Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

রমজানে কুরআন তেলাওয়াতের ফজিলত

Muslim girl on black background reading Koran

স্রষ্টা ও সৃষ্টি— এই দুইটি ভাগে বিভক্ত জগত।‌ একমাত্র ব্যতিক্রম কুরআন শরীফ। না সৃষ্টি না স্রষ্টা! আল্লাহ তায়ালার কালাম, মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআন শরীফ। কিন্তু এই কুরআন কেবল মুসলমানদের জন্য নাজিল হয়নি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “কুর‌আন নাজিল হয়েছে মানুষের হেদায়েতের জন্য এবং সত্য মিথ্যার পার্থক্য করার জন্য”। (৩:৩-৪)

কুরআন তেলাওয়াতের প্রতি আল্লাহ তায়ালা নিজেই বান্দাদেরকে উৎসাহিত করেছেন একাধিক জায়গায়। সূরা আরাফে এসেছে: “যখন কুরআন তেলাওয়াত করা হয়, তখন মনোযোগের সহিত শ্রবণ করো এবং চুপ থাকো— যেন তোমাদের উপর রহমত হয়।” (৬:২০৪) এই আয়াতে পরোক্ষভাবে কুরআন তেলাওয়াতকে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রহমত প্রাপ্তির উসিলা বলা হয়েছে। সূরা আনফালে রয়েছে: “যখন তাদের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা হয় তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা ভরসা করে রাব্বুল আলামীনের উপর।” (৭:২) এই আয়াতে কুরআন তেলাওয়াতকে ঈমান বৃদ্ধির মাধ্যম হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ, কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বাড়বে ঈমান, আসবে রহমত।

আল্লাহ তায়ালা কুরআন নাজিল করেছেন রমজান মাসে। স্বীকৃতি রয়েছে সূরা বাকারায়: “রমজান সেই মাস, যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে মানবজাতির হেদায়েতের জন্য এবং তাতে রয়েছে সত্য মিথ্যার পার্থক্য করার বিধান।” (২:১৮৫) রমজানকে সম্মানিত করা হয়েছে, বরকতের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে কুরআন নাজিলের মাধ্যমে।

সাধারণত কুরআন তেলাওয়াতে প্রতি হরফের বিনিময়ে ১০ নেকির ঘোষণা করা হয়েছে হাদিস শরীফে‌। আর রমজান মাসে সেই ১০ নেকির উপর আর‌ও ১০ গুন বৃদ্ধি থেকে শুরু করে আল্লাহ তায়ালা যত ইচ্ছা বরকত দান করবেন। হাদিসে কুদসিতে এসেছে: “রোজা আমারই জন্য। এর পুরষ্কার আমি নিজেই দিবো। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময়ে দশ গুন বৃদ্ধি করবো।” (বুখারী শরীফ, ইফা, হাদিস নং ১৭৭৩) ফলে একজন মুসলমানের জন্য রমজান কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সোয়াব অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে আসে। একজন সুস্থ সবল মুসলমান হয়েও কেন এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করবো না?

রমজান মাসে হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। (বুখারী শরীফ, ইফা, হাদিস নং ১৭৮১) ফলে, রমজানে কুরআন তেলাওয়াত করা সুন্নত‌ও বটে!

ইসলামের ইতিহাসে যে-সকল মনীষীদের দ্বারা মুসলিম জাহান জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় সমৃদ্ধ হয়েছেন তারাও রমজান মাসে অধিক হারে কুরআন তেলাওয়াত করতেন। যেমন:

১. ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি রমজান মাসে মোট ৬১ খতম কুরআন পড়তেন। রমজানের দিনে এক খতম এবং রাতে এক খতম করতেন। বাকি এক খতম পুরো রমজানের তারাবীহর নামাজে আদায় করতেন। (তারিখে বাগদাদ : ত্রয়োদশ খণ্ড)

২. ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি রমজান মাসের প্রতি রাতে ১ খতম কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করতেন। (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, একাদশ খণ্ড)

৩. হযরত আবু কাতাদা রহমাতুল্লাহি আলাইহি রমজান মাসে প্রতি ৩দিনে এক খতম কুরআন তেলাওয়াত করতেন। শেষ দশকে প্রতি রাতে ১ খতম দিতেন। (সিয়ারু আলামীন নুবালা, ষষ্ঠ খণ্ড)

শুধু কুরআন তেলাওয়াত করলেই হবে না, চেষ্টা করতে হবে বোঝার। আল্লাহ তায়ালা কুরআন বোঝার জন্য বারবার তাগিদ দিয়েছেন। সূরা ইউসুফে এসেছে: “আমি আরবী ভাষায় কুরআন নাজিল করেছি যেন তোমরা বুঝতে পারো।” (১২:২) যদি বুঝতেই না পারলাম তাহলে কুরআনের মর্ম অনুধাবন করবো কিভাবে? তেলাওয়াতের ফলে সোয়াব হয়তো হবে, কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করবে না আল্লাহর কালাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “প্রকৃতপক্ষে  মানুষের বোঝার জন্য আমি কুরআনে সব দৃষ্টান্ত‌ই বর্ণনা করেছি, যেন তারা অনুধাবন করতে পারে।” (৩৯:২৭) কুরআন যদি না-ই বুঝি তাহলে অনুধাবন কিভাবে আসবে? আর কুরআনের অনুধাবনহীন লোকের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কঠোর ভাষায় বলেছেন: “তারা কি কুরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? নাকি তাদের কলবে সিলমোহর মারা?” (৪৭:২৪)

সেজন্য রমজান মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি অর্থসহ বুঝে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। সোয়াব অর্জনের পাশাপাশি চেষ্টা করতে হবে কুরআনের মর্ম অনুধাবনের। তাহলেই কুরআন তেলাওয়াতকারী হিসেবে প্রকৃত সফলতা আসবে, ইনশাআল্লাহ।

Exit mobile version