অনেক দিন ধরে সিনেমাটা দেখবার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু যখন এই সিনেমার কথা জানতে পেরেছিলাম, কোনো প্রেক্ষাগৃহে তখন ছিল না এটি। ফলে অপেক্ষা করছিলাম যদি কোনো ওটিটি প্লাটফর্মে আসে! শেষ পর্যন্ত আইস্ক্রিনের বদৌলতে দেখা হলো ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’।
হাওর অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতিই এই সিনেমার প্রধান চরিত্র। মানে ট্যুরবোট থেকে হাওরের যে রূপ সচরাচর আরবান লোকজন দেখে সে রূপ নয়। হাওরা অঞ্চলের বিরূপ বিধ্বংসী প্রকৃতির সাথে সেখানকার সংগ্রামমুখর মানুষের যে লড়াই, সে গল্পই তুলে এনেছে এই সিনেমা।
সিনেমার প্রযোজক, পরিচালক এবং রচয়িতা একই ব্যক্তি- মুহাম্মদ কাইউম। এতে বোঝা যায় তিনি স্বপ্নবাজ মানুষ, নিশ্চয়ই এই সিনেমা তার দীর্ঘ স্বপ্নের বাস্তবিক প্রয়াস আর সেই স্বপ্নের পথে তিনি বোধ করি কারো সাথে আপোষ করতে চাননি।
পুরো কাহিনীচিত্রে কোমল সুরের লয়ে তিনি যেন বেঁধেছেন ঋতু বদলের সাথে প্রকৃতির রূপ বদলের চালচিত্র। শুষ্ক মৌসুমে যে হাওরের বুকে সীমা-পরিসীমাহীন বিস্তীর্ণ ধানের সারি, বর্ষায় সে হাওরেই চারদিক উপচে পড়া জলরাশি। যে জল কেড়ে নেয় গৃহবধূর সোহাগ, স্নেহ আর সম্বলও।
আবার সেই হাওর দেশেই ভাতের স্বপ্নে ছুটে আসে সিনেমার অন্যতম প্রধান চরিত্র সুলতান। কুড়া পক্ষীর জীবনচক্রের সাথে এই যে খাদ্যের সংস্থানে মানুষের নিয়ত স্থানান্তর, অভিবাসনকে একই চোখে দেখতে পারার দর্শন, এ তো অনন্য।
সুনামগঞ্জে চিত্রগ্রহণ হয়েছে এই সিনেমার। ফুলেফেঁপে ওঠা জল, পাখি, নৌকা, ধান, কর্ষিত জমি, অর্ধ ডুবন্ত গাছ, বৃষ্টি, পাহাড়ের পাদদেশ, দূর গ্রাম, বেড়ার ফাঁকটুকু এমনকি মানুষের দৃষ্টি সবকিছুর এত প্রাণবন্ত দৃশ্যায়ন দেখলাম!
‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ একটি পুরোদস্তুর শিল্পসম্মত সৃষ্টিকর্ম। এই পুরো সিনেমাটির কোথাও শিল্প থেকে বিচ্যুতি নেই, এমনকি আরবানের চোখ দিয়ে রুরালকে দেখবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা নেই। একটা সিমপ্লিস্টিক ধারার ভেতর দিয়ে এগিয়ে গেছে পুরোটা, যেখানে অনুভব করবার মতো নির্যাস রয়েছে।
এই সিনেমা দেখতে গিয়ে কখনো মনে হয়েছে প্রামাণ্য চিত্রের মতোই সাবলীল, কিন্তু না! একটা গল্পের বুননও তো ছিল সেটা এত বেশি ন্যাচারাল ছিল যে মনে হচ্ছিল সিনেমা নয়, যেন জীবন দেখছি! এখানেই এক ভিন্ন রকম আনন্দ।
২০২২ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ চলচ্চিত্রটি তিনটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও মূলধারার এই চলচ্চিত্রটি সুনাম কুড়িয়েছে।
লেখক: জান্নাতুন নুর দিশা