শিল্পী সমিতির সভাপতি পদ থেকে বিদায় নিচ্ছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। চলে যাওয়ার আগে দুঃখভরা মন নিয়ে গেল সপ্তাহে সমিতির পিকনিকে জানিয়েছেন, এই শিল্পী সমিতিতে যারা আছেন তাদের আচরণে কষ্ট পেয়েছেন। এ কারণে তিনি আসন্ন শিল্পী সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না।
বিদায়ী সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন সমিতির নির্বাচন কেন্দ্র করে গুরুতর অভিযোগ আনলেন। ‘আঁখি মিলন’, ‘ভেজা চোখ’, ‘চাকর’ ছবির এই নায়ক বলেন, শিল্পী সমিতির নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি হয়। নির্বাচন করলাম, এর আগে নির্বাচন কমিশনার ছিলাম। তখনো আমার কানে এসেছে, শিল্পী সমিতির নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি হয়। এই নির্বাচনেও টাকার ছড়াছড়ি হয়েছে, আমি নিজের চোখে দেখলাম আমার আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিল।
ইলিয়াস কাঞ্চনের কথা হচ্ছে, শিল্পী সমিতির নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি কেন হবে? কেন এখানে টাকা দিয়ে ভোট কিনতে হবে? এই সমিতির পদ-পদবি ভিন্ন উপায়ে আয় রোজগার করার সিস্টেম। তাই ইলিয়াস কাঞ্চন মনে করেন, নির্বাচনে জিততে প্রকৃত শিল্পীদের বাইরে সবাই মরিয়া হয়ে ওঠে।
শিল্পী সমিতিকে অলাভজনক সংগঠন বলা হয়। শিল্পীদের সার্থরক্ষার বিষয়টি দেখভাল করাই এই সংগঠনের অন্যতম প্রধান কাজ। তাহলে কেন এই নির্বাচন ঘিরে টাকার ছড়াছড়ি? কেনই বা পদপদবীর জন্য এতো দৌড়ঝাঁপ? ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, একেকটা প্যানেলের ৮০-৯০ লাখ থেকে শুরু করে কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এত টাকা কেন খরচ হবে এমন একটি নির্বাচনে? কী এমন আছে এই সংগঠনে, আমি বুঝি না।।
শিল্পী সমিতির নির্বাচনে কমিশনার ও সভাপতি দুই অভিজ্ঞতার আলোকে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, টাকার ছড়াছড়ি হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, নাম উল্লেখ না করেই বলছি, কিছু মানুষ এখানে আছেন, যারা নির্বাচন করতে চান, তাদের টাকা আছে। টাকা থাকলেও তাদের বেশির ভাগ প্রকৃত শিল্পী হতে পারেননি। শুধু শিল্পী সমিতির সদস্য হওয়ার কারণে, সুধী সমাজ বলি বা সমাজের ভালো জায়গা বলি, অবলীলায় তারা যেতে পারেন।
“শুধু শিল্পী সমিতির সাইনবোর্ডটা থাকলে সুবিধা হয়। পদ-পদবির কারণে অনেক ভালো ভালো জায়গায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। তারাও দেখা গেছে, শিল্পী সমিতির পদ-পদবির কারণে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, বসে আড্ডা দিতে পারছেন। অথচ চলচ্চিত্রে তাদের কোনো ভ্যালু নেই। কারণ, তাদের সেই অর্থে ছবি নেই। কেউ তো আবার ঠিকমতো অভিনয়টাও জানেন না। শুধু কৌশল খাটিয়ে, টাকাপয়সা খরচ করে শিল্পী সমিতিতে সদস্যপদ হয়ে সব জায়গায় যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। সত্যি বলতে, তারা মোটেও প্রকৃত শিল্পী হতে পারেননি। তাই সমিতির মাধ্যমে প্রকৃত শিল্পীদের প্রতিনিধি হয়ে নিজেদের বিশাল কিছু মনে করা শুরু করেন! পদাধিকারবলে সুধী সমাজের নানা দাওয়াতে জায়গা করে নেন।”
মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া কমিটির সেক্রেটারি নিপুনের প্যানেল থেকে সভাপতি পদে মিশা সওদাগরকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
আগামী ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে আসন্ন শিল্পী সমিতির নির্বাচন। শোনা যাচ্ছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল ও মিশা সওদাগর। তবে সেক্রেটারি নিপুনের সঙ্গে সভাপতি পদে অমিত হাসান, রিয়াজের কথা শোনা গেলেও এখনো বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।