তিন দশকের ক্যারিয়ার পার করে এখনও দাপট অব্যাহত রেখেছেন মিশা সওদাগর। ঢাকাই সিনেমায় প্রয়াত রাজীবের পর খলনায়ক হিসেবে একক আধিপত্য বিস্তার করে আছেন তিনি। খলনায়ক হিসেবে রেকর্ড সংখ্যক ছবিও তার দখলে। এই অভিনেতার হাতে আছে তুমি যেখানে আমি সেখানে, লিপস্টিক, মুক্তি, বিট্রেসহ আরও কিছু সিনেমা।
সোমবার সন্ধ্যায় এফডিসিতে দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’ ছবির শুটিং করছিলেন মিশা। শুটিংয়ের বিরতিতে চ্যানেল আই অনলাইনের মুখোমুখি হন এই অভিনেতা:
এতো বছর পরেও এখনও আপনি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছেন। ক্লান্তি লাগে না?
আমার পেশা অভিনয়। এটা ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসায় আমি জড়িত নই। তাই অভিনয় চালিয়ে যাওয়া আমার শতভাগ পেশার অংশ। ২১ বছর (১৯৮৬) বয়সে আমি এফডিসিতে আসি। পরে একবছর গ্রুমিংয়ে অংশ নিই।এরপর ধর্ম ও কর্ম ঘিরে আমার ধ্যান জ্ঞান। আমার পুরো পরিবার আমেরিকা থাকে। ২০১৬ সালে গ্রিন কার্ড পাই। এত ব্যস্ত ছিলাম প্রথম দুবছর সেখানে যেতে পারিনি। এখন আমি দেশে একা থাকি। পরিবার সেখানে রেখে দেশে থাকতে অনেক কষ্ট হয়। সর্বপরি আমি আমার পেশা ও সংস্কৃতিকে ভালোবাসি এবং মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা দেয় এটাকে সম্মান করি।
একই ফরম্যাটে বার বার অভিনয় করতে নিজের কাছে ভালো লাগে?
এটা পরিচালকদের ভাবা উচিত। আমি মনে করি কমার্শিয়াল ছবির শিল্পীদের একটি ফরম্যাটে থাকতে হয়। শাহরুখ খান ‘পাঠান’ দিয়ে যেভাবে সাড়া জাগালো সেই একইভাবে ‘পাসওয়ার্ড’ এর পরে আমাদের শাকিব খান ‘প্রিয়তমা’ দিয়ে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে সাড়া জাগালো। আমি মনে করি কমার্শিয়াল ফিল্মের ফর্মুলা একই। দুঃখ হাসি কান্না বেদনা ভালোবাসা এগুলোই; আর মানুষ কাঁদতে চায়। দেবদাস, টাইটানিক, প্রিয়তমা প্রতিটি ছবি দেখে দর্শক কেঁদেছে। যেসব ছবি দর্শক কাঁদিয়েছে সেগুলো সুপার ডুপার বাম্পার হিট করেছে। পাঠানে জন আব্রাহাম ডাবল পেমেন্ট নিয়ে এমন চরিত্র করেছে। তাছাড়া ভিলেনদের একটা দায়িত্ব থাকে। তবে আমি আমার জায়গা থেকে প্রেজেন্টেশনে ভিন্নতা রাখার চেষ্টা করি।
গত ঈদের আলোচিত দুই ছবি ‘প্রিয়তমা’ এবং ‘সুড়ঙ্গ’তে আপনি ছিলেন না। দুটিতেই ছিলেন শহীদুজ্জামান সেলিম। এতে করে অনেকেই বলছেন, এখন শহীদুজ্জামান সেলিম আপনার প্রতিযোগী হয়ে উঠেছেন!
উনি আমার বড় ভাই। প্রতিদ্বন্দ্বী কেন হবেন? তার জনরা এবং আমার জনরা আলাদা। আমি ফিল্ম ওউন করি, আজ যেখানে আছি ফিল্মের কারণে আছি। সেলিম ভাইয়া একজন কমপ্লিট অভিনেতা, উনি নাটকের মানুষ এবং আমি ফিল্মের ভিলেন অভিনেতা। বাংলাদেশে অভিনেতা অনেক কিন্তু ভিলেন অভিনেতা আগে ছিল একমাত্র রাজীব সাহেব। এখন কে আছে সেটা দর্শকরা ভালো বলতে পারবেন। এটা করতে অনেক কিছু জানতে হবে। ভিলেন অভিনেতা থাকতে হলে হ্যাডম ও পাওয়ারফুল হতে হবে। তবে হ্যাঁ আমার ‘প্রিয়তমা’ করার কথা ছিল। হিমেল আশরাফ আমাকে বলেছিল, ভাইয়া এটা আপনি করার মত চরিত্র না। সে মনে করেছিল আমার জন্য এই চরিত্রটি কম হয়ে যায়। তাছাড়া আমার আমেরিকা যাওয়া মাস্ট ছিল।
ভিলেন অভিনেতা হিসেবে মিশা সওদাগরের বিকল্প কেউ হচ্ছে না কেন?
এটা অনেক কঠিন জিনিস। ইন্ডাস্ট্রি মিশা সওদাগরের বিকল্প তৈরি করতে কম চেষ্টা করেনি। শুধু ভিলেন না, আমাদের দেশের একসময়কার অনেক সুপারহিট নায়করাও ভিলেন হতে চেয়েছে, কিন্তু পারেনি। সম্মান রেখেই তাদের নাম জানাচ্ছি না। তবে যারা কাজ করেছে তাদেরকে আমি সবসময় মোস্ট ওয়েলকাম করেছি। আমার মনে হয় সবকিছুই লাক এবং উপরওয়ালার ইচ্ছে।
সিনেমার বাজারটা কী শুধু ঈদ কেন্দ্রিক হয়ে গেল? আপনার পর্যবেক্ষণ কী বলে?
ইন্ডাস্ট্রি বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রতিমাসে একটি করে হিট ছবি লাগবে। যেসব ছবির গল্প হবে মৌলিক এবং গান ভালো হতে হবে। এখনও যখন প্রিয়তমার ‘ঈশ্বর’ গানটি শুনি আমার গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায়। ছবি না চললে দর্শকদের দোষ দেয়া যাবে না। দর্শক ভালো ছবি এলেই হুমড়ি খেয়ে সিনেমা হলে যান। তার প্রমাণ লাস্ট পাওয়া গেল ‘প্রিয়তমা’ ও ‘সুড়ঙ্গ’ দিয়ে। আর শাকিব এখন কোয়ালিটিফুল ছবির জন্য অনেক সিরিয়াস। তার পক্ষে বছরে আগের মতো ৮/১০টি ছবি করা সম্ভব না। তাই অন্যদেরও হিট ছবি উপহার দিতে হবে। নইলে বিক্ষিপ্তভাবে হয়তো কিছু মানুষ লাভবান হবে। এতে ইন্ডাস্ট্রির লাভ হবে না।
ইন্ডাস্ট্রির এগিয়ে যেতে কী করণী বলে মনে করেন?
কমপক্ষে ১০টি প্রডাকশন হাউজ থাকা লাগবে যারা পেশাদারভাবে নিয়মিত ছবি বানাবে, আগে যেটা কাকরাইলে ছিল। অনেক ছবি হচ্ছে যেগুলো বিভিন্ন ফেস্টিভ্যাল থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে, কিন্তু মানুষ দেখছে না। আমরা ভালোভাবে জানি ওসব কোন ফেস্টিভ্যাল আর কী ক্যাটাগরি। এসব ছবি বানিয়ে ইন্ডাস্ট্রির লাভ নেই। অমিতাভ বচ্চনজী বলেছেন, শাহরুখ খান, আমির খান, সালমান খানদের দিয়ে গোটা বিশ্ব ভারতের কালচার জেনেছেন। রাজকুমার রাও, আয়ুষ্মান, ইরফান খান, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, মনোজ বাজপেয়ী অনেক ভালো অভিনেতা। কিন্তু তাদের সিনেমা সারা বিশ্বে চলে না। বিশ্ব চেনে বলিউডের তিন খানকে। তারা কমার্শিয়াল ছবি করেন। আমাদেরও খেটেখাওয়া মানুষদের জন্য ছবি বানাতে হবে যারা দেখে। ‘প্রিয়তমা’র মত ছবি বানাতে হবে যেটা সিনেপ্লেক্স থেকে সিঙ্গেল স্ক্রিন সবখানে দর্শক পছন্দ করেছে আবার সিডনি, জ্যামাইকা, ভেনিস প্যারিসেও দর্শক দেখছে।