ইসলামের পঞ্চ বুনিয়াদের অন্যতম হচ্ছে রোজা। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নামই রোজা। রোজা পালন নিছক একটি ইবাদত নয় বরং এই ইবাদতের রয়েছে শারীরিক ও আত্মিক উপকারিতা।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন: তোমরা যদি রোজা রাখো তবে তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য কল্যাণ, তোমরা যদি সেটা উপলব্ধি করতে পারো। সুরা বাকারা: ১৮৪
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণা করে রোজা পালনের শারীরিক উপকারিতার প্রমাণ পেয়েছে। রোজা রাখার ফলে মানুষের শারীরিক কোনো ক্ষতি হয় না; বরং শারীরিক বহু কল্যাণ সাধিত হয় তার বিবরণ কায়রো থেকে প্রকাশিত ‘সাইন্স ফর ফেস্টিং’ গ্রন্থে পাওয়া যায়।
পাশ্চাত্যের প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদগণ একবাক্যে স্বীকার করেছেন, রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের ক্ষমতা ও সহনশীলতা উল্লেখযোগ্য; সঠিকভাবে রোজা পালনের পর শরীর প্রকৃতপক্ষে নতুন সজীবতা লাভ করে।
রমজানে নিয়মিত রোজা পালনের ফলে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগ যেমন: উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদ্রোগ ও স্থূলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। রোজায় পেট খালি থাকার কারণে খাবার হজমের অ্যাসিড এই সময় ধীরগতিতে নিঃসরিত হয়, যা হজম শক্তিজনিত নানা সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রোজার কোনো বিকল্প নেই। কারণ দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে কোলেস্টেরল ও গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায়।
প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদ ডা. বেন কিম তার ‘ফেস্টিং ফর হেলথ’ গ্রন্থে বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে রোজাকে চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে উচ্চরক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ (হাঁপানি), শরীরের র্যাশ, দীর্ঘদিনের মাথাব্যথা, অন্ত্রনালীর প্রদাহ, ক্ষতিকর নয় এমন টিউমার ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে তিনি বলেন, উপবাসকালে শরীরের যেসব অংশে প্রদাহজনিত ঘা হয়েছে তা পূরণ এবং সুগঠিত হতে পর্যাপ্ত সময় পেয়ে থাকে। বিশেষত: খাদ্যনালী পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাওয়াতে তার দেহে ক্ষয়ে যাওয়া টিস্যু পুনরায় তৈরি হতে পারে।
সাধারণত দেখা যায় টিস্যু তৈরি হতে না পারার কারণে অর্থপাচ্য আমিষ খাদ্যনালী শোষণ করে দুরারোগ্য এসব ব্যাধির সৃষ্টি করে।
রোজা রাখার মাধ্যমে শারীরিক কল্যাণের পাশাপাশি আত্মিক উন্নতিও সাধিত হয়। দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম-সাধনার মাধ্যমে মানুষ তার পাশবিক বাসনা ও জৈবিক চাহিদা থেকে মুক্ত থেকে আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতা অর্জন করে চিরন্তন জীবনের অনন্ত সফলতার চূড়ায় আরোহণ করে। পশুত্ব নিস্তেজ হয়ে মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয়। রোজা দরিদ্র-অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতির উদ্রেক সৃষ্টি করে মানুষের আত্মিক শক্তির উন্নতি সাধন করে এবং পাশবিক চাহিদা যা মানুষের স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করে, তা থেকেও মুক্ত রাখে।
রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষের আত্মশুদ্ধি ও পবিত্রতা অর্জিত হয়ে শারীরিক ও আত্মিক উন্নতি সাধন করে। বস্তুত রোজা মহান রব ও তার বান্দার মাঝে এমন এক সেতু-বন্ধন, যা কেবল রব ও বান্দার সম্পর্ককে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করে।