Site icon চ্যানেল আই অনলাইন

ঘূর্ণিঝড় মোখা: কক্সবাজারে ব্যাপক প্রস্তুতি, সতর্ক সংকেত

বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম কক্সবাজার মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন শুক্রবার (১২ মে) সন্ধ্যা ৭টায় জরুরি সভা করে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণের কথা জানিয়েছে।

সমুদ্র সৈকতে এখনো বিপুল সংখ্যক পর্যটক রয়েছে। টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন এর দিকে রয়েছে প্রশাসনের বিশেষ দৃষ্টি। সেন্টমার্টিনে ঢাকা বাইরের লোকজন ফিরে আসছে। তবে স্থানীয় লোকজন এখনো সেখানে রয়ে গেছে। সাগর থেকে ফিরেছে সাড়ে তিন হাজার মাছ ধরার ট্রলার।

শুক্রবার কক্সবাজারে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি আসলেও ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় উৎখনটায় রয়েছে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার জনগণ।

কুতুবদিয়া উপজেলার ধুরং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহরিয়ার চৌধুরী জানান, কুতুবদিয়ার সিংহভাগ বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই দ্বীপের মানুষগুলো উৎকণ্ঠায় রয়েছে। সমুদ্র সৈকতের সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায় বিপুলসংখ্যক পর্যটক রয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজারে আঘাত হানবে এমন খবর শুনলেও আমরা সৈকত এসে তার কোন প্রভাব দেখছি না।তাই কক্সবাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছি।

অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোর জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সামছুদ্দৌজা নয়ন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষে রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা, আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবক ও রেডক্রিসেন্টসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পাশাপাশি পরিস্থিতি বিবেচনায় সেনাবাহিনী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও জেলা পুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছারা প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলোকে। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগের জরুরি মেডিকেল টিম ও মোবাইল মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জরুরিভাবে সরবরাহের জন্য ত্রিপল, বাঁশ, সুতলি দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ সময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ২৫ লাখ নগদ টাকা রাখা হয়েছে। যার মধ্যে ১০ লাখ টাকা উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে ৫ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন চাল, ৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন টোস্ট বিস্কুট, ৩ দশমিক ৪ মেট্রিক টন শুকনা কেক, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ২০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন ও ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬ টি আশ্রয় কেন্দ্র, ১০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঝুঁকিপূর্ণদের আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হবে। সেন্টমার্টিনের বাসিন্দার আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানকার সব আবাসিক হোটেল রিসোর্ট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়ুয়া অপু বলেন, জেলায় তাদের সাড়ে ৭’শ কর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিশেষ করে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার টলার সাগর থেকে ফিরেছে। বাকি ট্রলারগুরু ফিরে আসতেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সেন্টমার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, জাহাজ ও ট্রলার বন্ধ হয়ে যাওয়াল আগে সেন্টমার্টিনের যেসব চাকরিজীবী ও বাইরের লোকজন রয়েছে তারা সবাই চলে যাচ্ছে। তবে স্থানীয় লোকজন এখনো বাড়ি করে রয়েছে। আমরা তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয় যাওয়ার কথা বলেছি। শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজারে বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টিতে অনেকটা স্বস্তি নেমে এসেছে। তবে আতঙ্ক রয়েছে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিস ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে বলে সরকারি আবহাওয়াবিদ মোঃ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন।

Exit mobile version