‘স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণে সেন্সর বোর্ডসহ যাবতীয় বিপত্তির মুখে আমাদের আইন অমান্য করা ছাড়া আর উপায় নেই। চলচ্চিত্র বানাতে গেলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সমিতির সদস্য হতে হয়, ছবি বানাতে তাদের বিপুল চাঁদা দিতে হয়। এসব তো এভাবে আর চলতে পারে না।’
‘ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ’ আয়োজিত বাংলাদেশের বিজয়ের ৫১তম বছর উদযাপনের ক্ষণে মুক্ত সংস্কৃতি, মুক্ত চলচ্চিত্রের দাবিতে জাতীয় সভায় এসব কথা বলেন নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম।
বর্তমানে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র স্বাধীন চলচ্চিত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিগত পরিসরে এবং ওটিটিসহ নানা মাধ্যমের মধ্য দিয়ে বিকাশমান। বিগত ৫১ বছর ধরে দেশে চলমান নানা ঔপনিবেশিক আইনের নিয়ন্ত্রণ ও শাসন-এর পরেও এই বিকাশ থেমে থাকেনি। বিকাশমান এই সব নতুন সম্ভাবনার কণ্ঠরোধে তৈরি হচ্ছে আইন, নীতিমালা এবং সম্ভাব্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার হলে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাহীন চলচ্চিত্র সংস্কৃতির ৫১ বছর’ শীর্ষক আলোচনাসভায় বক্তারা এসব মন্তব্য করেন।
আলোচনাসভায় মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন ‘ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ’ এর সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন। প্রবন্ধে তিনি বলেন, বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের বর্তমান বয়স প্রায় ৬০ বছর। অথচ এই আন্দোলন বাংলাদেশে কখনোই উৎসাহপূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি।
তিনি আরো বলেন, প্রচলিত ঔপনিবেশিক চলচ্চিত্র সেন্সর আইনসমূহের স্থলে আমাদের যে একটি আধুনিক, উদার ও অগ্রগামী চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইনের দাবি তা আদতে খুব কঠিন চাওয়া। কেননা, স্বাধীনতার ৫১ বছরেও দেশে চলচ্চিত্রের স্বাধীনতা সুরক্ষায় কোনো আইন প্রণীত হয়নি এবং বিলুপ্ত করা হয়নি চলচ্চিত্র বিষয়ক কোনো কালাকানুন।
দেশের বয়স ৫১ এবং এদেশেই চলচ্চিত্র সংসদবিরোধী কালাকানুনের বয়স ৪২ বছর জানিয়ে বেলায়াত হোসেন মামুন বলেন, এই ৪২ বছরে কত সরকার এসেছে এবং বিদায় নিয়েছে কিন্তু কোনো সরকারই মনে করেনি যে চলচ্চিত্র চর্চাবিরোধী এই আইনটি একটি সভ্য দেশে থাকা উচিত নয়।
মুক্ত সংস্কৃতি, মুক্ত চলচ্চিত্রের দাবিতে আলোচনা সভায় নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রয়োজনে আমাদের ছবি শাহবাগ, টিএসসিসহ উন্মুক্ত স্থানে দেখানো হবে। আশির দশকে বিকল্প চলচ্চিত্রের যে আন্দোলন আমরা শুরু করেছিলাম তেমনি এখন চলচ্চিত্রের স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই শুরু করতে হবে।
চলচ্চিত্র পরিচালক মহিউদ্দিন শাকের বলেন, সরকারের মন্ত্রী-আমলারা কে কী করবে সে আশায় না থেকে আমাদের নিজেদের উদ্যোগী হতে হবে। চলচ্চিত্র কেন্দ্র গঠনে আমাদের যে দাবিটি তা আরো জোরালো করতে হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে পারি; কিন্তু আমাদের সকলের দাবির ঐক্যবদ্ধ প্রতিফলন থাকতে হবে।
ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি লাইলুন নাহার স্বেমির সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন চলচ্চিত্র সংসদ সংগঠক মুনিরা মোরশেদ মুন্নী, চলচ্চিত্র নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু, চলচ্চিত্র নির্মাতা নোমান রবিন, চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রসূন রহমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা পিপলু আর খানসহ বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংসদের নেতাকর্মীরা।