স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ে খেলেন দুই ভাই ইকাকি উইলিয়ামস ও নিকো উইলিয়ামস। কিন্তু জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে আলাদা দেশের হয়ে যান দুজনে। কাতার আসরে ইকাকি খেলবেন ঘানার হয়ে। ছোট ভাই নিকোর গায়ে থাকবে স্পেনের জার্সি।
স্পেনের উইঙ্গার নিকো উইলিয়ামস বড় ভাই ঘানার স্ট্রাইকার ইনাকির সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে লিগ পর্যায়ের ঊর্ধ্বে নিতে চান। ২০ বর্ষী তারকার আশা, বিশ্বকাপই হতে পারে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার দারুণ মঞ্চ।
গত সেপ্টেম্বরে বিলবাওয়ের হয়ে একই ম্যাচে গোল পেয়েছিলেন ইনাকি ও নিকো। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ঘানা ও স্পেনের লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবেন দুই ভাই।
বিষয়টি ভেবে রোমাঞ্চিত নিকো বলেছেন, ‘সর্বোপরি আমি ঘানার মুখোমুখি হতে চাই। এটি ভাইদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আশা করি আমরা পেশাদার হিসেবে এটি করতে পারব।’
ইকাকি ও নিকোর বাবা-মা উত্তর আফ্রিকার দেশ ঘানায় বাস করতেন। দেশটি একসময় স্পেনের ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইনাকি ও নিকোর বাবা-মা ঘানা থেকে ৪০০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত স্পেনের মেলিলায় উন্নত জীবনের খোঁজে পাড়ি দিয়েছিলেন।
ঘানা থেকে স্পেন যাত্রাটি ছিল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। অর্ধেক পথ খালি পায়ে তাদের সাহারা মরুভূমি পাড়ি দিতে হয়েছিল। ইনাকি তখন মা মারিয়া উইলিয়ামসের গর্ভে। বাবা ফেলিক্স উইলিয়ামস বিলবাওতে আশ্রয় খুঁজে পাওয়ার পর সেখানে ১৯৯৪ সালে ইনাকির জন্ম হয়।
নিকো বিশ্বাস করেন যে ইনাকি তার নিজের পথে হেঁটে ঘানার হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেয়াটা একটি সম্মানজনক সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু তিনি সবসময় স্পেনের হয়ে খেলার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, এমনকি এটি তার কল্পনার চেয়ে দ্রুত ঘটে গিয়েছিল।
‘সবসময় জানতাম যে আমি স্প্যানিশ জাতীয় দলের অংশ হতে এখানে থাকতে চাই। এই চিন্তা আমাকে ধরে ফেলেছিল। লুইস এনরিকে যখন জাতীয় দলে ডাকেন, আমি খুব ছোটবাচ্চা ছিলাম। ঘটনাগুলো দ্রুত ঘটে গেছে এবং আমি এটা কল্পনাই করিনি।’
ইনাকি স্পেনের হয়ে ২০১৬ সালে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন। নিকো তখন সবেমাত্র পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। অতীতের কথা স্মরণ করে নিকো জানান তখনকার মানসিক অবস্থার কথা।
‘সত্যি বলতে আমরা কখনোই ভাবতে পারিনি যে আমরা এই পর্যায়ে পৌঁছাব। দুই ভাই একই ক্লাবের হয়ে খেলছি। প্রত্যেকে একটি জাতীয় দলে এবং একটি বিশ্বকাপে খেলছি। জীবনে এই পরিস্থিতি খুব কমই ঘটে। আমার পরিবার খুব খুশি এবং গর্বিত যে আমরা এ অবস্থানে আছি।’
‘আমার বাবা-মা কী পরিমাণ কষ্ট করেছে, এটি আপনাকে আরও কিছু বিষয় নিয়ে ভাবাতে বাধ্য করবে। তারা আমাদের জন্য সবকিছু নিংড়ে দিয়েছেন। আমার ভাই এবং আমার জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন।’
‘আমার ভাই আমাকে রক্ষা করেন। তিনি আমাকে সাহায্য করতে চান এবং তার কারণেই আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছি।’
এবছরই ঘানার জার্সিতে প্রথম ম্যাচ খেলেছেন ইকাকি উইলিয়ামস। যদিও ২০১৬ সালে তিনি স্পেনের জার্সিতে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন। এর আগে ২০১৫-১৭ সাল পর্যন্ত স্পেন অনূর্ধ্ব-২১ দলেও খেলেছেন।
২০১৩-১৪ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে ১৮ ম্যাচ খেলা ইনাকি করেছিলেন ৭ গোল। পরে অ্যাথলেটিক বিলবাওতে যেয়ে ২৮ বর্ষী ফুটবলার খেলেছেন ৩৫৫ ম্যাচ, করেছেন ৮০ গোল।
৩০ বছর আগে ইনাকি ও নিকোর বাবা-মা ঘানা থেকে স্পেনে পাড়ি জমান। সেখানেই দুই ভাইয়ের জন্ম। স্পেনের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ থাকলেও পরিবারের সদস্যদের, বিশেষ করে দাদার ইচ্ছাপূরণ করতে ঘানার হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত ইনাকির। আর ২০ বর্ষী ছোট ভাই নিকো স্পেনের হয়ে খেলা বেছে নিয়েছেন।
অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ে ২০২১ সালে এসে নিকো খেলেছেন ৫৭ ম্যাচ, করেছেন ৪ গোল। ২০১৯-২০ মৌসুমে বার্সার হয়ে ৩ ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন। ২০২০ সালে স্পেন অনূর্ধ্ব-১৮ ও পরের বছর অনূর্ধ্ব-২১ দলে সুযোগ পান।
বড় ভাই ইনাকির মতো এবছরই স্পেন জার্সিতে প্রথম ম্যাচ খেলেছেন নিকো উইলিয়ামস। দুই ভাইয়ের মাঝে রয়েছে আরেকটি মিল। জাতীয় দলের হয়ে তারা দুটির বেশি ম্যাচ না খেললেও বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ঠিকই ডাক পেয়েছেন।