্দিষ্ট কোন দলের বা প্রার্থীর হয়ে কাজ করি না। যুক্তরাষ্ট্র সব সময় অবাধ, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পক্ষে থাকে।
সহিংসতার নির্দেশদাতা এবং নির্দেশ পালনকারী উভয়ের ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য হবে বলে তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন। যারা নির্দেশ অনুযায়ী সহিংসতা, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন ও ভোট জালিয়াতি করবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য অযোগ্য হবে। একইভাবে যারা এসবের নির্দেশদাতা হবেন তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
১৪ই মে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের পাল্টা পদক্ষেপ এই ভিসা নীতি কি না জানতে চাওয়া হলে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, না, অবশ্যই এটা না। বাংলাদেশ সরকারকে তেসরা মে এই নোটিশ দেওয়ার প্রক্রিয়ার সাথে আমি ব্যক্তিগতভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলাম। সুতরাং ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের পাল্টা পদক্ষেপ এটা কোনভাবেই না। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশোধমূলক কোন সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ কখনো নেয়নি বা নেবে না।
তিনি বলেন, এটি একটি পূর্বাভাসমূলক নীতি। আমরা আশা করছি, এই ভিসানীতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং আগামী বছর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে। আমরা খুব গুরুত্বের সাথে দায়িত্ব নিই। আমরা যদি পেছন ফিরে তাকাই বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে দেখি। আমরা এই নীতিকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, সরকার, নাগরিক সমাজ ও বাংলাদেশের জনগণের প্রচেষ্টাকে সহায়তার জন্য ব্যবহার করতে চাই। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খুই গুরুত্বপূর্ণ।
ডোনাল্ড লু, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব বোঝাতে নিজের অভিজ্ঞতা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আমি কয়েকবার বাংলাদেশ সফর করেছি। এই দেশটি আমাদের কাছে স্পেশাল। এদেশের জনগণ, পরিবার, প্রতিষ্ঠান, বিশ^বিদ্যালয় ও কোম্পানির সাথে আমাদের চমৎকার সম্পর্ক। বিশ^জুড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা বাইডেন প্রশাসনের মনোযোগের কেন্দ্রে রয়েছে। আমরা মনে করি, সুষ্ঠু, অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণের অধিকার।
তিনি বলেন, আমি জানি এই নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। আমি আবারো জোর দিয়ে বলতে চাই, আমরা খুবই গঠনমূলক ও ইতিবাচকভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা বাংলাদেশে সংলাপে ভূমিকা রাখতে চাই, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে সরকার, বিরোধীদল দল ও নাগরিক সমাজের সবার প্রচেষ্টার সঙ্গে। বাংলাদেশের জন্য কঠিন সময় আসতে পারে। অথবা সবার জন্য আনন্দময় হতে পারে। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হতে পারে। আমরা আশা করি, আসন্ন নির্বাচন আগের সব নির্বাচনের জন্য আরো ভালো হবে।