পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীতে পুলিশসহ সবাই সচেতন থাকলে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রাখা সম্ভব হবে। এ সময় ফাঁকা বাসায় মূল্যবান সামগ্রী না রেখে যাওয়া অনুরোধ জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার ১৯ এপ্রিল দুপুরে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ঘরে ফেরা মানুষের ঈদযাত্রা পরিদর্শন শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অনুরোধ জানান আইজিপি।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় সাব কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাব কন্ট্রোল রুম করে আমরা নিরাপত্তা জোরদার করেছি। যাত্রী সাধারণ যেন দ্রুত সময়ে নিরাপদে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে পারেন আমরা আমাদের সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। অন্যান্য বছর সারা দিন যাত্রী সাধারণদের রাস্তায় বসে থাকতে হয়েছে। সরকারের উদ্যোগে পদ্মা সেতু চালু হয়েছি। আমরা জানি উত্তরবঙ্গের রাস্তারও অনেক উন্নতি হয়েছে। আগে চন্দ্রার মোড়ে ৮-১০-২০ ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। কিন্তু রাস্তার উন্নয়ন হওয়ায় যাতায়াত এখন অনেক সহজ হয়েছে।
পুলিশ প্রধান বলেন, আমরা পরিবহন কাউন্টারগুলোতে কথা বলেছি, এখনো তেমন যাত্রী চাপ পড়েনি। সেহরির পর যাত্রী চাপ বাড়বে। যাত্রীরার যেন নিরাপদের ভ্রমণ করে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে পারেন সেই জন্য গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এক সঙ্গে কাজ করছে। ঈদের জামাতের মাঠের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছি।
আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, প্রতিবছর আমরা ঈদের সময় নিরাত্তা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। রমজানের সময় সারা মাস জুড়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। তার পাশেপাশে একটা সময় এসে আমরা মার্কেটগুলোতে একটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এখন মার্কেটগুলোর পাশাপাশি আমাদের যেসব সম্মানিত যাত্রীরা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে যাবেন তাদের নিরাপত্তা, ট্রাফিক ব্যবস্থাসহ পর্যটনস্থানগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রনয়ণ করেছি। পুলিশের সকল ইউনিট দায়িত্ব পালনে এ সময় নিয়োজিত থাকবে। আমাদের স্পেশাল টিমসহ পুলিশের সকল ইউনিট এই ঈদের সময় মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে নিয়োজিত থাকব।
এ সময় যাত্রীদের অনুরোধ জানিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন: আপনারা ভ্রমণকালে অপরিচিত কোনো মানুষের দেওয়া কিছু খাবেন না। এগুলো খেলেই অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ার আশংকা আছে। আমরা আশা করছি সাধারণ মানুষ কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া ঈদ যাত্রা করতে পারবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ প্রধান বলেন, ঢাকা ফাঁকা হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে, সেটার জন্য আমাদের ঐ সময়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। রাতের বেলা ও দিনের বেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ঢাকা ছাড়াও বড় বড় শহরেও আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। আমরা দেখেছি ফাঁকা ঢাকায় অনেকে বাসা বাড়ি পরিবর্তন ও ফার্নিচার পরিবর্তন করেন। এমন পরিবর্তন কেউ করতে গেলে নিরাপত্তা প্রহরীরা যেন তাদের প্রশ্ন করেন। পুলিশসহ আমরা সবাই সচেতন থাকলে ফাঁকা রাজধানীকে আমরা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিতে পারব।বাড়িতে যাওয়ার সময় অনেকে ফাঁকা বাসায় অনেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা রেখে যান। দেখা যায় এসব বিষয়ে কাজের লোকসহ অনেকে জানে। এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। বাড়ি একেবারে ফাঁকা রেখে না যাওয়াই উচিৎ। যদি যান তাহলে গহনা ও টাকা পয়সা নিকট আত্মীয় স্বজন যারা ঢাকা থাকবেন তাদের কাছে রেখে যান অথবা পারলে হলে নিজের সঙ্গে নিয়ে যান। এই লম্বা ছুটিতে এসব মূলবান সামগ্রী নিজের ফাঁকা বাসায় রেখে যাবে না।
সম্প্রতি মার্কেটে আগুন লাগার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, বিভিন্ন মার্কেটে অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। প্রত্যেকটি ঘটনা আমরা নিবিড়ভাবে তদন্ত করছি। এর মধ্যে নাশকতার কোনো গন্ধ আছে কিনা, থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। ঢাকা ও ঢাকার বাহিরের মার্কেটগুলোর কমিটির সঙ্গে পুলিশ আলোচনা করেছে। তাদের বিভিন্নমুখী নিরাপত্তা ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অপর আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি জেলা পুলিশসহ অন্যান্য পুলিশের ইউনিট কাজ করছে। গাড়ি বেপরোয়া চালালে পুলিশ ব্যবস্থা নিবে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবেন তারাও ব্যবস্থা নিবেন। ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
এসময় পুলিশ মহাপরিদর্শক টার্মিনালে নোঙর করা বিভিন্ন লঞ্চে ঘুরে ঘুরে যাত্রীদের সাথে কথা বলেন। নৌবন্দর পরিদর্শনকালে আইজিপির সাথে নৌ-পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম ও ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকসহ বেশ কয়েকজন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।