অপরিচিত নাম্বার ফোনে প্রথমেই জিজ্ঞেস করা হয় ‘দোস্ত কেমন আছস-কই তুই?’ অপ্রস্তুত অপরপ্রন্তের মানুষটি জানতে আগ্রহী হয় তার কোন বন্ধু ফোন দিল?
প্রতারণার প্রথম ধাপ এটাই। কখনও প্রতারক আপনাকে ফোনে জিজ্ঞেস করবে ‘‘আমাকে চিনলি না, তোর স্কুল বন্ধু, বলতো আমি কে?’’ এমনকি অপ্রস্তুত আপনাকে চমকে দিবে স্কুলের কোন কোন বন্ধুর সাথে যোগাযোগ হয়? তাদের ফাঁদে পা দিলেই আপনি ফাঁদে পা দিলেন। কখনও আবার কোন প্রতারক জিজ্ঞেস করবে ‘চিনলি না তোর কোন বন্ধুটি বিদেশ থাকে? প্রতারণার শুরুটা এভাবেই হয়।
নানান অভিনব কায়দায় গত ছয় মাসে আড়াই হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে সাইফুল ইসলাম ওরফে দুর্জয় নামে এক প্রতারক।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগেরভিত্তিতে অভিনব কায়দায় প্রতারণায় জড়িত দুর্জয়কে সবুজবাগ থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনাল টিম।
মঙ্গলবার ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গত ৫ জানুয়ারি ভুক্তভোগী আমির হোসাইন মোল্লাসহ তার দুই বন্ধুকে আসামি মো. সাইফুল ইসলাম নিজেকে বন্ধু আতিকুল্লাহ শাহের পরিচয় দিয়ে ফোন করে তার মায়ের মৃত্যু সংবাদ জানায় এবং জরুরিভিত্তিতে বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে। বন্ধুর মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনতে পেয়ে তারা তিন বন্ধু মিলে তাৎক্ষণিক ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বিকাশ এবং নগদের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। এরপর যোগাযোগ করলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজ-নিয়ে জানতে পারেন পরিচয়ও ভুয়া।
হারুন বলেন, আসামি এর আগেও একাধিকবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে অস্ত্র, ছিনতাই ও প্রতারণাসহ ৯টি মামলা রয়েছে। তার বাড়ী নীলফামারি জেলার ডোমার থানাধীন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে। সেখানে অবস্থান করে সে প্রতারণার কাজটি সম্পন্ন করে এবং পাশ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন বিকাশের দোকান হতে ক্যাশ আউটের মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়।
হারুন বলেন, পুরো নীলফামারি জেলায় জ্বীনের বাদশা নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত দুর্জয় পুলিশের উপস্থিতি টের পেলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের অংশে চলে যায়। সে প্রায় ১০ বছর যাবৎ এই প্রতারণার সাথে জড়িত। এই কাজে তার কয়েকজন সহযোগীও আছে। যাদের একটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মোবাইল ফোন চুরি করে এবং আরেকটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় বিকাশের দোকান থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা ক্যাশ করে।
দীর্ঘ ১০ বছরে সে কতজনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে জানতে চাইলে ডিবি পুলিশ প্রধান হারুন বলেন: তার সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা না গেলেও গত ৬ মাসের বিশ্লেষণে দেখা যায়, সে প্রায় শতাধিক সিম ব্যবহার করে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন ব্যক্তিকে ফোন করেছে। যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি তাদের অধিকাংশরাই প্রতারিত হয়েছেন, সিম্প্যাথি থেকে বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে টাকা দিয়েছেন।
প্রতারণার কাজে চুরির ফোন ব্যবহার করা হতো জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন: সহযোগী মির্জা গত ৩ জানুয়ারি নীলফামারি জেলার ডিমলা থানা এলাকার একটি নির্বাচনী মিছিল থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি চুরি করে দুর্জয়কে এনে দেয়। প্রথমে সে ওই ফোনের বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নেয় এবং পরে ওই ফোনের মাধ্যমে প্রতারণা করে।