গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে ২০১৩-১৪ সালের মতো বিএনপি আবারও আগুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। আজ শনিবার (৬ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত মিডিয়া উপ কমিটি।
সাংবাদিকদের তারা বলেন, পেশাগত কারণেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে আপনার গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। বাংলাদেশ যখন নির্বাচনের পথে হাঁটছে, ঠিক সেই সময়ে আমরা আবারও আগুন সন্ত্রাস ও খুনের রাজনীতির ঘৃণ্য চিত্র দেখতে পাচ্ছি। আপনারা দেখেছেন, নির্বাচন এলেই বিএনপি-জামাতের নির্বাচন বিমুখ চরিত্রটি প্রকাশ হয়ে পড়ে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে ২০১৩-১৪ সালের মতো তারা আবারো আগুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে।
মিডিয়া উপ কমিটি সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল শুক্রবার ঢাকার গোপীবাগে যশোর থেকে আসা বেনাপোল এক্সপ্রেস নাশকতার আগুনে জ্বলেছে। মা ও তার শিশুসন্তানসহ চার চারটি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে বিএনপি-জামাতের নাশকতার আগুনে। আরো বেশ কয়েকজন দ্বগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমরা নিহতদের স্বজনদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি আরও জানায়, গতকাল ও আজকের এখন পর্যন্ত সন্ত্রাসী দল বিএনপি-জামাত দেশের ২০টিরও বেশি ভোট কেন্দ্রে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। রাজবাড়ীর একটি স্কুলে পাহারায় থাকা গ্রাম পুলিশের একজন সদস্যকেও হত্যা করেছে তারা। রামুতে রাখাইন মন্দিরে গতকাল মধ্যরাতে আগুন দিয়েছে বিএনপি-জামাতের লোকজন। ডেমরা ও কুমিল্লায় দুটি বাসে আগুন দিয়েছে। ভোলাতে বেসরকারি হাসপাতালে হামলা ও ভাংচুর করেছে।
‘এই চিত্র শুধুই গত দুদিনের। নির্বাচন বিরোধীতা আর সন্ত্রাসের ইতিহাস তাদের ডিএনএ-তেই আছে। এ দফায় ২৮ অক্টোবরের তাণ্ডব নিশ্চয় আপনাদের মনে আছে। তাদের কাজই হলো মানুষ হত্যা, বাস-ট্রেনে আগুন, রেল লাইন উপড়ে ফেলা, দেশের সম্পদ ধ্বংস করা, বোমা বিস্ফোরণ।’
২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের বিবরণ দিয়ে উপ-কমিটি কিছু তথ্য উপস্থাপন করে:
৬৫৮টিরও বেশি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ও যানবাহন ভাংচুর, রেলে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে ২১টি, ১৭টি ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়েছে। এতে ১০ জন নিহত হয়েছে।
২০ জন বাসচালক ও হেলপার অগ্নিদগ্ধ, কমপক্ষে ৪ শতাধিক বোমা/ককটেল হামলা করা হয়েছে। ১৫০ জন পুলিশ সদস্য আহত ও ১ পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। অর্ধশতাধিক সাংবাদিকের উপর হামলা।
আওয়ামী লীগের ৬টি কার্যালয়ে হামলা করা হয়। খুলনায় আদালতের এজলাস কক্ষ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের তারা আরও বলেন, আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, এসব ঘটনা ঘটাতে গিয়ে অনেক স্থানেই বিএনপির কর্মীরা হাতেনাতে ধরা পড়েছে। গত ৫ নভেম্বর উত্তরার আবদুল্লাহপুরে ককটেল বিস্ফোরণের সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি কাজী মোহাম্মদ হাসান। গত ২৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে রেলে হাতবোমা নিক্ষেপের সময় বিএনপি-জামায়াত সমর্থক জয়নাল আবেদিন, হাবিবুর রহমান ও মোহাম্মদ আরিফকে আটক করে রেলওয়ে পুলিশ।
গাজীপুরের শ্রীপুরের বনখড়িয়ায় রেল লাইন কেটে নাশকতার দায়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়োর্ডের কাউন্সিলর আজমল হোসেন ভুঁইয়াসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা অপরাধের দায়ও স্বীকার করেছে।
মাগুরা থেকে গত বৃহস্পতিবার ছাত্রদলের এক নেতাকে গ্রেপ্তারের পর বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা পরিকল্পনার কথা জানতে পারে পুলিশ। ব্রিফিংয়ে আইজিপি নিজেই আপনাদেরকে জানিয়েছেন, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাতে বিকট শব্দে ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি ব্যাপক সহিংসতার পরিকল্পনা করছে বিএনপি।
আমি আগেই বলেছি, বিএনপি-জামাত কখনোই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আর তাই ভোট এলেই সাম্প্রদায়িক শক্তি আর জঙ্গিদের সাথে মিলে নারী ভোটার, ধর্মীয় সংখ্যালঘু আর ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভোটারসহ দেশের নাগরিকদেরকেই টার্গেট করেছে।
আরেকটি কথা না বললেই নয়, তাদের এখনকার মূল কাজ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা। আর সেজন্যই এতো কিছু। এরই বাইরেও কোটি কোটি টাকা খরচায় লবিস্ট নিয়োগ করে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ভূয়া সংবাদ প্রচার করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় বিএনপি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভূয়া খবর ছড়ানোর পাশাপাশি, বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দিচ্ছে বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীরা।
সংগঠনটি জানায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল। গণতন্ত্রই এই দলের মূলমন্ত্র। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেই আমাদের আস্থা। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থা আছে বলেই আমরা নির্বাচনে বিশ্বাসী। তাই ভোটারদেরকে অনুরোধ জানাবো, আপনারা দলে দলে ভোট কেন্দ্রে আসবেন। ব্যালটের মাধ্যমেই আগামীকাল সন্ত্রাসীদের জবাব দিতে হবে। ভয় না পেয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকুন। ঐক্যর শক্তির কাছে একাত্তরের পরাজিত শক্তির বিনাশ হবেই।