কাকতালীয়ভাবে গত বিশ্বকাপেও প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের ম্যানচেষ্টারের পর ম্যাচ এবার ভারতের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। এই ভেন্যুতেই ২০১১ বিশ্বকাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিল শচীন-ধোনিরা। এবার রোহিত-কোহলিদের সামনে নিজ দেশের বিশ্বকাপে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। সেমির বাধা টপকে ফাইনালে ওঠার লড়াই বুধবার। বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় শুরু ম্যাচ।
চার বছরের ব্যবধানে ভারত-নিউজিল্যান্ড দুই দলই ধরে রেখেছে শক্তির দাপট। ভারত এবারের বিশ্বকাপে যে পারফরম্যান্স দেখিয়ে আসছে, তাতে শিরোপার বড় দাবিদার তারাই। নকআউট পর্বে মাঠে অদম্য মনোভাব ধরে রাখতে পারলে আরেকটি বিশ্বকাপ ট্রফি তাদের ভাণ্ডারে জমা হতেই পারে। তবে খেলাটার নাম ক্রিকেট এবং প্রতিটি দিনই নতুন। নির্দিষ্ট দিনে ভালো-মন্দের উপর নির্ভর করে জয়-পরাজয়। ভারতের মতো একচেটিয়া দাপট দেখাতে না পারলেও নিউজিল্যান্ড খেলেছে দারুণ ক্রিকেট।
২০১৯ বিশ্বকাপে কিউইদের কাছে পারেনি ভারত। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ১৬ রানে হার হজম করতে হয়েছিল বিরাট কোহলির দলকে। রোহিত শর্মার ভারত এবার প্রতিশোধের অপেক্ষায় নিজেদের প্রিয় ভেন্যুতে।
৯ ম্যাচে অপরাজিত ভারতকে যদি নিউজিল্যান্ড হারিয়ে দেয়, তাহলে নতুন ইতিহাসই রচনা হবে ওয়াংখেড়েতে। উপমহাদেশে প্রথমবার ফাইনাল খেলার কীর্তি গড়বে কেন উইলিয়ামসের দল। এমনিতেই মুম্বাইয়ের ঐতিহাসিক এই ভেন্যুর সঙ্গে জড়িয়ে অসংখ্য রেকর্ডের মালা। নতুন ইতিহাস রচিত হবে কিনা, সেটির জন্য আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা।
ম্যাচের আগেরদিন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন বলেন, ‘আমরা জানি, এটা আসলেই কঠিন চ্যালেঞ্জ। এবার ফাইনালের পালা। একটা দিনে ভালো খেলার ব্যাপার। নিজেদের খেলার দিকেই আবারও মনোযোগ রাখছি। চ্যালেঞ্জের জন্য আমি রোমাঞ্চিত।’
এরপর সংবাদ সম্মেলনে আসা টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘আমরা অনেক বছর ধরেই চাপকে একপাশে সরিয়ে রাখতে চেষ্টা করেছি। আমাদের খেলার যে কৌশল, তাতে বেশি মনযোগী হওয়া জরুরি। মাঠের বাইরে যা হচ্ছে তা হতেই থাকবে, থামানো যাবে না। ম্যাচে মনোযোগ দেয়াই জরুরি। প্রতিপক্ষের দিক থেকে যেসব চ্যালেঞ্জ আসতে চলেছে, সেগুলোতে দৃষ্টিপাত করাই আমাদের কাজ।’
মুখোমুখির দীর্ঘ পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে জয়ের পাল্লা ভারি ভারতের দিকে। ১১৭ ওয়ানডেতে কিউইদের ৫০ জয়ের বিপরীতে ভারত জিতেছে ৫৯টিতে। বাকি ৭ ম্যাচ শেষ হয়েছে ফল ছাড়াই এবং এক ম্যাচ টাই হয়েছে।
৫৯ জয়ের মধ্যে ৩০ ম্যাচে ঘরের মাঠে জয় পেয়েছে ভারত। প্রতিপক্ষের মাঠে ১৪ ও নিরপেক্ষ ভেন্যুতে ১৫ জয় আছে আসরের স্বাগতিকদের ঝুলিতে। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ড নিজেদের মাটিতে জিততে পেরেছে ২৬ ম্যাচ। ৮ ম্যাচ ভারতের মাঠে এবং নিরপেক্ষ ভেন্যুতে ১৬ জয় আছে কেন উইলিয়ামসনদের।
বিশ্বকাপের পরিসংখ্যানে এগিয়ে অবশ্য ব্ল্যাক ক্যাপস। ১০ ম্যাচে তাদের ৫ জয়ের বিপরীতে ভারতের জয় ৪টিতে, পরিত্যক্ত হয়েছে একটি। ম্যানচেস্টারে ২০১৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে আসর থেকে বিদায় নিয়েছিল ভারত। এবার ঘরের মাঠে উইলিয়ামসনদের বিদায় করে ফাইনালের টিকিট কাটার সুযোগ রোহিত শর্মাদের।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন স্কোর ২৭৪ ও ১৫০, কিউইদের ২৭৩ ও ১৪৬ রান। গ্রুপ পর্যায়ে ভারতের কাছে হারের পর টানা তিন ম্যাচে জয়ের দেখা না পাওয়া নিউজিল্যান্ড পাঁচ ম্যাচে কেবল একটিতে জিতেছে, বিপরীতে আসরে সব ম্যাচেই জয় তুলে নিয়েছে ভারত। ওয়ানডেতে দুদলের মুখোমুখি লড়াইয়ে শেষ পাঁচ ম্যাচে পরাজয় নেই রোহিত শর্মার দলের।
১৯৮৭, ১৯৯৬, ২০১১,২০২৩-এ নিয়ে চার বিশ্বকাপ হচ্ছে উপমহাদেশে। এশিয়ার দলগুলোর দাপুটে পারফরম্যান্স দেখা গেছে প্রথম তিন আসরে। এবার ব্যতিক্রম। চার সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে তিনটিই অন্য মহাদেশের। বৃহস্পতিবার অপর সেমিতে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অস্ট্রেলিয়া লড়বে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে। এরপর দুই দিনের বিরতির পর রোববার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ফাইনাল। ঐতিহাসিক ভেন্যুতে শিরোপার লড়াই করতে আশায় রয়েছে চার দল।
নিউজিল্যান্ড ওয়ানডে বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত শিরোপার স্বাদ পায়নি। কিন্তু গত পাঁচ বিশ্বকাপে ফিরে তাকালে, সবচেয়ে ধারাবাহিক দল তারাই। এবার নিয়ে টানা পাঁচ বিশ্বকাপে তারা খেলছে সেমিফাইনালে। ২০১৫ আসরে প্রথমবারের মতো পা রাখে বিশ্বকাপের ফাইনালে। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে লড়াই জমাতে পারেনি।
পরের বিশ্বকাপে তারা সেই ঘাটতিও পূরণ করে দেয়। তবে ফাইনাল জিততে পারেনি। তবে ক্রিকেটীয় কোনো নিয়মে তাদের হারানোও যায়নি। মূল ম্যাচ ‘টাই’ হওয়ার পর সুপার ওভারও ‘টাই’ হলে তারা শেষ পর্যন্ত ট্রফি ছুঁতে পারেনি বাউন্ডারি কম মারায়। লর্ডসের সেই ফাইনালটি ইতিহাসের সেরার খেতাবও পেয়েছে। এবার আরও একটি ফাইনালের হাতছানি নিউজিল্যান্ডের।
রাউন্ড রবিন লিগে ভারতের সামনে কিছুটা লড়াই করতে পেরেছিল কিউইরা। ধর্মশালায় ২ ওভার বাকি থাকতে ৪ উইকেটে হেরেছিল তারা। এবার সেমির মঞ্চে আরও একবার মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল।