শুরুতেই টপঅর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গী করে চাপ কাটিয়ে তোলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। পূর্ণ করেছেন সেঞ্চুরিও। পঞ্চম উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ১৬৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে পৌঁছান জয়ের বন্দরে। দুই ব্যাটারের চোখ জুড়ানো পারফরম্যান্সে লঙ্কানদের ৬ উইকেটে হারিয়েছে টিম টাইগার্স।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ডাচ বাংলা ব্যাংক বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে টসে জিতে আগে ব্যাটের সিদ্ধান্ত নেয় অতিথি লঙ্কান দল। ইনিংসের ৭ বল বাকী থাকতে ২৫৫ রানে গুটিয়ে যায় লঙ্কানবাহিনী। জবাবে ৩২ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে স্বাগতিকবাহিনী। তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার দেয়া লক্ষ্যটা বড় না হলেও শুরুতেই তিন ব্যাটারকে হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান দুই ওপেনার লিটন দাস, সৌম্য সরকার এবং তাওহীদ হৃদয়।
ইনিংসের প্রথম বলেই মাধুশঙ্কার শিকার হন লিটন দাস। রানের খাতা খোলার আগেই বোল্ড হয়ে ফিরে যান। ব্যর্থ হয়েছেন সৌম্য সরকারও। ২.৪ ওভারে ৯ বলে ৩ রান করেন মাধুশঙ্কার দ্বিতীয় শিকার হন।
দাঁড়াতে পারেননি তাওহীদ হৃদয়ও। ৫.১ ওভারে ফিরে যান এই টপঅর্ডার ব্যাটারও। প্রামোধ মাধুশানের বল বুঝে উঠতে পারেননি। সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরে যান ৮ বলে ৩ রান করে।
২৩ রানে তিন ব্যাটার ফেরার পর হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ ও শান্ত। ৬২ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন দুজনে। ১৫.৩ ওভারে মাহমুদউল্লাহ ফিরে গেলে জুটি ভাঙে। চারটি চার ও এক ছক্কায় ৩৭ বলে ৩৭ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।
পরে মুশফিককে নিয়ে হাল ধরেন শান্ত। ওয়ানডেতে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন টাইগার অধিনায়ক। ১০৮ বলে সেঞ্চুরি ছোঁয়া ইনিংসে ছিল একটি ছক্কা ও ১১টি চারের মার। তাকে সঙ্গ দেয়া মুশফিকুর রহিমও পূর্ণ করেছেন ফিফটি। ৫৯ বলে ফিফটি পেয়েছেন টাইগার উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ছিল ৬টি চারের মার। ওয়ানডেতে মুশফিকের ৪৯তম ফিফটি এটি।
দুজনের অবিচ্ছিন্ন ১৭৫ বলে ১৬৫ রানের জুটিতে জয়ের বন্দরে নোঙর করে বাংলাদেশ। ১৩টি চার ও দুটি ছক্কায় ১২৯ বলে ১২২ রানে শান্ত, এবং আটটি চারে মুশফিক ৮৪ বলে ৭৩ রানে অপরাজিত থাকেন। শান্তর ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংও এটি। এর আগে সর্বোচ্চ ১১৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন টাইগার টপঅর্ডার ব্যাটার।
লঙ্কানদের হয়ে দিলশান মাধুশঙ্কা দুটি এবং প্রামোধ মাধুসান ও লাহিরু কুমারা একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটে নেমে দুই ওপেনারে দুর্দান্ত শুরু পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে ৭-এর বেশি গড়ে রান তুলেছিল। উদ্বোধনী জুটিতে ৭১ রান তোলেন পাথুম নিশাঙ্কা ও আভিষ্কা ফের্নান্দো। ১০ম ওভারের পঞ্চম বলে জুটি ভাঙেন তানজিম। ফের্নান্দোকে ফেরান মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে। ৩৩ বলে ৩৩ রান করেন এ ব্যাটার।
১২তম ওভারের প্রথম বলে নিশাঙ্কাকেও ফেরান সাকিব। সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ২৮ বলে ৩৬ রানে। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে তৃতীয় সাফল্যও এনে দেন এ পেসার। ৫ বলে ৩ রান করা সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ফেরান।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৭৩ বলে ৪৪ রান তোলেন মেন্ডিস ও চারিথ আশালাঙ্কা। ২৫.২ ওভারে ১২৮ রানে আশালাঙ্কাকে ফেরান মেহেদী হাসান। ৩৭ বলে ১৮ রান করে বোল্ড হয়ে ফিরে যান লঙ্কান ব্যাটার।
পঞ্চম উইকেটে মেন্ডিস ও লিয়ানেগে মিলে তোলেন ৬৮ বলে ৬৯ রান। ৩৭তম ওভারের চতুর্থ বলে ১৯৭ রানের জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মেন্ডিস। পাঁচটি চার ও এক ছক্কায় ৭৫ বরে ৫৯ রান করেন লঙ্কান অধিনায়ক।
৪১তম ওভারের চতুর্থ বলে হাসারাঙ্গাকে ফেরান তাসকিন। ১৪ বলে ১৩ রান করে তাওহীদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দেন লঙ্কান অলরাউন্ডার। ৪৩তম ওভারে নিজের তৃতীয় শিকার তুলে নেন তাসকিন। ৭ বলে ১ রান করা মাহেশ থিকসানাকে ফেরান লিটনের ক্যাচ বানিয়ে।
৪৭তম ওভারের প্রথম বলে লিয়ানেগেকে ফেরান শরীফুল। তিনটি চার ও দুটি ছক্কায় ৬৯ বলে ৬৭ রান করে মুশফিকের তালুবন্দি হন তিনি। ৪৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে নিজের দ্বিতীয় শিকার তুলে নেন শরীফুল। মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ১৫ বলে ৮ রান করা প্রমোদ মাদুসানকে। ওভারের পঞ্চম বলে মাধুশঙ্কাকে ফিরিয়ে লঙ্কানদের গুটিয়ে দেন শরীফুল।
টাইগার বোলারদের মধ্যে তানজিম সাকিব ৮.৪ ওভার বল করে চোট পেয়ে উঠে যান। তার আগে ৪৪ রান খরচায় নিয়েছেন ৩ উইকেট। ৬০ রান খরচায় তাসকিন নেন তিনটি। শরীফুল ৯.৫ ওভারে ৫১ রান খরচায় নেন ৩ উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজ নেন একটি উইকেট।