মো. জালাল উদ্দিন: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলে মারা যাওয়ার দুই দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন মা।
১২ জানুয়ারি সকালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু ফাহিদ গাজী (১০) ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে। এসময় তার মা স্কুলশিক্ষিকা আসমা বেগম চৌধুরীসহ (৩০) কয়েকজন আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার দুই দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রবিবার মারা যায় আসমাও।
কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের আসনপুর গ্রামের বাসিন্দা বকুল গাজীর স্ত্রী আসমা ও তাদের একমাত্র সন্তান ফাহিদ।
নিহত আসমা উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সদপাশা এলাকায় একটি বেসরকারি সংস্থার পরিচালিত প্রাক্-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। আর ফাহিদ সদর ইউনিয়নের আসনপুর হোসেনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে স্ত্রী–সন্তান হারানো বকুল গাজী হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেল। সব হারিয়ে ফেলেছি।
বাবুল গাজীর প্রতিবেশী আবু সুফিয়ান আজ সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, এলাকায় বকুলের লোহার যন্ত্রপাতি ঝালাইয়ের একটি দোকান আছে। সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে তিনি শুধু বিলাপ করে চলেছেন। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা মিলছে না। সিলেটে নিহত আসমার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পরে বাড়িতে দাফন করা হবে।
স্থানীয় ও কুলাউড়া থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আসমার বাবার বাড়ি পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রবিরবাজার এলাকায়। কর্মস্থলও পাশাপাশি পড়েছে। ১২ জানুয়ারি সকালে তিনি ফাহিদকে বাবার বাড়িতে রেখে বিদ্যালয়ে যান। ছুটির পর বিকেলে সন্তানকে নিয়ে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশায় করে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় গাড়িতে আরও কয়েকজন যাত্রী ছিলেন। গাড়িটি কুলাউড়া-রবিরবাজার সড়কের পুরশাই এলাকায় পৌঁছালে বিপরীতমুখী বর যাত্রীবাহী একটি মাইক্রেবাস সেটিকে সজোরে ধাক্কা মেরে দ্রুত চলে যায়। এতে গাড়িটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
খবর পেয়ে কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ির ভেতর থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে ফাহিদ মারা যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আসমা, গাড়ির চালকসহ সাতজনকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রবিবার বিকেল চারটার দিকে আসমা মারা যান।
দুর্ঘটনার পর আবদুল মতলিব নামের আহত এক ব্যক্তির স্বজন বাদী হয়ে মাইক্রোবাসের অজ্ঞাতনামা চালককে আসামি করে মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, মাইক্রোবাসের চালককে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চলছে।