করোনা মহামারীর ভয়াল সময়ে লকডাউনে অন্য সবকিছুর মতোই স্থবির ছিল বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন। একবছর পিছিয়ে জাপানের টোকিওতে বসেছিল অলিম্পিকের ৩২তম আসর। অংশ নিয়ে টেনিসে মেয়েদের এককে চেক রিপাবলিকের হয়ে রৌপ্য জেতেন মার্কেতা ভন্ড্রোসোভা। পদক জয়ের আগে প্রেমিক স্টেপান সিমেকের সঙ্গে বাগদান সেরে নেন। করোনার ভয়ালকালে গেয়েছিলেন প্রেমের জয়গান।
সিমেকের সঙ্গে সম্পর্ক চলাকালীন ভন্ড্রোসোভা হয়ে পড়েন সন্তানসম্ভবা। পরে পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্কের হয় শুভ পরিণতি। গত বছর ১৬ জুলাই তারা বিবাহবন্ধনে জড়ান। অক্টোবরে ঘর আলো করে আসে প্রথম সন্তান। গত এপ্রিলে সন্তান জন্মের ছয় মাস পরই প্রতিযোগিতামূলক টেনিসে ফেরেন ভন্ড্রোসোভা। তার পরিবারের সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করেন, দারুণকিছু হতে চলেছে।
টেনিস কোর্টে ফেরাটা কতটা দারুণ হতে পারে, ২৪ বর্ষী তারকা সেটি দেখিয়ে ছাড়লেন। চমক দেখিয়ে প্রথমবার উইম্বলডনের ফাইনালে পৌঁছেই তিউনিশিয়ার উনস জাবেউরের বিপক্ষে জিতেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম। প্রথম অবাছাই নারী খেলোয়াড় হিসেবে উইম্বলডনের শিরোপা জিতে করেছেন বাজিমাত, হয়েছেন ইতিহাস।
গ্র্যান্ড স্লামে ভন্ড্রোসোভার সর্বোচ্চ অর্জন ছিল রানার্সআপ। ২০১৯ ফরাসি ওপেনে রানার্সআপ হয়েছিলেন। গ্রাস কোর্টের টুর্নামেন্টে এবারের আগে কখনও দ্বিতীয় রাউন্ডই পার হতে পারেননি র্যাঙ্কিংয়ে ৪২ নম্বরে থাকা তারকা।
শনিবার গ্যালারিতে থাকা স্বামী ও বোনের সামনে গড়লেন ইতিহাস। খেলা শেষের সঙ্গে সঙ্গেই ঘাসের কোর্টে শুয়ে পড়ে আবেগে কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেন ভন্ড্রোসোভা। পরে উঠে দাঁড়িয়ে নেটের কাছে গিয়ে প্রতিপক্ষ জাবেউরের সঙ্গে হাত মেলান। শেষে স্ট্যান্ডে গিয়ে স্বামী সিমেককে জড়িয়ে ধরেন।
ভন্ড্রোসোভার জীবনসঙ্গীও ছিলেন টেনিস খেলোয়াড়। একদশক আগে জুনিয়র টেনিস খেললেও পেশাদার খেলোয়াড় হননি। আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশনের (আইটিএফ) ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১৩টি একক ম্যাচ খেলে ছয়টিতে জিতেছেন সিমেক।
নিজে খেলা চালিয়ে না গেলেও ভন্ড্রোসোভার টেনিস ক্যারিয়ার এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সিমেক সমর্থন জুগিয়ে গেছেন। ফাইনালের আগে জীবনসঙ্গিনীর খেলা দেখতে লন্ডনে পা রাখেন। সিমেক এবং ভন্ড্রোসোভা একসঙ্গে মনোরম স্থানে ছুটি কাটাতে ভালোবাসেন। তারা অ্যাথেন্স, মালদ্বীপ এবং নিউইয়র্কের মতো জায়গায় অবকাশ যাপন করেন। ভক্তদের সাথে সেসব মুহূর্ত ভাগ করে নেন।
উইম্বলডন শুরুর আগে আলোচনাই ছিলেন না ভন্ড্রোসোভা। ২০১৯ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে খেললেও বাঁ-হাতের কব্জির চোটে ক্যারিয়ার বাধাগ্রস্ত হয়। গত তিন বছরে করিয়েছেন একাধিক অস্ত্রোপচার। এতকিছুর পরও প্রথম সেমিতে ইউক্রেনীয় তারকা সভেতলিনাকে হারিয়ে ৬০ বছরের মধ্যে প্রথম অবাছাই নারী খেলোয়াড় হিসেবে উইম্বলডনের ফাইনালে ওঠেন। অতঃপর ফাইনাল জিতে নামের পাশে যোগ করেছেন গ্র্যান্ড স্লাম।
প্রথম বিবাহবার্ষিকীর ঠিক আগেরদিন, ১৫ জুলাই গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের পর ভন্ড্রোসোভা বলেছেন, ‘এটা বিস্ময়কর এক অনুভূতি। আমি এখানে এসে দাঁড়াতে পারি ভাবতেই অবাক লাগছে। টেনিস আসলেই অদ্ভুত।’
‘কাল আমার প্রথম বিবাহবার্ষিকী। তার আগে সবাইকে একসঙ্গে দেখে খুব ভালো লাগছে। আমার বোন কাঁদছে। সবাইকে নিয়ে একটু বিয়ার খেতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। গত কয়েকটা সপ্তাহ একটানা খেলে আমি বিধ্বস্ত।’