সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে বার্তা দিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য চত্ত্বরে আয়োজন করা হয়েছিলো ‘সহিংসতা বিরোধী কনসার্ট’। ঢাবির সংস্কৃতিমনা একদল সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের এই আয়োজনটি বাহবা পাচ্ছে সব মহলে।
‘সহিংসতার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে ও ‘আক্রান্ত মাটি আক্রান্ত দেশ, এ মাটির কসম রুখবোই বিদ্বেষ’ শিরোনামে এই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়।
সহিংসতা বিরোধী কনসার্ট ঘিরে বহুদিন পর গান, কবিতা, আড্ডায় মুখর হয়ে উঠেছিলো পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন। শুক্রবার বিকেলে শুরু হওয়া এই আয়োজন চলে রাত পর্যন্ত। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণী ছাড়াও অংশ নেয় হাজারও সাধারণ মানুষ।
চলমান সাম্প্রদায়িক এই সহিংসতার বিরুদ্ধে তারুণ্যের এই ঢলকে আগামি দিনের জন্য দারুণ ইতিবাচক বলছেন প্রগতিশীল ও সংস্কৃতিমনা মানুষেরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কনসার্টের টুকরো অংশ শেয়ার করে এমন আয়োজনের সাথে সংহতি প্রকাশ করছেন অন্যরাও।
শিরোনামহীন, মেঘদল, সহজিয়া, শহরতলি, বাংলা ফাইভ, গানপোকা, গানকবি, কৃষ্ণপক্ষ, কাল, অবলিকের মতো ব্যান্ডগুলো এই অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে। শুধু গান নয় আবৃত্তি, মূকাভিনয়ের মাধ্যমে হিংসার বিরুদ্ধে এবং সম্প্রীতির পক্ষে বার্তা দেওয়া হয়।
এমন কনসার্টে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে ‘শিরোনামহীন’ ব্যান্ডের দলনেতা জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এই কনসার্টে অংশ নেয়া। আবহমানকাল ধরে আমাদের যে ঐতিহ্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তা হুমকির মুখে। ধর্মের নামে যারা বাড়াবাড়ি করে, তারা অন্যের ক্ষতি করতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ সব সময়ই ছিল, আছে, থাকবে।
তিনি নিজেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সহিংসতা বিরোধী কনসার্ট’ এর টুকরো অংশ শেয়ার করেছেন ভার্চুয়াল বন্ধুদের সাথে।
এদিকে ‘সহিংসতা বিরোধী কনসার্ট’-এ তারুণ্যের এই ঢল দেখে ব্যান্ড ‘মেঘদল’ এর ভোকালিস্ট শিবু কুমার শীল ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আজকে সহিংসতা বিরোধী কনসার্ট এ যারা এসেছিলেন অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং যারা এই আয়োজনের সাথে ছিলেন তাদের প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা। এই সফল আয়োজন প্রমাণ করে আজকের এই তারুণ্যই একটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়বার লক্ষে বদ্ধ পরিকর। কোনো অশুভ একে দমাতে পারবে না। এই জাগরণ জারি থাকুক সারা বাংলাদেশে। ওম শান্তি!’
অনুষ্ঠানে আয়োজকরা বলেন, সারাদেশে চলমান সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এই আয়োজন। মিছিল, বক্তৃতা, সভা ও সেমিনারের চেয়ে শিল্প অনেক শক্তিশালী প্রতিবাদের মাধ্যম। তাই আমরা এই মাধ্যমকেই বেছে নিয়েছি। আমরা চাই এদেশের মানুষ হিন্দু-মুসলিম পরিচয়ের চেয়ে ‘আমরা সবাই বাংলাদেশী’ পরিচয়ে পরিচিত হতে। এটাই আজকের আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য।